মায়াজমঃ সোরিক, সাইকোটিক, সিফিলিটিক।
সাইডঃ বামপাশ, ওপরে বামপাশ নিচে ডানপাশ।
কাতরতাঃ শীতকাতর, উভয় কাতর।
হোমিওপ্যাথিতে বহুল ব্যবহৃত ও গুরুত্বপূর্ণ একটি মেডিসিনের নাম থুজা অক্সিজেন্টালিস (Thuja Occaidentalis ) সংক্ষেপে থুজা। হোমিওপ্যাথিতে আঁচিলের ভাল চিকিৎসা হয়। তাই অনেকেই মনে করেন থুজা আঁচিলের প্রধান ঔষধ। কথাটা সত্য। তবে শুধু আঁচিল নয়, থুজা একটি সুগভীর ক্রিয়া ঔষধ এবং প্রধান সাইকোসিস হিসেবে এর ক্রিয়া অনেক বিস্তৃত ও গুরুত্বপূর্ণ।
থুজার উৎস- এক প্রকার ঝাউ গাছ। কানাডার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্যসমূহে এই প্রকার গাছ জন্মায়। এই গাছে যখন ফুল ফুটে, তাজা পাতা সংগ্রহ করে তা থেকে মূল আরক বা মাদার টিংচার প্রস্তুত করা হয়।
থুজার প্রুভার- ডা. স্যামুয়েল হ্যানিমান।
থুজা রোগীর ধাতুগত লক্ষণ- শ্লেষ্মাপ্রধান, রসপ্রধান, মোটা-স্থুলকায় ও থলথলে দেহ, ফ্যাকাশে-রক্তহীন। গায়ের বর্ণ কাল হলেও রক্তহীনতার কারণে মুখ, হাত-পা সাদা দেখায়। সর্বদা পা দুটি কাঁপে। চক্ষুরোগপ্রবণ। শরীরের অনাবৃত অংশ ঘামে। মুখমণ্ডল তৈলাক্ত, মাথার চুল শুষ্ক ও চেরাচেরা, নখ ফাটা ফাটা, শরীরের এক পাশে ঠাণ্ডা, বাম পার্শ্বে রোগাক্রমণ।
মানসিক লক্ষণ-
- রোগী সন্দেহপ্রবণ, ঝগড়াপ্রিয়, কলহপ্রিয়, ঈর্ষাপরায়ণ। ক্রোধ এবং জেদ বেশি, খিটখিটে স্বভাব। ‘খিটখিটে স্বভাব’ বিষয়ে একটা কথা মনে রাখা দরকার- সে বাড়ির লোকজন এবং পরিচিতদের সাথে খিটখিটে মেজাজে কথা বলে, কিন্তু অপরিচিতদের সাথে সংযত আচরণ করে। এটা সাইকোসিসের লক্ষণ। সাইকোসিস প্রতারণাপরায়ণ। থুজা বাড়ির লোকজনের সাথে খিটখিটে মেজাজ দেখালেও অপরিচিতদের সাথে সংযত আচরণের মাধ্যমে সাইকোসিসের লক্ষণ প্রতারণার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। অর্থাৎ অপরিচিতদের সাথে সংযত ও ভাল আচরণ এটা তার প্রতারণা।
- সর্বদা বিমর্ষ, জীবনের প্রতি বিতৃঞ্চা। নির্জনপ্রিয়, চাপা স্বভাব, সব কিছু চেপে রাখতে চায়, কোন কিছু সহজে প্রকাশ করতে চায় না। একাকী থাকতে পছন্দ করে, অপরিচিত লোকজনের কাছে যেতে ভয় পায়।
- সত্য গোপন করার জন্য চলচাতুরির আশ্রয় নেয়া, অবান্তর গল্পকাহিনী বানানো থুজার একটি বৈশিষ্ট্য।
- কোন বিষয় নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করতে পারে না, মনে জোর পায় না। কথা বলার সময় কথা হারিয়ে যায়। তাই কথা বলে অতি ধীরে ধীরে। বার বার ঢোক গিলে কথা বলে যেন কথা খুঁজে খুঁজে বের করছে। তবে ক্রুদ্ধাবস্থায় সে খুব দ্রুতগতিতে কথা বলে। কথা বলার সময় জিহ্বায় কামড় লাগাও থুজার একটি বিশেষ লক্ষণ। লেখার সময় ভুল করে, যা বলে তা লিখে না, ভুল হয়।
- রোগী নানা রকম ভ্রান্ত ধারণায় বিশ্বাসী। তার ধারণা সে কোন দৈবশক্তি দ্বারা পরিচালিত। মনে করে কেউ যেন তাকে পেছন থেকে অনুসরণ করছে। অপরিচিত লোকজন তার পাশে বসে আছে বা শুয়ে আছে।
- একবার কোন ধারণা বা বিশ্বাস জন্মালে তা থেকে সে সহজে নড়ে না। সুচিবাইগ্রস্ত, স্পর্শকাতর। সহজে কাউকে স্পর্শ করতে দেয় না। মনে করে তাতে অপবিত্র হয়ে যাবে। সঙ্গীত শুনে কান্না করে।
- থুজার রোগী মনে করে তার শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাঁচ বা এ জাতীয় ভঙ্গুর পদার্থ দিয়ে তৈরি যা যেকোন সময় অতি সহজেই ভেংগে যাবে বা ভেংগে পড়তে পারে।
চিকিৎসায় ব্যবহৃত Thuja নিম্নলিখিত রোগের উপসর্গ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ করে:
- Immunostimulant
- ভাইরাস ঘটিত সংক্রমণ
- তীব্র শ্বাস নালীর সংক্রমণ
- সাধারণ ঠান্ডা
- মানব ইমিউনো ভাইরাস
- মাইক্রোবিয়াল সংক্রমণ
- ভাইরাস সংক্রমন
- Immunostimulant
পেটের ভেতর কোন জীবন্ত প্রাণী আছে, কিছু একটা নড়চড়া করছে। মহিলারা মনে করে- সে গর্ভবর্তী হয়েছে, পেটের ভেতরে বাচ্চা নড়াচড়া করছে, পেটে মরা বাচ্চা রয়েছে। এটাও তার বদ্ধমূল ধারণা। এ ধারণা থেকে তাকে সহজে টলানো যায় না।
স্বপ্নবহুল নিদ্রা থুজার একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। রোগী যতসব অদ্ভূত অদ্ভূত স্বপ্ন দেখে। মৃত ব্যক্তির স্বপ্ন, উড়ে যাওয়ার স্বপ্ন, পড়ে যাওয়ার স্বপ্ন থুজার বৈশিষ্ট্য। ঘন ঘন স্বপ্নদোষে থুজার কথা স্মরণ করা যায়।
ক্রিয়াস্থল:-
- থুজার মূল ক্রিয়াস্থল চর্ম, জনেন্দ্রীয়, মলদ্বার ও মূত্রযন্ত্র। তবে প্রধান এন্টিসাইকোটিক মেডিসিন হিসেবে থুজা শরীরের প্রায় সর্বত্রই কার্যকর।
- টিকার কুফলে থুজার ব্যবহার আশ্চর্যজনক ফল দেয়। টিকাজনিত শারীরিক মানসিক যে কোন কুফল বা উপসর্গে প্রথমেই থুজা স্মরণীয়।
- হাম ও বসন্তের প্রতিষেধক হিসেবে থুজা খুবই চমৎকার।
- টিকা নেয়ার পর এবং হাম ও বসন্তের পর যে সব উপসর্গ দেখা দেয় তাতে প্রথমেই থুজা স্মরণীয়।
- স্ফীতিভাব, আবরন সহ্য করতে পারে না।
- পুরাতন উদরাময়, প্রাতকালীন আহারের পর বৃদ্ধি।
- মল সগোরে ও কলকল শব্দেনির্গত হয়।
- উদরের উপর পিঙ্গল বর্ণের দাগ।
- উদর স্ফীতি, উদর প্রসারন, মাঝে মাঝে এক এক স্থান উচু দেখায়।
- পেটে গড় গড় শব্দ ও শূল বেদনা।
- কোষ্ঠকাঠিন্য তৎসহ সরলান্ত্রে তীব্র বেদনা।
- মল খানিকটা বের হয়ে আবার ঢুকে যায় (সাইলি, স্যানিকিউলা)।
- অর্শ বলি, স্ফীত, বসলে বেদনার বৃদ্ধি তৎসহ মলদ্বারে খোঁচামারা ও জ্বালাকর বেদনা।
- মলদ্বার ফাটাফাটা, আঁচিলযুক্ত এবং সেই জন্য বেদনা।
- উদর গহ্বরে যেন জীবন্ত কোন কিছু নড়াচড়া করছে (ক্রোকাস) কিন্তু কোন বেদনা থাকে না।
বৃদ্ধি: বর্ষাকালে, ঠান্ডায়, স্যাঁতসেঁতে আদ্র আবহাওয়ায়, টিকা দেয়ার পর, চাঁদের আলোয়, ভোর ৩টায়, সকালে, আহারের পর, স্পর্শে, ঋতু পরিবর্তনে।
উপশম: গরমে, বিশ্রামে, চাপে, মাথা পেছনের দিকে হেলান দিয়ে রাখলে অর্থাৎ মাথা পেছনের দিকে রেখে উপরের দিকে তাকালে শির পীড়া উপশম। থুজা ঠান্ডা বৃদ্ধি ও গরমে উপশম হলেও বাত-বেদনা এবং দন্তশূল ঠান্ডায় উপশম।
লবণ এবং তিক্ত দ্রব্যের প্রতি আগ্রহ, আলু অপ্রিয়। চা, পেঁয়াজ ও টক অসহ্য।
লবনপ্রিয়তায় দুটি ঔষধের মধ্যে অনেকে ন্যাট্রাম মিউরকে দ্বিতীয় স্থানে রেখে থুজাকেই প্রথম বলেছেন।
আঁচিল বা এজাতীয় উদ্ভেদ সাইকোসিসের প্রধান লক্ষণ। সুতরাং আঁচিল বা আঁচিল সদৃশ উদ্ভেদে এন্টি সাইকোটিক থুজাই প্রধান মেডিসিন।
হোমিওপ্যাথি যেহেতু মায়াজমেটিক চিকিৎসা ব্যবস্থা, তাই এন্টি সাইকোটিক হিসেবে প্রথমেই থুজার কথা স্মরণ করা উচিৎ।
ভ্রান্ত বিশ্বাসঃ যেন তার পিছনে কেউ আছে, যেন সে গর্ভবতী, মনে করে সে যেন মরতে বসছে।
ক্রন্দনঃ ঘুমের মধ্যে।
ইচ্ছাঃ আত্মহত্যা, চুরি করার।
১৬. কাতরতাঃ ।
২৩. মায়াজমঃ ।
২৬. পরবর্তী ঔষধঃ ।
0 Comments: