হোমিওপ্যাথি শব্দের উৎসঃ
ইংরেজি Homoeopathy শব্দটি গ্রীক শব্দ Homeo বা Homoios এবং pathy বা pathos হইতে উৎপন্ন হইয়াছে। গ্রীক ভাষায় হোমিও মানে সদৃশ, Like similarly বা pathos মানে উপায় পদ্ধতি বা কষ্টভোগ- means, methodor suffering আভিধানিক অর্থে হোমিওপ্যাথির অর্থ হইল 'সদৃশ রোগ' বা 'সদৃশ দুভোগ'।
হোমিওপ্যাথি কি বা হোমিওপ্যাথি কাকে বলে?
→ রোগ নিরাময়ের প্রাকৃতিক নিয়ম "similia similibus curantur" যার বাক্যগত অর্থ let like be cured by like অর্থাৎ সদৃশ রোগ সৃজনক্ষম ঔষধ দিয়ে রোগ আরোগ্য করা।
ডাঃ হার্বাট. এ. রবার্টস এর মতে = আরোগ্যের যে বিজ্ঞান ও কলা প্রকৃতির মৌলিক নিয়ম নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত, তাকেই হোমিওপ্যাথি বলে।
এছাড়া খুব সহজে বলতে গেলে বলাযায় = সদৃশ লক্ষন ভিত্তিক আরোগ্য পদ্ধতিকে হোমিওপ্যাথি বলে।
হোমিওপ্যাথি নিয়মনীতি পাঠের প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা কর।
নিয়মনীতিই হোমিওপ্যাথির ভিত্তি। হোমিওপ্যাথিতে চিকিৎসকের জ্ঞান অর্জন, রোগীর আদর্শ আরোগ্য সাধন, হোমিওপ্যাথির প্রচার, প্রসার ও প্রতিষ্ঠার জন্য হোমিওপ্যাথির নিয়মনীতি সম্পর্কে অবহিত হওয়া একান্ত প্রয়োজন।
হোমিওপ্যাথির নিয়মনীতি গুলি একজন চিকিৎসকের মহান উদ্দেশ্যে নির্ধারণ করে এবং পথ প্রদর্শন করে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের অনুমান, অবৈজ্ঞানিক, কুসংস্কার ও অনির্ভরশীলতার পরিবর্তে হোমিওপ্যাথির নিয়মনীতির দ্বারা চিকিৎসা বিজ্ঞানকে বিজ্ঞানভিত্তিক, কুসংস্কার বর্জিত, পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং নির্ভরযোগ্য করে তুলেছে।
একজন আদর্শ চিকিৎসক হিসাবে চিকিৎসকেরগুনাবলী নির্ধারণ ও গুণ অর্জনে উৎসাহিত করার জন্য
হোমিওপ্যাথিক নিয়মনীতি আদর্শ পথে চলতে সহায়তা করে।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নীতিমালা-Code of Homoeopathic Ethics:
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নীতিমালা হোমিওপ্যাথদের জন্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
বোর্ড কর্তৃক প্রণীত ও সরকার কর্তৃক অনুমোদিত চিকিৎসা নীতিমালা ( Code of Ethics ) সকল রেজিস্টার্ড ও তালিকাভুক্ত হোমিওপ্যাথগণকে মেনে চলতে হবে । এখানে বোর্ড বলতে “ বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ড ” ( সাবেক “ বোর্ড অভ হোমিওপ্যাথিক সিস্টেম অভ মেডিসিন ” ) – কে বুঝানো হয়েছে ।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নীতিমালা ’ পুস্তিকায় নিম্নোক্ত বিষয়বস্তু সম্পর্কে আলোচিত হয়েছে যেমন –
👨 সকল প্রকার পীড়িতদের প্রতি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকদের কর্তব্যঃ
১। একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক সব সময় নিশ্চিতভাবে তাঁর কার্যকলাপের সর্বোচ্চ মান রক্ষা করবেন ।
২। একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক কখনও নিজে শুধুমাত্র আয়ের উদ্দেশ্য দ্বারা প্রভাবিত হতে পারবেন না
৩। একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের অবশ্যই উদ্দেশ্য থাকবে রোগীকে সামগ্রিকভাবে চিকিৎসা করার এবং তাঁর চিকিৎসার ধারা নিশ্চয়ই ডাক্তার স্যামুয়েল হানেমান রচিত ‘ অর্গানন অব মেডিসিন ’ নামক গ্রন্থের উপর প্রতিষ্ঠিত হবে ।
৪। একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক সর্বদা রোগীর স্বাস্থ্যকে পুনরুদ্ধার করা ও মানুষের জীবন রক্ষা করার গুরুত্বকে নিশ্চিতভাবে মনে রেখে চিকিৎসা কর্মে ব্রতী হবেন ।
৫। একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের নিকট তাঁর রোগী পূর্ণ আনুগত্যের এবং তাঁর পেশাগত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার দাবী রাখে । যখনই কোন চিকিৎসা বা পরীক্ষা তাঁর সাধ্যের বাইরে হবে তখন তিনি অপর এমন একজন চিকিৎসককে আহ্বান করবেন যার প্রয়োজনীয় যোগ্যতা আছে, অথবা তিনি সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ বা চিকিৎসা গ্রহণের জন্য রোগীকে উপদেশ দেবেন ।
৬। চিকিৎসক হিসাবে তাঁর উপর যে বিশ্বাস ন্যাস্ত করা হয়েছে সে পরিপ্রেক্ষিতে একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক রোগীর রোগ সম্বন্ধীয় যাবতীয় গোপন তথ্য যা তাঁকে বলা হয়েছে বা তিনি নিজে জানতে পেরেছেন সে সবের কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করতে রোগীর নিকট দায়বদ্ধ থাকবেন ।
৭। একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক জরুরি ক্ষেত্রে কোন রোগীকে নিশ্চয়ই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করবেন, যদি না তিনি আশ্বস্ত হন যে তা অন্য কারও দ্বারা সম্ভব এবং তিনি তা নিশ্চয়ই দেবেন ।
৮। একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক নিশ্চয়ই এমন শক্তিকৃত ঔষধ ক্ষুদ্রতম মাত্রায় প্রয়োগ করবেন যা সূক্ষ্ম মানবদেহে পরীক্ষিত হয়েছে অথবা এই পেশার সাথে জড়িত উপযুক্ত বা যোগ্য ব্যক্তির দ্বারা চিকিৎসা শাস্ত্রানুসারে অনুমোদিত ।
৯। একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ১৯৮৩ ইং সালের বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক প্র্যাকটিসনার্স অর্ডিন্যান্স নং ৪১ নিশ্চয়ই অনুসরণ করবেন এবং ভবিষ্যতে সরকার কর্তৃক গৃহিত হোমিওপ্যাথিক মূলনীতি ভিত্তিক ব্যবস্থাদি অবশ্যই পালন করবেন । ”
👨 হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের পদবী বা উপাদি ব্যবহার ও প্রচার নিতিঃ
১। একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক তাঁর চিকিৎসা কর্মস্থলে বা চেম্বারের দরজায় বা দেয়ালে একটি নামফলক ব্যবহার করতে পারবেন । সে নামফলকে তিনি তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা অথবা ডিগ্রী বা ডিপ্লোমা যা তাঁকে এমন কোন কর্তৃপক্ষ প্রদান করেছে, যাকে ঐ সকল ডিগ্রী, ডিপ্লোমা বা সার্টিফিকেট প্রদানের জন্য সরকার উপযুক্ত বলে স্বীকার করেছেন বা ক্ষমতা দিয়েছেন, তা উল্লেখ করতে পারবেন ।
২। কোন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক তাঁর নামফলক, প্যাড বা রোগীলিপিতে নিজেকে কোন বিশেষজ্ঞ বলে বা কোন রকম চিকিৎসায় পারদর্শী বলে প্রকাশ করতে পারবেন না । ”
👨 নিম্নলিখিত কার্যকলাপ একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের জন্য নীতি বহির্ভূত ( Unethical ) বলে বিবেচিত হবেঃ
১। নিজের গুণ বা পারদর্শিতা সম্পর্কে কোন প্রকার প্রচার বা বিজ্ঞপ্তি করা ।
২। রোগীর সাথে কোন প্রকার চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়া অথবা গ্যারান্টি দিয়ে কোন প্রকার চিকিৎসা করা ।
৩। হোমিওপ্যাথিক মূলনীতি বিরধিজে কোন প্রকার টনিক, মলম, প্যাটেন্ট বা অন্য কোন প্রকার ঔষধ প্রস্তুত বা ব্যবহার করা ।
৪। একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের নিজ পেশার স্বাধীনতা থাকে না এমন কোন চিকিৎসা ব্যবস্থার সাথে বা প্রোগ্রামের সাথে জড়িত থাকা ।
৫। রোগীকে চিকিৎসা করার জন্য উপযুক্ত পেশাগত ফি ব্যতীত অন্য কোন প্রকার পুরুস্কার বা অর্থ গ্রহণ ।
৬। রোগীর মানসিক এবং শারীরিক প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে বা নষ্ট করে এমন কোন ঔষধ প্রয়োগ করা বা ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যদি তা চিকিৎসা বিজ্ঞানের কঠোর বিবেচনায় চিকিৎসাগত বা রোগ প্রতিরোধগত নির্দেশ অনুযায়ী রোগীর স্বার্থে তাঁর উপর প্রয়োগ করা না হয়ে থাকে ।
৭। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতির ক্ষেত্রে যেসকল আবিস্কার স্বীকৃত হয়নি এবং সুস্থ মানবদেহে পরীক্ষিত হয়নি সে সকল গবেষণালব্ধ ফল প্রকাশ করা ।
৮। আইন সঙ্গত ভাবে প্রমান করতে পারা যাবে না, চিকিৎসা ক্ষেত্রে এমন কোন কাজ করা । ”
👨 হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের একের প্রতি অপরের কর্তব্যঃ
১। একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক তাঁর সতীর্থ এবং সহকর্মীদের সাথে এমন সব আচরণ করবেন যা তিনি তাদের নিকট হতে আশা করেন ।
২। একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের কোন অবস্থাতেই অপর একজন হোমিওপ্যাথিক বা অন্য কোন মতাবলম্বী চিকিৎসকের সম্পর্কে দুর্নাম বা কুৎসা রটনা করতে বা কটূক্তি করতে পারবেন না ।
৩। একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক এই পেশায় রত এবং সকল মতাবলম্বী চিকিৎসকদেরকে সম্মান প্রদর্শন করবেন ।
৪। কোন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক অন্য কোন চিকিৎসকের নিকট হতে কোন অবস্থাতেই প্রলুব্ধ করে বা অন্য কোন উপায়ে রোগী সরিয়ে আনতে পারবেন না ।
৫। একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসককে যদি জরুরি ক্ষেত্রে অন্য একজন চিকিৎসকের চিকিৎসাধীন রোগীকে দেখার জন্য আহ্বান করা হয় তিনি পূর্ণ সততার সাথে সে রোগীকে দেখবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন । তিনি রোগীকে বা রোগীর আত্মীয়-সজনদের নিকট সকল অবস্থাতেই পূর্বতন ডাক্তারের কোন প্রকার ভুল চিকিৎসার খবর, তা যদি হয়েও থাকে, গোপন রাখবেন । ”
👨 বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ডের ঘোষণা পত্রঃ
কোন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত হওয়ার প্রাক্কালে অবশ্যই নিম্নলিখিত শপথ বাক্য পাঠ করবেন ।
১। আমি মনেপ্রাণে শপথ করছি যে আমি রোগার্ত মানুষের সেবায় আমার জীবন উৎসর্গ করব ।
২। আমি আমার শিক্ষকদের প্রতি সব সময় যোগ্য সম্মান ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করব ।
৩। আমি সততা ও মর্যাদার সাথে আমার পেশায় নিয়োজিত থাকব ।
৪। আমার নিকট আমার রোগীর স্বাস্থ্যই হবে সর্বপ্রধান বিবেচ্য বিষয় ।
৫। আমার উপর অর্পিত গোপনীয়তা আমি অবশ্যই রক্ষা করব ।
৬। আমি আমার ক্ষমতার সর্বদিক দিয়ে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বৃত্তির সম্মান ও মহান ঐতিহ্য রক্ষা করব ।
৭। আমার সতীর্থদের সাথে আমি অবশ্যই সৌভ্রাতৃত্ব রক্ষা করব ।
৮। আমার এবং আমার রোগীদের মধ্যে বাধার সৃষ্টি করতে পারে এমন কোন ধর্মীয়, জাতীয়, গোষ্ঠীয়, দলগত বা রাজনৈতিক চিন্তা বা বিবেচনাকে আমি কখনও প্রশ্রয় দেব না ।
৯। গর্ভ সঞ্চারের মুহূর্ত থেকে মানব জীবনের প্রতি আমি যথাসাধ্য সম্মান প্রদর্শন করব । এমনকি ভীতি প্রদর্শনেও আমি আমার চিকিৎসাজ্ঞান মানবিকতা পরিপন্থী কোন কাজে ব্যবহার করব না ।
১০। অর্গানন অব মেডিসিন, গ্রন্থের নীতি অনুসারে পরীক্ষিত, শক্তিকৃত একটি মাত্র ঔষধ একবারে সূক্ষ্ম মাত্রায় প্রয়োগ করব ।
আমি সজ্ঞানে, সরলমনে, সস্রদ্ধচিত্তে এবং বিনা প্ররোচনায় উল্লেখিত শপথনামা পাঠ করলাম । ”
সুস্থ মানবদেহে ঔষধ পরীক্ষণের উদ্দেশ্যঃ
হোমিওপ্যাথিক পদ্ধতিতে চিকিৎসা করতে গেলে মানুষের দেহে কোন ঔষধের ক্রিয়া কিভাবে প্রতিফলিত হয় তাহা জানা সর্বাগ্রে প্রয়োজন। তাহারই উপর ঔষধের প্রয়োগ নির্ভর করে।
রোগ সম্বন্ধে হোমিওপ্যাথিতে কিরূপ ধারণা পোষণ করা হয়?
হোমিওপ্যাথিক সম্পর্কে প্রচলত অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতির ধারণা (রোগ জড়) হতে সম্পূর্ণ বিপরীত (রোগ অজড়) ধারণা পোষন করে। হোমিওপ্যাথিক মতে রোগ অভ্যন্ত, অশরিরী, অদৃশ্য ও অতিন্দ্রিয়া। ইহা অজড় ও অদৃশ্য জীবনীশক্তিকে আক্রমন করে তার বিরুদ্ধাচারণ করে। আর এরূপ বিরুদ্ধচারণের ফলে জীবনীশক্তির যে বিকৃত অবস্থা দেখা দেয় সে সব অস্বাভাবিকতার সমষ্টিকেই রোগ নামে অভিহিত করা হয়।অর্থাৎ সুস্থ শরীরে ব্যক্তির যে সব শারীরিক ও মানসিক দুর্লক্ষণ ছিলনা অথচ জীবনীশক্তির বিপর্যস্থতার যে দুর্লক্ষণ হয় তার সমষ্টিকেই রোগ বলে।
রোগ কি? উহার শ্রেণীবিভাগ আলোচনা কর।
শরীরের প্রত্যেক অনু-পরমানুর উপর ক্ষমতা বিস্তারকারী ও সর্বদা ক্রিয়াশীল জীবনীশক্তি বা জৈব-প্রকৃতি কোন কারনে বিশৃঙ্খল হয়ে বা স্বাভাবিক নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটে যে অবস্থার অভিব্যক্তির সৃষ্টি হয় তাহাকে রোগবলে।
Class division of disease- রোগের শ্রেণী বিভাগ-- হ্যানিমান রোগকে দুইভাগে ভাগ করিয়াছেন-
১. অচির রোগ- তরুন রোগ বা অস্থায়ী রোগ বা একিউট রোগ
২. চির রোগ- প্রাচীন রোগ বা স্থায়ী রোগ বা ক্রণিক রোগ
অচির রোগবীজ কি?
যে সমস্ত রোগ হঠাৎ উপস্থিত হয়, দ্রুত জীবনীশক্তির পরিবর্তন সাধন করে এবং অল্প সময়ের মধ্যেই হয় রোগীর জীবন নাশ করে- না হয় সমূলে নিজেই (রোগ) দূরীভূত হয় তাকে অচির রোগ বলে।
⏯- এই সকল রোগের কোন স্থিতিশীলতা নেই।
⏯- এই রোগের ভোগকাল নির্দিষ্ট, এই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই রোগের বিকাশ ও পরিণতি ঘটে (নিরাময় অথবা মৃত্যু)।
⏯- ঔষধ ছাড়াও তরুন রোগ আরোগ্য হয়, তবে সময় কিছুটা বেশি লাগতে পারে।
⏯- তরুন রোগের ভোগকাল অল্পদিন অর্থাৎ ২/১ দিন হতে সর্বোচ্চ ২/১ মাস পর্যন্ত হতে পারে।
⏯- তরুন রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে অবশ্যই বর্তমান বিদ্যমান লক্ষণ ও তার কারণের আলোকে ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে এবং যে কারণে রোগটি হয়েছে তা থেকে বিরত থাকতে হবে।
⏯- প্রধানত: মানসিক ও শারীরিক অনিয়মের ফলে বা স্বাস্থ্যবিধি লংঘনের ফলে এই জাতীয় রোগ ব্যক্তিগতভাবে যে কোন মানুষকে আক্রমণ করতে পারে।
বিভিন্ন ধরণের অচিররোগের উদাহরণঃ
সর্দি, জ্বর, উদরাময়, কলেরা, হাম, বসন্ত, ম্যালেরিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা, গলক্ষত, বমি, এলার্জি, কাশি, কানে বেদনা, আধকপালে মাথাব্যথা, আঘাত, দংশন, বিষক্রিয়া, কেটে যাওয়া, থেতলে যাওয়া ইত্যাদি।
এছাড়া যে সকল ক্রণিক বা পুরাতন রোগ বৃদ্ধি পেয়ে প্রবল যন্ত্রণা সৃষ্টি করে সেই রোগেও নতুন বা তরুন রোগের মত চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। যেমন: পুরাতন আমাশয় প্রবল আকার ধারণ করলে, হাঁপানীর টান বৃদ্ধি পেলে।
আর যে সকল রোগ তরুণ রোগের মত দেখা দেয়; কিন্তু চিকিৎসা করলে সাময়িক উপশম হয়ে কিছুদিন পরে আবার ফিরে আসে সেই সকল রোগের চিকিৎসা ক্রণিক বা পুরাতন রোগের মত গ্রহণ করতে হবে।
অচির রোগবীজ তিন প্রকারঃ
👦ব্যক্তিগতঃ এই প্রকার তরুন রোগ মানুষের ব্যক্তিগত কর্মের জন্য আক্রমন করে। যেমন-সর্দি, উদরাময় প্রভৃতি।
👦বিক্ষিপ্তঃ হঠাৎ কোন স্থানে দুই একজনের মধ্যে দেখা যায়, সুনির্দিষ্ট কোন নাম নাই।
👦মহামারীঃ বাহ্যিক উত্তেজক করণ যেমন-যুদ্ধ, প্লাবন, দুর্ভিক্ষ প্রভৃতি প্রাকৃতিক বিপর্যের কারণে বহুলোক আক্রন্ত হয়। যেমনঃ বসন্ত, কলেরা, হাম ইত্যাদি।
চির রোগবীজ কি?
যে সমস্ত রোগ দীর্ঘদিন অর্থাৎ মাসের পর মাস এমনকি বছরের পর বছর থাকে, তেমন যন্ত্রণাদায়ক নয়- কিন্তু সহজে সারে না, একবার সারলেও আবার দেখা দেয় সেগুলি চির রোগ।
যে সমস্ত রোগের শুরুটা প্রায়ই জানা যায় না, ধীরে ধীরে সামান্য শক্তিতে, অগোচরে আরম্ভ হয়ে বহুদিন ধরে জীবনীশক্তির বিকৃতি ঘটায় এবং দেহকে এরূপ অন্ত:সারশূণ্য করে ফেলে যে প্রকৃত ঔষধ ব্যতীত জীবনীশক্তির নিজস্ব প্রচেষ্টায় এর হাত থেকে পরিত্রাণ পায় না তাকে চিররোগ বলে।
⏯- চিররোগ ধীরে ধীরে জীবনীশক্তিকে নষ্ট করতে থাকে এবং ঔষধ ছাড়া কখনও নিরাময় হয় না।
⏯- চিররোগের কারণ অদৃশ্য, সহজে খুজে পাওয়া যায় না।
⏯- রোগের ভোগকালের কোন সময়সীমা নেই। রোগী আজীবন চিররোগে ভুগতে পারে। এই রোগ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়ে রোগীর মৃত্যু ঘটায়।
⏯- হ্যানিম্যানের মতে, এই সকল রোগ উৎপত্তির মূল কারণ সোরা, সিফিলিস, সাইকোসিস, টিউবারকুলেসিস নামক রোগবীজ বা মায়াজম।
বিভিন্ন ধরণের চিররোগের উদাহরণঃ
⏯- সিফিলিস, বধিরতা, তোৎলামী, লিভারের সমস্যা, অস্থিক্ষত, গলক্ষত, মুখে ঘা, পাকস্থলীতে ঘা, হাঁপানী, হিপাটাইটিস, ল্যারিনজাইটিস, দ্রুত হৃদস্পন্দন, ওভারীর সমস্যা, ক্ষুধামান্দ্য, পুরাতন ডায়রিয়া, কার্বাঙ্কল, ক্যানসার, মৃগী, পক্ষাঘাত, খর্বাকৃতি, ধবল বা শ্বেতী।
⏯- হিস্টিরিয়া, হাঁপানী, মূত্রনালীর সংকীর্ণতা, মূত্রপাথুরী, একশিরা, ফাইলেরিয়া, ডিপথেরিয়া, বসন্ত, যোনিকপাট বন্ধ, সন্ন্যাস, পেশী বাত, গেটে বাত, সায়েটিকা, টাইফয়েড, টিউমার, ছানি, বাধক, ক্রণিক আমাশয়, হার্পিস, ধ্বজভঙ্গ, স্মরণশক্তি হ্রাস, বাচালতা, বমিভাব, মাথাব্যথা, সর্দি ঝরা, নাক দিয়ে রক্ত পড়ে।
⏯- ক্যান্সার, স্ট্রোক, হুপিং কাশি, মেদপ্রবণতা, বিভিন্ন ধরণের টিউমার, পুরাতন কাশি।
⏯- সন্ন্যাস, কিডনী অকেজো, সোরাইসিস, অতি ক্ষুধা, ওজনহীনতা, কালা।
⏯- শিশুদের কানের সংক্রমণ, ফ্লু, পিঠে ব্যথা, ঘাড় আড়ষ্টতা, হাত-পায়ে আড়ষ্টতা।
⏯- হৃদপিন্ডের পীড়া, উচ্চ রক্তচাপ, বহুমূত্র, একজিমা, এলারজি, বমিভাব, মাথাব্যথা, পেশির আক্ষেপ।
চির রোগবীজ তিন প্রকারঃ
👦প্রকৃতি চিররোগঃ যেমন- হাঁপানি।
👦কৃত্রিম চিররোগঃঔষধজনিত চিররোগ-যেমন দীর্ঘদিন ডায়াবেটিসের ঔষধ খাওয়ার ফলে গ্যাংগ্রীন।
👦মিথ্যা চিররোগঃ চিররোগের মত, কারণ দূর হলে রোগ বিনা চিকিৎসাই ভাল হয়ে যায় বা আরোগ্যের পথে বাধা দূর হয়ে যায়, যেমন-দীর্ঘদিন রাত্রি জাগরণের ফলে অনিদ্রা।
Related Topics Click Here::
- চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাস- History of Medicine [ প্রথম অধ্যায় ]
- Definition of Homeopathy- হোমিওপ্যাথির নীতিমালা কাকে বলে ? [দ্বিতীয় অধ্যায়]
- হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নীতিমালা।
- ঔষধ প্রস্তুতকরণ ও শক্তিকরণ। নবম অধ্যায়।
- ভেষজ পরীক্ষণ এবং মাত্রাতত্ত্ব- Drug Proving and Posology.
- রোগ সম্বন্ধে হোমিও মতবাদ।
- Short question of homeopathy principles.
- মায়াজম পরিচিতি।
- হোমিওপ্যাথিক ওষুধ প্রয়োগ পদ্ধতি।
- ঔষধের শক্তিকরণ- Drug Potentization.
- হোমিওপ্যাথির নিয়মনীতি।
- হোমিওপ্যাথির নিয়মনীতি_পরীক্ষার সাজেশন।
0 Comments: