ঔষধের শক্তিকরণ- Drug Potentization - Rectopen

Download Free Android Apps

Ads 728x90

ঔষধের শক্তিকরণ- Drug Potentization

Drug Potentization-ঔষধ শক্তিকরণ।
হোমিও ঔষধের শক্তিকরণ বলিতে কি বুঝ।
১৮২৭ খ্রিস্টাব্দে হ্যানিমান ঘোষনা করেন যে, সাধারণ অর্থে  জড় পদার্থ বলিতে যাহা বুঝায় ভেষজ পদর্থ তেমন জড় অনড় নয়। তাহার আসল স্বরূপ হইল বিশুদ্ধ শক্তি। এই শক্তি ভেষজ পদার্থে সুপ্ত থাকে। বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভেষজের শক্তির ক্রিয়া ক্ষমতাকে ইচ্ছামত বৃদ্ধি করা যায়। যে প্রক্রিয়ার দ্বারা প্রাকৃতিক পদার্থের অন্তর্নিহিত সূক্ষ্ম ভেষজগুণ স্ফুরিত, বিকশিত ও ঔষধরূপে ব্যবহারের উপযোগী হয় তাহাকে ভেষজের শক্তির বিকাশন বা শক্তিকরণ প্রক্রিয়া বলে।

হ্যানিমান ভেষজের অন্তর্নিহিত শক্তিকে জাগ্রত করার প্রক্রিয়াই শুধু আবিস্কার করেন নাই বরং তিনি একটি সুনিদির্ষ্ট মান অনুযায়ী সেই শক্তিকে বিভিন্ন স্তরে উন্নীত করার পন্থা ও উদ্ভাবন করিলেন যাহাতে প্রয়োজন অনুযায়ী ঔষধ বিভিন্ন শক্তিতে ও বিভিন্ন মাত্রায় স্বচ্ছন্দে ব্যবহার করা চলে।
Drug Potentization

শক্তিকরণ প্রক্রিয়া কিরূপে সম্পাদিত হয় ?
সাধারনতঃ বিশেষ রীতিতে ঘর্ষণ ও চূর্ণীকরণ অথবা দ্রবীকরণ ও আলোড়ন দ্বারা ভেষজের আবদ্ধ শক্তিকে মুক্ত করা হয়। যে বস্তুকে শক্তিতে রূপানতরিত করিতে হইবে সেই বস্তুর এক ক্ষুদ্র অংশ কোন এক ভেষজগুনহীন নিস্ক্রিয় পদার্থের সঙ্গে ঘর্ষণ, পেষন ও আলোড়ন করা হয়। দুগ্ধ শর্করা, সুরাসর, এবং পরিশ্রুত জল সাধারনত অনৌষধি মাধ্যম রূপে ব্যবহৃত হয়। এই প্রক্রিয়ার ফলে পদার্থের অনু পরমানুতে যে সূক্ষ্ম ভেষজ গুনগুলি আবদ্ধ ছিল সেগুলি ক্রমে ক্রমে মুক্ত হইতে থকে। যতই প্রক্রিয়া চালানো যায় ততই পদার্থের গভীরে নিহিত সূক্ষ্মতম গুণাবলীর স্ফুরণ হইতে থাকে। পদার্থের জড়সত্তা ধীরে ধীরে শক্তিতে রূপান্তরিত হয় এবং সেই শক্তি অনৌষধি মাধ্যমে সঞ্চারিত হয়। এই প্রক্রিয়াতে প্রতিটি ভেষজের প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট অক্ষুন্ন থাকে।

বিভিন্ন রোগী ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকারের হোমিও ঔষধ শক্তি নির্ধাণের নিয়ম কি কি?
১. রোগীর অবস্থাঃ
ডাঃ জার বলেন , যদি কোন ক্ষেত্রে রোগলক্ষণ সমূহ স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়না কিংবা পরিচায়ক লক্ষণসমূর অভাব বা সংখ্যাল্পতা থাকে অথবা যেখানে ২/৩ টি ঔষধের লক্ষণ ফুটিয়া উঠে সেখানে রোগীর প্রবণতা কম বলিয়া ধরিতে হইবে। এইসব ক্ষেত্রে যে ঔষধ রোগলক্ষণের সহিত সর্বাধিক সাদৃশ্য বহন করে সেই ঔষধ নিম্নশক্তিতে (৩-১২) প্রদান করিতে হয়। কিন্তু যেখানে লক্ষণসমষ্টি সুস্পষ্ট ভাবে সেই ঔষধই নির্দেশ করে সেখানে ঔষধের উচ্চশক্তি (২০০ ও উর্ধে) প্রদান করিতে হয়।

(ক) রোগীর বয়সঃ শিশু, যুবক ও তেজস্বী ব্যক্তিদের প্রবণতা বেশী, সেইজন্য তাহাদের ক্ষেত্রে মধ্য ও উচ্চশক্তি প্রয়োগ করিতে হয়, বয়সের সঙ্গে প্রবনতা কমে, তাই বয়স্কদের ক্ষেত্রে নিম্ন হইতে মধ্যশক্তির ঔষধ প্রয়োগ করিতে হয়।

(খ) ধাতু ও গড়নঃ স্নায়ু প্রধান, রক্ত প্রধান, রাগ প্রধান ধাতু ব্যক্তি এবং বুদ্ধিজীবি, উৎসাহী ও আবেগ প্রবণ ব্যক্তিদের প্রবণতা বেশী। কাজেই এই সব ক্ষেত্রে উচ্চ শক্তি প্রয়োগ করিতে হয়। শ্লেম্মা প্রধান ধাতুর ব্যক্তি, জড়বুদ্ধি, কর্মে শ্লথ, আলস্যপরায়ণ যাহাদের মাংসপেশী দৃঢ় ও সবল এবং যাহারা দৈহিক পরিশ্রম করে তাহাদের প্রবণতা কম, এই সবক্ষেত্রে ঔষধের নিম্নশক্তি, বৃহৎমাত্রা ও পুনঃপ্রয়োগের প্রয়োজন হয়। জড়ধী , পৌরুষহীন , বধির , বোবা ব্যক্তিদের প্রবণতা নিচুস্তরের এই সব ক্ষেত্রেও নিম্নশক্তির ঔষধ প্রদান করিতে হয়।

(গ) নিদানগত (Diagnostic-রোগনির্ণয়সংক্রান্ত) অবস্থাঃ নিদানগত অবস্থা প্রবণতার পরিবর্তন সাধন করে। এই অবস্থায় প্রাণসত্তার প্রতিক্রিয়ার ক্ষমতা কমিয়া যায়। কাজেই এইসব অবস্থার সর্বদাই নিম্নশক্তি ব্যবহার করিতে হয়। হৃদপিন্ডের পীড়ার অন্তিম অবস্থায় ডিজিটেলিস নির্দিষ্ট হইলেও এই ঔষধের কোন শক্তিতেই বিশেষ কোন ক্রিয়া হয়না। একমাত্র মূল আরকের স্থুলমাত্রা জীবনী শক্তিকে পুনরুজ্জীবিত করিতে পারে। আবার যাহারা অধিক ঔষধ ব্যবহার করেন, তাহাদের ক্ষেত্রে উচ্চশক্তির ঔষধ ভাল কাজ করে।  

(ঘ) রোগীর দৈহিক ও মানসিক অবস্থাঃ যেখানে রোগীতে প্রতিক্রিয়া তীব্র সেখানে উচ্চশক্তি , আর যেখানে প্রতিক্রিয়া দুর্বল সেখানে নিম্নশক্তি প্রদান করিতে হয়। রোগী অত্যন্ত দুর্বল হইলে নিম্নশক্তি এবং সবল হইলে উচ্চশক্তি। রোগী অস্থির ও অসহিঞ্চু হইলে সর্বদাই নিম্নশক্তি।

(ঙ) চিকিৎসার উদ্দেশ্যঃ রোগীর অভিপ্রায়ের উপর ও শক্তি নির্বাচিত হইয়া থাকে। চিররোগের যদি কোনরূপ উপশম চায় তবে নিম্নশক্তিতে এবং যদি স্থায়ী আরোগ্য লাভ করিতে চায় এবং তার জন্য যথোচিত ধৈর্য ধারণ করিতে রাজী থাকে তবে ঔষধের উচ্চশক্তি প্রদেয়।

(চ) ধাতুগত চিকিৎসাঃ ধাতুগত চিকিৎসায় সর্বদাই উচ্চশক্তি ব্যবহৃত হয়। ধাতুগত চিকিৎসায় কোন ঔষধ উচ্চশক্তিতে প্রদান করার পর নতুন কোন উপসর্গ দেখা দিলে যদি সেই সমস্ত লক্ষণ রোগীতে পূর্বে কখনও দেখা না দিয়া থাকে তবে সদৃশমতে নির্বাচিত ঔষধের নিম্নশক্তি প্রদান করিতে হয়।

২. রোগীর প্রকৃতি , অবস্থা , গতি , তীব্রতা ও দেহে বিকাশ , স্থায়িত্ব ও স্থিতির স্থানঃ




৩. ঔষধের প্রকৃতিঃ
ঔষধের প্রকৃতির উপর ও শক্তি নির্ধারণ নির্ভর করে।

(ক) লঘু ক্রিয়া ও দীর্ঘ ক্রিয়া ঔষধঃ যেসব ঔষধের ক্রিয়া অগভীর এবং স্বল্পকাল স্থায়ী সে সব ঔষধ নিম্নশক্তিতে ব্যবহৃত হয়। যেসব ঔষধের ক্রিয়া গভীর ও দীর্ঘকাল স্থায়ী সেগুলি মধ্য ও উচ্চশক্তিতে প্রযুক্ত হয়।

(খ) যেসব ঔষধ তাহাদের স্বাভাবিক অবস্থায় সুস্থ দেহে প্রয়োগ করিলে বিশেষ কোন লক্ষণ উৎপন্ন হয় না সেগুলি মধ্য বা উচ্চ শক্তিতে প্রয়োগ করিতে হয়। যেসব ঔষধ তাহাদের স্বাভাবিক অবস্থায় সু্স্থ দেহে দহযন্ত্রের বৈলক্ষণ্য সৃষ্টি করিতে পারে সেগুলি সাধারনতঃ নিম্নশক্তিতে প্রযুক্ত হয়। আবার যে সব ঔষধ স্বাভাবিক অবস্থায় দেহযন্ত্রের উপর ধবংসাত্নক ক্রিয়া করে সেগুলি উচ্চশক্তিতেই প্রয়োগ বিধেয়।

রোগজ ভেষজ সর্বদাই উচ্চশক্তিতে ব্যবহৃত হয়।
(গ) সুনির্বাচিত ঔষধে কোন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি না হইলে প্রতিক্রিয়া আনার জন্য অন্তর্বতী যে ঔষধ ব্যবহৃত হয় তাহা উচ্চশক্তিতে প্রয়োগ করা হয়।

(ঘ) কতকগুলো ঔষধ বিভিন্ন শক্তিতে বিভিন্নরূপ ক্রিয়া করে। যেমনঃ

১. হিপার সালফ, মার্কুরিয়াস, সাইলিসিয়া নিম্নশক্তিতে পুঁজ উৎপাদন করে, উচ্চশক্তিতে পুঁজ নিবারণ করে।

২. ব্রায়োনিয়া ২০০ স্তন দুগ্ধ বৃদ্ধিতে এবং ৩X স্তন্য হ্রাসের নিমিত্ত প্রযুক্ত হয়।

৩. আঘাত লাগার দরুণ তরুণ পীড়ার আর্ণিকা নিম্নশক্তি কিন্তু আঘাতজনিত কারণে যদি পরবর্তীকালে কোন পীড়া দেখা দেয় তবে আর্ণিকা উচ্চশক্তি অধিকতর উপযোগী।

৪. কোষ্ঠকাঠিন্য নির্দিষ্ট হইলে নাক্সভম নিম্নশক্তি এবং উদরাময়ে উচ্চশক্তি।

৫. আফিম সেবীদের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট হইলে ওপিয়াম উচ্চশক্তি।

৬. আর্সেনিক এলবাম পাকস্থালী, অন্ত্র ও কিডনীর পীড়ায় নিম্নশক্তি এবং নিউরালজিয়া , স্নায়ু ও চর্মের পীড়ায় উচ্চ শক্তিতে। ক্রণিক পীড়ায় আর্সেনিক নির্দিষ্ট হইলে উচ্চশক্তিতে প্রযোজ্য।

৭. যৌনক্রিয়ার আধিক্য হেতু দুর্বলতায় নির্দিষ্ট হইলে এসিড ফস নিম্নশক্তি।

৮. যৌনক্রিয়ার অতিশয্য হেতু দুর্বলতা , শ্বাসকষ্ট, বার বার প্রস্রাবের বেগ প্রভৃতি উপসর্গযুক্ত রোগে নির্দিষ্ট হইলে ৩০ শক্তি বিশেষ উপযোগী।

৯. পডোফাইলাম ব্যবহারকালে যকৃতের তরুণ রোগে মধ্য ও উচ্চশক্তি , পুরাতন রোগে নিম্নশক্তি , শিশু কলেরা , কলেরা ও উদরাময় রোগে উচ্চশক্তি , সবিরাম জ্বরে মধ্য ও উচ্চশক্তি।

উপরোক্ত আলোচনা হইতে প্রতিয়মান হয় যে ঔষধের শক্তি নির্ধারণের ভিত্তি কোন একটি কারণের উপর নির্ভর করে না। রোগীর সামগ্রিক অবস্থা নির্দেশক যাবতীয় ঘটনার বিচার করিয়া ঔষধের শক্তি নির্ধারণে করিতে হয়। 

Related Topics Click Here::




Add Comments

Ads 728x90