হোমিওপ্যাথিক ঔষধের শক্তি বা ক্রম বলিতে কি বুঝায় ?
হোমিও
ফার্মাকোপিয়ার নিদির্ষ্ট প্রক্রিয়া অনুসারে মূল আরককে তরল ভেষজবহ সহযোগে
সূক্ষ হইতে সূক্ষতম অংশে বিভাজিত করা এবং কঠিন বা ধাতব পদার্থকে দুগ্ধ
শর্করা সহযোগে বিচূর্ণ করিয়া সূক্ষ হইতে সূক্ষতম অংশে বিভাজিত করা অংশকে
শক্তি বা ক্রম বলে।
Method of Potentization_শক্তি বিকাশনের পদ্ধতি গুলি কি কি ?
১. Succussion সাক্কাশন বা ঝাঁকুনি- তরল আকারের ঔষধঃ তরলে দ্রবণীয় ঔষাধাদি পদার্থকে পরীশ্রুত পানি ও এলকোহল মিশিয়ে ঝাঁকুনি বা সাক্কাশনের মাধ্যমে ঔষধের শক্তি প্রস্তত ও বিকাশন করা হয়। সাধারণতঃ ঔষধের মূল আরক হইতে পরীশ্রুত পানি ও এলকোহল সহযোগে প্রতিটি পদক্ষেপে ঝাঁকুনি দিয়া শক্তি প্রস্তুত বা বিকাশ ঘটানোর নাম সাক্কাশন।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে তিনটি পদ্ধতিতে ঔষধ শক্তিকরণ করা হয়। যথা-🌱 দশমিক পদ্ধতি
🌱 শততমিক পদ্ধতি
🌱 ৫০ সহস্রতমিক পদ্ধতি
দশমিক রীতিঃ ডাঃ হেরিং কর্তৃক এই রীতি প্রবর্তিত হয়। এই রীতিতে মূল ঔষধের ১ ভাগের সাথে ৯ ভাগ ভেষজবহ মিশাইয়া ১ ঘন্টা কাল খলে ঘর্ষণ করিলে প্রথম দশমিক শক্তির ঔষধ প্রস্তুত হয়। প্রথম শক্তির ১ ভাগ আবার ৯ ভাগ ভেষজবহের সহিত মিশাইয়া দ্বিতীয় দশমিক শক্তির ঔষধ প্রস্তুত হয়। দশমিক শক্তির ঔষধ কে X চিহ্ন দ্বারা ঔষধের শক্তি প্রকাশ করা হয়।
শততমিক রীতিঃ ডাঃ হ্যানিমান কর্তক প্রবর্তিত হয়। শততমিক প্রক্রিয়ায় ১ ভাগ মূল আরকের সঙ্গে ৯৯ ভাগ সুরাসার মিশ্রিত করিয়া উত্তমরূপে ঝাঁকানি দিয়া প্রথম শততমিক শক্তির ঔষধ প্রস্তুত হয়। প্রথম শততমিক শক্তির ১ ভাগ আবার ৯৯ ভাগ সুরাসার মিশ্রিত করিয়া উত্তমরূপে ঝাঁকানি দিয়া দ্বিতীয় শক্তির ঔষধ প্রস্তুত করা হয়। এই ভাবে ক্রমান্বয়ে উচ্চ শক্তি ঔষধ প্রস্তুত হয়।
পঞ্চাশ সহস্রতমিক শক্তি কিভাবে প্রস্তুত করা হয় ?
শততমিক ঔষধের চেয়ে ১০ গুণ বেশি ঝাঁকি দিতে হয় ৫০ সহস্রতমিক ঔষধ তৈরির ক্ষেত্রে।
পঞ্চাশ সহস্রতমিক শক্তির ঔষধ সবসময় অবশ্যই পানিতে দ্রবণ করে প্রয়োগ করতে হয়। একটি দানাতে কোটি কোটি অনু থাকে। যখনই কোন তরলে ঔষধীয় বস্তু দ্রবণ করা হয় তখন অণু বা পরমাণুসমূহের বন্ধন তরলের (দ্রাবকের) আকর্ষণে শিথিল হয় এবং কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে থাকে।শক্তিকৃত করার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ দ্রাবক দিয়ে যতই তরল (Dilute) করা হয় ততই অণু ও পরমাণুসমূহ পরস্পর থেকে বন্ধনযুক্ত হয়,কোন কোন ক্ষেত্রে অণুসমূহ আয়নের (চার্জযুক্ত কণা) পরিণত হয়। কোন বস্তুর দানা থেকে তার মুক্ত অণু বা পরমাণু বা আয়নে কার্যকরী ক্ষমতা অনেক অনেক বেশি হয়। সাথে সাথে মানুষের বাযন্ত্রের ঝাঁকিরূপ শক্তি যোগ হয়ে ঔষধের শক্তি কয়েকগুণ বেড়ে যায়। সেইজন্য ৫০ সহস্রতমিক পদ্ধতির ঔষধ বহুগুণ শক্তিসম্পন্ন হয়। যথার্থ মাত্রা ও শক্তিতে প্রয়োগ না করলে ঔষধ টি সংহারীরূপ ধারণ করে রোগীর চরম ক্ষতির কারণ হয়ে যেতে পারে।
৫০ সহস্রতমিক ঔষধ প্রস্তুত করতে হলে প্রথমে (১ঃ১০০) অনুপাতে সেন্টিসেমাল স্কেলের তৃতীয় শক্তি পর্যন্ত প্রস্তুত করতে হবে। পারদ,পেট্রোলিয়াম ইত্যাদি তরল পদার্থের ক্ষেত্রেও এক ফোঁটা নিতে হবে।
(All the medicinal substance, whether dry or oily (plants and animals as a whole),are triturated with sugar of milk up to the third centisimal potency)।
![]() |
পঞ্চাশ সহস্রতমিক শক্তিকরণের পদ্ধতির বর্ণনা দাও।
মহাত্মা হ্যানিমান অর্গাননের ৬ষ্ঠ সংস্করণে এই নতুন পদ্ধতির উল্লেখ করিয়াছেন। মূল ঔষধ হইতে M/1 পর্যন্ত আসিতে ৫টি স্তর অতিক্রম করিতে হয়।
ঔষধি পদার্থঃ দুগ্ধ শর্করা = ১ গ্রেনঃ ১০০গ্রেন।
দুগ্ধ শর্করা ১০০ গ্রেন = সমান ৩ ভাগে ভাগ করতে হবে।
সময় ১ ঘন্টা = তিনটি পর্যায়ে কাজ।
১ ঘন্টা সমান = ২০ মিনিট + ২০মিনিট +২০ মিনিট।
প্রতি ২০ মিনিট=১০ মিনিট+১০মিনিট।
প্রতি ১০ মিনিট=৬ মিনিট ঘর্ষণ+৩ মিনিট স্প্যাচুলা দ্বারা চাছা+১ মিনিট মিশানো।
১ ঘন্টা সমান = ২০ মিনিট + ২০মিনিট +২০ মিনিট।
প্রতি ২০ মিনিট=১০ মিনিট+১০মিনিট।
প্রতি ১০ মিনিট=৬ মিনিট ঘর্ষণ+৩ মিনিট স্প্যাচুলা দ্বারা চাছা+১ মিনিট মিশানো।
প্রথম পর্যায়ঃ ১গ্রেন ভেষজ ও ১০০ গ্রেন শর্করার তিন ভাগের এক ভাগ মর্টারে নিয়ে পেস্টল দ্বারা সজোরে ও সমান তালে একই ডিরেকশনে ৬ মিনিট ঘর্ষণ করতে হবে। তারপর ৩ মিনিট সময় স্প্যাচুলা দ্বারা ভালভাবে চেছে একত্রিত করতে হবে এবং ১ মিনিট ভালভাবে মিশাতে হবে। এভাবে প্রথম পর্যায়ের প্রথম ১০ মিনিট শেষ হবে।পুনরায় পূর্বের মতো ৬ মিনিট ঘর্ষণ, ৩ মিনিট চাছা,১ মিনিট মিশ্রিত করার পর প্রথম পর্যায়ের(১০+১০) মিনিট শেষ হবে।
দ্বিতীয় পর্যায়ঃ উপরিউক্ত বিচূর্ণের সাথে দ্বিতীয় ১/৩ ভাগ দুগ্ধ শর্করা মিশিয়ে (১০+১০) ২০ মিনিট সময় পূর্বের মতো একই নিয়মে কাজ করতে হবে।
তৃতীয় পর্যায়ঃ দুগ্ধ শর্করার শেষ ১/৩ ভাগ মিশিয়ে পূর্বের ন্যায় একই নিয়মে (১০+১০)২০ মিনিট শেষ করতে হবে।এভাবে তিনটি পর্যায় একঘন্টা কাজ করার পর শততমিক পদ্ধতির ১ম শক্তি বিচূর্ণ আকারে প্রস্তুত হবে।
পঞ্চাশ সহস্রতমিক শক্তি প্রস্তুত করার নিয়ম।
প্রথম স্তর বা প্রথম শক্তির বিচূর্ণঃ মূল ভেষজ পদার্থের ১ ভাগের সাথে ১০০ ভাগ দুগ্ধ শর্করা ( তিনটি পর্যায়ে ১০ ভাগ + ৪০ ভাগ + ৫০ ভাগ ) লইয়া এক ঘন্টাকাল ঘর্ষণ ও মিশ্রণের মাধ্যমে প্রথম শততমিক বিচূর্ণ প্রস্তুত করা হয়।
শক্তি-- ১/১০০ ।
দ্বিতীয় স্তর বা দ্বিতীয় শক্তির বিচূর্ণঃ প্রথম শততমিক বিচূর্ণের ১ ভাগের সাথে ১০০ ভাগ দুগ্ধ শর্করা ( তিনটি পর্যায়ে ১০ ভাগ + ৪০ ভাগ + ৫০ ভাগ ) লইয়া এক ঘন্টাকাল ঘর্ষণ ও মিশ্রণের মাধ্যমে দ্বিতীয় শততমিক বিচূর্ণ প্রস্তুত করা হয়।
শক্তি-- ১/১০০ X ১/১০০ = ১/১০,০০০।
তৃতীয় স্তর বা তৃতীয় শক্তির বিচূর্ণঃ দ্বিতীয় শক্তির বিচূর্ণের ১ ভাগের সাথে ১০০ ভাগ দুগ্ধ শর্করা ( তিনটি পর্যায়ে ১০ ভাগ + ৪০ ভাগ + ৫০ ভাগ ) লইয়া এক ঘন্টাকাল ঘর্ষণ ও মিশ্রণের মাধ্যমে তৃতীয় শততমিক বিচূর্ণ প্রস্তুত করা হয়।
শক্তি-- ১/১০০ X ১/১০০ X ১/১০০ = ১/১০,০০০০০।
চতুর্থ স্তর বা চতুর্থ শক্তির বিচূর্ণ বা তরলে রূপান্তরঃ তৃতীয় শততমিক বা শক্তির বিচূর্ণ হতে ১ ভাগ বা গ্রেন নিয়ে ৫০০ফোঁটা ভেষজবহ (প্রথমে ৪০০ফোঁটা বিশুদ্ধ পানি + ১০০ ফোঁটা ডিসপেনসিং এলকোহল) মিশ্রিত করে তরলে পরিণত হবে। একে নতুন পদ্ধতির বা পঞ্চাশ সহস্রতমিক শক্তির মাতৃশক্তি বলে (The mother potency of new method)।
শক্তি-- ১/১০০ X ১/১০০ X ১/১০০ X ১/৫০০ = ১/৫০০,০০০০০০।
পঞ্চম স্তরঃ এবার চতুর্থ পর্যায়ের মাতৃশক্তির ১ ফোঁটা ও ১০০ ফোঁটা ডিসপেনসিং এলকোহল নির্দিষ্ট বোতলে নিয়ে ১০০ ঝাঁকি দিলে পঞ্চাশ সহস্রতমিক শক্তির M/1 প্রস্তুত হবে।
শক্তি-- ১/১০০ X ১/১০০ X ১/১০০ X ১/৫০০ X ১/১০০ = ১/৫০০০,০০০০০০০।
M/2 শক্তি প্রস্তুতঃ M/1 শক্তির একটি ১০ং অনুবটিকাকে শুকাইয়া ১ ফোঁটা পানিতে দ্রবীভূত করে এর সাথে ১০০ ফোঁটা পিউর এলকোহল নির্দিষ্ট বোতলে নিয়ে ১০০ ঝাঁকি দিলে M/2 শক্তির ঔষধ প্রস্তুত হবে।
পঞ্চাশ সহস্রতমিক রীতির বৈশিষ্ট্য কি?
১. মহাত্মা হ্যানিমান অর্গাননের ৬ষ্ঠ সংস্করণে এই নতুন পদ্ধতির উল্লেখ করিয়াছেন। কিন্তু হ্যানিমান জীবদ্দশায় ইহা প্রকাশিত হয় নাই।
২. এই রীতিতে ১ ভাগ পূর্ববর্তী শক্তির ঔষধের সহিত ৫০ হাজার ভাগ ভেষজবহ মিশ্রিত করিয়া শক্তিকৃত করা হয়।
৩. এই রীতির শক্তিকৃত ঔষধকে I, II, III বা ০১/, ০২/, ০৩/ বা M/1, M/2, M/3 ইত্যাদি চিহ্ন দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
৪. এই রীতির প্রথম শক্তির ঔষধে ৫০০০ কোটি ভাগের ১ ভাগ মূল ঔষধ বিদ্যমান।
গ্লোবিউলস বা বটিকা ও অনুবটিকা কি?
উৎকৃষ্ট বিশুদ্ধ ইক্ষু শর্করা হইতে ইহারা প্রস্তুত হয়। ইহা গোলাকার ও কঠিন। অনুবটিকাগুলি পোস্তাদানার ন্যায় এবং বটিকাগুলি তাহা অপেক্ষা একটু বড়। এইগুলির সহিত হোমিওপ্যাথিক ঔষধ মিশ্রিত করিয়া ব্যবহার করা হয়। ইহাদিগকে ৫ নম্বর হইতে ৯০ নম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন নম্বরে পৃথকভাবে সনাক্ত করা হয়। আমাদের দেশে ২০ নম্বর হইতে ৪০ নম্বর পর্যন্ত অনুবটিকাগুলিই অধিক ব্যবহৃত হয়।
গ্লোবিউলস বা বটিকা ও অনুবটিকা কি নম্বরীকরণ কিভাবে করা হয়?
বটিকা ও অনুবটিকা বিভিন্ন সাইজের হইয়া থাকে। ইহাদিগকে ৫ নম্বর হইতে ৯০ নম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন নম্বরে পৃথকভাবে সনাক্ত করা হয়। নম্বরগুলি হইল ৫, ১০, ১৫, ২০, ২৫, ৩০, ৪০, ৫০, ৬০, ৭০, ৮০, ৯০। মিলিমিটার স্কেল দ্ধারা ইহার নম্বরীকরণ সনাক্ত করা হয়। দশটি সম-আকৃতির বটিকা ও অনুবটিকা এক লাইনে পশাপাশি একটার সাথে আর একটি লাগালাগি করিয়া মিলিমিটার স্কেল দ্ধারা মাপিতে হয়। দশটি বটিকার দৈর্ঘ্য যত মিলিমিটার হইবে, বটিকার নম্বর ও তত হইবে। অর্থাৎ ১০টি বটিকার দৈর্ঘ্য যদি ৩০ মিলিমিটার হয়, তাহা হইলে বটিকার নম্বর হইবে ৩০।
Related Topics Click Here::
- চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাস- History of Medicine [ প্রথম অধ্যায় ]
- Definition of Homeopathy- হোমিওপ্যাথির নীতিমালা কাকে বলে ? [দ্বিতীয় অধ্যায়]
- হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নীতিমালা।
- ঔষধ প্রস্তুতকরণ ও শক্তিকরণ। নবম অধ্যায়।
- ভেষজ পরীক্ষণ এবং মাত্রাতত্ত্ব- Drug Proving and Posology.
- রোগ সম্বন্ধে হোমিও মতবাদ।
- Short question of homeopathy principles.
- মায়াজম পরিচিতি।
- হোমিওপ্যাথিক ওষুধ প্রয়োগ পদ্ধতি।
- ঔষধের শক্তিকরণ- Drug Potentization.
- হোমিওপ্যাথির নিয়মনীতি।
- হোমিওপ্যাথির নিয়মনীতি_পরীক্ষার সাজেশন।
0 Comments: