Short question of homeopathy philosophy- হোমিওপ্যাথি দর্শনের সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন।
দর্শনের সংজ্ঞাঃ
দর্শন শব্দটি ইংরেজি philosophy শব্দ থেকে এসেছে। ফিলোসফি শব্দটি এসেছে প্রাচীন গ্রিক ভাষা থেকে। গ্রিক ভাষায় (philosophía) শব্দটি দুটি শব্দ থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। শব্দ দুটি হল: (ফিলোস: বন্ধু, ভালোবাসার পাত্র) এবং (সোফিয়া: প্রজ্ঞা)।
যে পুস্তক পাঠ করলে জ্ঞানার্জনের প্রিয়তা, সৃষ্টিকর্তা এবং তাহার অস্তিত্ব, বিশ্বজগৎ সম্পর্কে ধারণা, জগত ও জীবন সম্পর্কে ধারণা, প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে যুক্তি ও প্রমাণ, মানবতার প্রতি স্বাভাবিক মূল্যবোধ, ধর্মীয় এবং লৌকিক ও পারলৌকিক সম্পর্কে বিশ্বাস স্থাপন, স্রষ্টা ও সৃষ্টি সম্পর্কে যুক্তি, চিন্তা ও জ্ঞান প্রভৃতি সম্পর্কে জানা যায় তাহাকে দর্শন বলে।
Plato-এর মতেঃ অন্তরের জ্ঞান লাভ করা ও বস্তুর বিশেষ প্রকৃতি অবগত হওয়াকে দর্শন বলে। Philosophy aims at a knowledge of the internal of essential nature of things.
Socrates-এর মতেঃ জ্ঞানানুরাগ ও জ্ঞানানুসন্ধানের নামই দর্শন। Philosophy is the love of wisdom of persuit of knowledge.
Kant-এর মতেঃ দর্শন হইল বিজ্ঞান সম্মত জ্ঞান ও জ্ঞানের সমালোচনা। Philosophy is the science and criticism of cognition.
হোমিও দর্শনের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব আলোচনা করঃ
হোমিওপ্যাথি একটি উন্নতমানের সার্থক চিকিৎসা বিজ্ঞান। নীরবে, নিরুপদ্রবে, স্থায়ীভাবে এবং সর্বাপেক্ষা সুখবোধ্য বিধান মতে চিকিৎসা করা এবং রোগারোগ্য করাই হোমিওপ্যাথি মূল আদর্শ। হোমিও দর্শন আমাদিগকে শিক্ষা দেয় সেই আদর্শ।
দর্শন পাঠ করিলে আমরা স্রষ্টা ও সৃষ্টির রহস্য, তাহাদের সম্পর্ক, সৃষ্টির উদ্দেশ্য, মানোবতাবোধ, মমত্ববোধ, ব্যাধি কি ও কেন ? রোগ ও রোগীর সম্পর্ক, ঔষধ প্রয়োগের নিয়ম, নীতি ও আদর্শ এবং উদ্দেশ্য, কখন কিসে কোন রোগ কিভাবে বাড়ে বা কেম, কোন শক্তিতে কখন ঔষধ প্রয়োগ করিতে হইবে, সোরা, সিফিলিস ও সাইকোসিস কি ও কেন ? ইহাদের আক্রমণ ও প্রতিকার, তরুণ রোগ, পুরাতন রোগ ও তাহাদের চিকিৎসা, রোগীর মনে ও দেহের অবস্থা প্রভৃতি আমরা দর্শন পাঠে জানতে পারি।
দর্শন না পড়িলে চিকিৎসা করা যায় না এবং হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক হওয়া যায় না। দর্শন আমাদিগকে জ্ঞানের, বিজ্ঞানের, হোমিও বিজ্ঞানের প্রতি শ্রদ্ধা, বিশ্বাস ও ভালবাসা শিক্ষা দেয়। হোমিওপ্যাথির বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত উপাওগুলিকে গ্রথিত ও সংলগ্ন করিয়া উহাদের কার্যকরী ও উদ্দেশ্য সাধনের সমর্থ করিয়া তুলিতে হোমিও দর্শনের যথেষ্ট প্রয়োজনীয়তা রহিয়াছে ।
ডাঃ হ্যানিম্যানের চিকিৎসা দর্শনের মূলনীতিগুিল কি কি?
জার্মান চিকিৎসক স্যামুয়েল হ্যানিম্যান উদ্ভাবিত (১৭৯৬) এক চিকিৎসা পদ্ধতি। এই চিকিৎসা পদ্ধতির অন্তর্নিহিত মূলনীতি হচ্ছে- কোনো একজন সুস্থ ব্যক্তির শরিরে যে ওষুধ প্রয়োগ করলে তার মধ্যে যে লক্ষণ দেখা দেয়, ওই একই ওষুধ সেই লক্ষনের ন্যায় অসুখে আক্রান্ত ব্যক্তির উপরে প্রয়োগ করলে তা অসুস্থ ব্যক্তির জন্য অসুখের লক্ষণ নিরাময়ের কাজ করে।হ্যানিম্যানের প্রস্তাবিত এই তত্ত্বের উপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থা।
জার্মান চিকিৎসক স্যামুয়েল হ্যানিম্যান উদ্ভাবিত (১৭৯৬) এক চিকিৎসা পদ্ধতি। এই চিকিৎসা পদ্ধতির অন্তর্নিহিত মূলনীতি হচ্ছে- কোনো একজন সুস্থ ব্যক্তির শরিরে যে ওষুধ প্রয়োগ করলে তার মধ্যে যে লক্ষণ দেখা দেয়, ওই একই ওষুধ সেই লক্ষনের ন্যায় অসুখে আক্রান্ত ব্যক্তির উপরে প্রয়োগ করলে তা অসুস্থ ব্যক্তির জন্য অসুখের লক্ষণ নিরাময়ের কাজ করে।হ্যানিম্যানের প্রস্তাবিত এই তত্ত্বের উপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থা।
হ্যানিম্যান বিশ্বাস করতেন সকল অসুখের মূলে রয়েছে "মায়াজম" নামক একধরনের প্রতিক্রিয়া এবং হোমিওপ্যাথিক ওষুধ এই মায়াজম দূর করার জন্য কার্যকর।
নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি আবিষ্কারের ন্যায় মাহাত্ম্য হ্যানিম্যান ও তাঁহার চিন্তাশক্তি দর্শন দ্বারা "Similla Similibus Curentur সিমিলা সিমিলিবাস কুরেন্টুর" পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। এই দর্শন পৃথিবীর অন্য কোন দার্শনিক, বৈজ্ঞানিক বা চিকিৎসকের মধ্যে দেখা যায় না। তাহার আবিষ্কৃত চিকিৎসা শাস্ত্রের নাম হোমিওপ্যাথি। তাহার চিকিৎসা দর্শনের মূলনীতি ও বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ।
👨 প্রাকৃতিক রোগ শক্তি সূক্ষ্ম ও অজড়। ইহা প্রকৃতি প্রদও একটি অশুভ শক্তি।
👨 মানবদেহের অভ্যন্তরে এক অজড় অমূর্ত্ত আত্মিক জীবনীশক্তি বিরাজমান। এই শক্তি মানবদেহের প্রতি অঙ্গে, প্রতি কোষে সমানভাবে পরিব্যপ্ত থাকিয়া দেহের প্রতিটি যন্ত্রকে স্বীয় কার্য সম্পাদনে নিয়োজিত রাখে। সদৃশ অজড় এই জীবনী শক্তিই বিশৃংখলা প্রাপ্ত হয় বা অসুস্থ হয়।
👨 প্রাকৃতিক আরোগ্যনীতি "Similla Similibus Curentur সিমিলা সিমিলিবাস কুরেন্টুর" অনুসারে রোগী ও ঔষধের সাদৃশ্য লক্ষ ণ অনুযায়ী প্রকৃত আরোগ্য সাধিত হয়।
👨 সুস্থদেহে যে ঔষধ রোগ সৃষ্টি করিতে পারে, ঐ ঔষধেরই রোগ নিরাময়ের ক্ষমতা আছে।
👨 সদৃশ লক্ষণাযায়ী একবার একটিমাত্র ঔষধ প্রয়োগ করিতে হইবে।
👨 সূক্ষমাত্রার শক্তিকৃত ঔষধই সূক্ষ রোগশক্তি দূরীকরণের উপযুক্ত অস্ত্র।
👨 রোগের আক্রমণে কোন বিশেষ অঙ্গ নয়, গোটা জীবনীশক্তি অসুস্থ হয়। তাই চিকিৎসা আঙ্গিকভাবে নয়, সামগ্রিকভাবেই করিতে হইবে।
👨 ক্ষুদ্র মাত্রার ঔষধ প্রয়োগ করিয়া চিকিৎসা করিতে হইবে।
👨 যেহেতু মাবনদেহে মিশ্র ঔষধের প্রকৃত ক্রিয়া অজ্ঞাত সেহেতু একবারে একাধিক ঔষধ প্রয়োগ করা যাইবে না।
হোমিওপ্যাথি একটি আরোগ্য কলা-ব্যাখ্যা কর।
লক্ষণ কি? গুরুত্ব অনুসারে লক্ষণের স্তরসমূহ বর্ণনা দাও।
লক্ষণ স্বাস্থ্যের স্বাভাবিক অবস্থার বিকৃত পরিবর্তন বা পীড়ার অস্তিত্বের প্রমাণ। ইহা এমন একটি অবস্থা যাহা রোগী স্বয়ং তাহার নিকট আত্মীয় ও পার্শ্ববর্তী লোকজন এবং চিকিৎসক প্রত্যক্ষ করিয়া থাকেন।লক্ষণ শুধুমাএ রুগ্নাবস্থার বহিঃপ্রকাশ বা রোগের নিদর্শনই নয়, ইহা প্রতিকারক সদৃশ ঔষধ নির্বাচনের ও চাবিকাঠি।
লক্ষণের গুরুত্ব অনুসারে লক্ষণকে তিনটি স্তরে বা গ্রেডে ভাগ করা যায়।
প্রথত শ্রেণীঃ ঔষধের পরীক্ষাকালিন যদি অধিকাংশ পরীক্ষক তাহাদের ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে কোন লক্ষণ বর্ণনা করে, তবে তাহা প্রথম শ্রেণীর ব্যাপক লক্ষণ। যেমন যদি নাক্স ভূমিকা সেবনে অধিকাংশ পরীক্ষকের পুনঃ পুনঃ মলত্যাগ লক্ষণ দেখা দেয় তবে তাহা আঙ্গিকের প্রথম শ্রেণীর লক্ষণ। এইরুপ এপিস, আয়োডিন প্রভৃতি ঔষধের শ্বাসরোধ লক্ষণটি অধিকাংশ পরীক্ষকের " উষ্ণ কক্ষে " অতিশয় অসুস্থাবোধ অনুভূত হয় তবে এই লক্ষণটি সাধারণ পর্যায়ের প্রথম শ্রেণীতে স্থান পাইবে।
দ্বিতীয় শ্রেণীঃ যে সকল লক্ষণ অধিকাংশ পরীক্ষক দ্বারা না হইয়া কেবলমাত্র কিছু সংখ্যক পরীক্ষক দ্বারা সমর্থিত উহারা দ্বিতীয় শ্রেণীতে স্থান পাইবে।
তৃতীয় শ্রেণীঃ শুধুমাত্র দুই একজন পরীক্ষক দ্বারা যদি কোন লক্ষণ প্রকাশ পায় কিন্তু পুনরায় পরীক্ষা দ্বারা আর সমর্থিত হয় নাই, কিন্তু প্রবলভাবে প্রকাশিত হওয়ায় উহাদিগকে তৃতীয় শ্রেণীর লক্ষণ হিসাবে স্থান দেওয়া হইয়াছে। ভেষজ পরীক্ষার সময় কোন লক্ষণ প্রকাশিত না হইলেও ব্যক্তিক্ষেত্রে চিকিৎসকগণ কর্তৃক আরোগ্য সাধনের দ্বারা প্রমাণিত হয় তবে তাহাও তৃতীয় শ্রেণীর লক্ষণ।
ঔষধ নির্বাচনে লক্ষণ সমষ্টির গুরুত্ব আলোচনা কর।
হোমিওপ্যাথি একটি লাক্ষণিক চিকিৎসা বিজ্ঞান। লক্ষণ সমষ্টি ভিন্ন রোগ নির্ণয়ের ও ঔষধ নির্বাচনের অন্য কোন উপায় নাই। রোগের নিদর্শন ইহার লক্ষণসমষ্টি। যে সমস্ত চিহ্ন ও লক্ষণের মাধ্যমে আমরা পীড়িত দেহির অবস্থা জানতে পারি তাহাদের সমষ্টিগত রুপকে আমরা লক্ষণসমষ্টি বলি। লক্ষণসমষ্টিই হইল আভ্যন্তরীক ব্যাধির যথার্থ ও বোধগম্য বহিঃপ্রকাশিত প্রতিচ্ছবি। জীবনীশক্তির অসুস্থ অবস্থার চিত্র লক্ষণসমষ্টি দ্বারা প্রকাশিত হয়।জীবনীশক্তির সাহায্যের ভাষা এই লক্ষণসমষ্টি।লক্ষণসমষ্টি দ্বারাই জীবনীশক্তি প্রতিকারক উপযুক্ত ঔষধটি প্রত্যাশা করে।
0 Comments: