Miasm
মায়াজম পরিচিতি:
Miasm আক্রান্ত রোগীই চিররোগ। তাই এ সংশ্লিষ্ট রোগী চিকিৎসায় মায়াজম সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারনা থাকা অবশ্যই দরকার/প্রয়োজন।

উল্লেখ্য যে, কেবল মাত্র, প্রাকৃতিক ও সদৃশ বিধান “হোমিওপ্যাথি” চিকিৎসায়- ই Miasm ধ্বংস করতে পারে। অনেকের ধারণা সোরা একটা মায়াজম, যার দ্বারা চিররোগের আটভাগের সাতভাগ সংঘটিত হয়। কিন্তু এখানেই আমাদের মারাত্নক ভুল। সোরা মায়াজম নয়, একটা মায়াজমেটিক অবস্থা যা সোরিক মায়াজমের দ্বারা সৃষ্টি হয়। সিফিলিস ও সাইকোসিস মায়াজম নয় মায়াজমেটিক অবস্থা, যা সিফিলিটিক ও সাইকোটিক মায়াজম দ্বারা সৃষ্ট হয়। একটা রোগাবস্থা এবং তার কারণ এক নয়।টিউবারকুলোসিস টিউবারকুলার কখনই এক হতে পারে না। দ্বিতীয়টি হলো কারণ এবং প্রথমটি হলো রোগ।

মায়াজম কি?
মায়াজম হল হোমিওপ্যাথির গোড়ার কথা এবং এই গোড়ার কথাটি গোড়া থেকে বুঝে না নিলে এবং তদ্রুপ ব্যবস্থাপত্র অজানা থাকলে চিকিৎসকের সকল শ্রম যে পন্ডশ্রমে পরিণত হবে তাতে সন্দেহ নেই।

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিধান মতে, মায়াজম হল রোগের মূল কারণ এবং জীবাণু গুলো হল উত্তেজক কারণ।যে সকল প্রাকৃতিক অদৃশ্য কারণসমূহ হইতে রোগ উৎপত্তি হয়, সে সকল কারণ সমূহকে মায়াজম বলে।

মহাত্মা হ্যানিম্যান বলেন, “যাবতীয় রোগ মায়াজমের অশুভ প্রভাবে সৃষ্টি হয়।” মায়াজম শব্দের অর্থ উপবিষ, কলুষ, পুতিবাষ্প, ম্যালেরিয়ার বিষ প্রভৃতি। যাবতীয় রোগের কারণই হল এই মায়াজম। তরুণ পীড়া তরুণ মায়াজমের অশুভ প্রভাবে এবং চিররোগ চির মায়াজমের অশুভ প্রভাবে সৃষ্টি হয়। ইহা প্রাকৃতিক রোগ সৃষ্টিকারী দানব।

হ্যানিম্যান বলেছেন, চিররোগ সৃষ্টির মূল কারণ হইল তিনটি চিররোগবীজ। ইহাদের মধ্যে সোরা হইল আদি রোগ বীজ। সকল রোগের মূল কারণ হইল সোরা।

হ্যানিম্যান বলেছেন, বংশ পরস্পরের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানব দেহের মধ্যে এই সোরা মায়াজম কল্পনাতীতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন অসংখ্য প্রকারের বিকৃতি, ক্ষত, বিশৃঙ্খলা ও যন্ত্রণার প্রতিমূর্তি রুপে অন্ত পীড়ায় সৃষ্টি করে থাকে। অপরদিকে দূষিত সঙ্গমের মাধ্যমে সাইকোসিস ও সিফিলিস মায়াজম অর্জিত হয়। এই দিক দিয়া চিন্তা করিলে মায়াজমকে আমরা অর্জিত এবং বংশানুক্রমিক উভয়ই বলতে পারি

সুতরাং মায়াজম হচ্ছে এক ধরনের গতিময় দূষণ মাধ্যম যাহা জীব দেহের মধ্যে বিভিন্ন অঙ্গে একবার প্রবিষ্ট হলে জীবনীশক্তির উপর প্রভুত্ব করে, ব্যক্তিকে সার্বিকভাবে এমনিধারায় দূষিত করে যার পিছনে একটি স্থায়ী রোগজ অবস্থা স্থাপন করে যাহা সম্পূর্ণ রুপে মায়াজম বিরোধী প্রতিকারক দ্বারা দূরীভূত না হলে রোগীর সারাজীবন ব্যাপী বিরাজ করবে এবং বংশপরস্পরায় প্রবাহমান থাকে।

কোন রোগ স্থুল ঔষধ প্রয়োগে বা অসম বিধানে চিকিৎসা করায় তার দ্বারা চাপা পড়ে শক্তিশালী রোগ বীজ নামে দেহাভ্যন্তরে অবস্থান করে। এটাই রোগ জীবানু বা উপবিশ (Miasm)। এই উপবিষই (Miasm) যা বংশ পরস্পরায় মানব দেহে চিরস্থায়ী রুপ লাভ করে।

মায়াজম হচ্ছে এমন কিছু যা একবার মানব দেহে ঢুকলে এবং সুচিকিৎসিত না হলে এমন একটা অবস্থার সৃষ্টি করে, যা সারা জীবন ধরে চলতে থাকে এবং সন্তান সন্ততির মধ্যেও তার ফলজনিত অস্বাভাবিক অবস্থার চিহ্ন প্রায়শই সুপ্ত অবস্থায় বর্তমান থাকে।
Miasm
মায়াজম অর্জিত না বংশানুক্রমিক -- হ্যানিম্যানের মতে মায়াজম বা  অশুভ প্রভাবের ফলে যাবতীয় চিররোগ সৃষ্টি হয়। লক্ষ্যণীয় যে আদিরোগবীজ সোরা মায়াজম আদিকাল হইতে মানব সমাজে বংশানুক্রমে বিস্তৃতি লাভ করিয়াছে। অপরদিকে দূষিত সঙ্গমের মাধ্যমে সাইকোসিস ও সিফিলিস মায়াজম অর্জিত হয়। এইদিক দিয়া চিন্তা করিলে মায়াজমকে আমরা অর্জিত এবং বংশানুক্রমিক উভয়ই বলিতে পারি। 

হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক জার্মানীর ডাঃ স্যামুয়েল হ্যানিম্যান (এম,ডি) এর মতানুসারে মুসা (আঃ) যুগ হতে সোরা এর আবিভাব। তিনি বলেন, মানুষের পাপের প্রায়শ্চিক্তই  সোরা বা কুন্ডয়ন। আর সোরার বহিঃ প্রকাশ হলো চুলকানি।

মায়াজম (Miasm) প্রধানত তিন প্রকার।

Psora: বা কুন্ডয়ন অসম বিধানে চিকিৎসা করায় তা উপবিষ নামে দেহাভ্যন্তরে লুপ্ত অবস্থায় সজীব থাকে। এই সজীব Psora বীজানুই Psoric Miasm.

Sycosis: দেহে অবস্থান নিলে বাহ্যিক ভাবে আচিল বা টিউমার প্রকাশ করে, তা অসম বিধানে চিকিৎসা করলে উপবিষ সৃষ্টি হয়ে দেহে চিরস্থায়ী ভাবে অবস্থান নেয়। Sycosis এর উপবিষই Sycosis Miasm.

Syphilis: যৌন ক্ষত অসম বিধানে চিকিৎসায় চিরস্থায়ী সিফিলিস উপবিষ নামে বীজানু দেহে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ পায়। এই Syphilis উপবিষই Syphilitic Miasm.

Tuberculosis: উপরে উল্লেখিত এই তিন ধরনের Miasm- ই যখন উত্তরসূরীর দেহে স্থানান্তরিত হয় তখন তাকে Tuberculosis বলা হয়।

Vaccin Miasm: সভ্য সমাজে আমরা আরও একটি মানব সৃষ্ট আর এক প্রকার মায়াজম দেখতে পাই। আর তা হলো বিভিন্ন Vaccin Miasm. অর্থাৎ টীকা ও ইনজেকশন মানবদেহে পুশ করার পর যে Miasm এর সৃষ্টি হয়, তাই Vaccin Miasm.

হোমিওপ্যাথি মেডিকেল সায়েন্স এর জনক ডাঃ স্যামুয়েল হ্যানিম্যান (এম,ডি) অর্গানন বই এর ৭৮ নং সূত্র অনুসারে Miasm আক্রান্ত রোগীই চিররোগ। তাই এ সংশ্লিষ্ট রোগী চিকিৎসায় মায়াজম সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারনা থাকা অবশ্যই দরকার / প্রয়োজন। উল্লেখ্য যে, কেবল মাত্র, প্রাকৃতিক ও সদৃশ বিধান "হোমিওপ্যাথি" চিকিৎসায়ই  Miasm ধ্বংস করতে পারে।

মায়াজম হচ্ছে এমন কিছু যা একবার মানব দেহে ঢুকলে এবং সুচিকিৎসিত না হলে এমন একটা অবস্থার সৃষ্টি করে, যা সারা জীবন ধরে চলতে থাকে এবং সন্তান সন্ততির মধ্যেও তার ফলজনিত অস্বাভাবিক অবস্থার চিহ্ন প্রায়শই সুপ্ত অবস্থায় বর্তমান থাকে

অনেকের ধারণা সোরা একটা মায়াজম, যার দ্বারা চির রোগের আট ভাগের সাত ভাগ সংঘটিত হয়। কিন্তু এখানেই আমাদের মারাত্নক ভুল। সোরা মায়াজম নয়, একটা মায়াজমেটিক অবস্থা যা সোরিক মায়াজমের দ্বারা সৃষ্টি হয়।

সিফিলিস ও সাইকোসিস মায়াজম নয় মায়াজমেটিক অবস্থা, যা সিফিলিটিক ও সাইকোটিক মায়াজম দ্বারা সৃষ্ট হয়। একটা রোগাবস্থা এবং তার কারণ এক নয়। টিউবার-কুলোসিস ও টিউবারকুলার ব্যাসিলাই কখনই এক হতে পারে না। দ্বিতীয়টি হলো কারণ এবং প্রথমটি হলো রোগ।

মায়াজম (Miasm): কোন রোগ স্থুল ঔষধ প্রয়োগে বা অসম বিধানে চিকিৎসা করায় তার দ্বারা চাপা পড়ে শক্তিশালী রোগ বীজ নামে দেহাভ্যন্তরে অবস্থান করে। এটাই রোগ-জীবানু বা উপবিষ (Miasm)। এই উপবিষই (Miasm) যা বংশ পরস্পরায় মানব দেহে চিরস্থায়ী রুপ লাভ করে।

মায়াজম ক্ষেত্রে আমরা কিছু ভুল করি, যেমন-
১. সোরাকে আমরা মায়াজম বলি, প্রকৃত পক্ষে সোরা কিন্তু মায়াজম নয়। একটা মায়াজমেটিক অবস্থা যা সোরিক মায়াজমের দ্বারা সৃষ্টি হয়।
            🌱প্রকৃত পক্ষে মায়াজমটি হলো সোরিক।

২. সিফিলিসকে আমরা মায়াজম বলি, প্রকৃত পক্ষে সিফিলিস কিন্তু মায়াজম নয়। একটা মায়াজমেটিক অবস্থা যা সিফিলিটিক মায়াজম দ্বারা সৃষ্টি হয়।
            🌱প্রকৃত পক্ষে মায়াজমটি হলো সিফিলিটিক।  

৩. সাইকোসিসকে আমরা মায়াজম বলি, প্রকৃত পক্ষে সাইকোসিস মায়াজম নয়। এটা মায়াজমেটিক অবস্থা, যা সাইকোটিক মায়াজম দ্বারা সৃষ্ট হয়।
            🌱প্রকৃত পক্ষে মায়াজমটি হলো সাইকোটিক।

৪. টিউবারকুলোসিসকে আমরা মায়াজম বলি, প্রকৃত পক্ষে টিউবারকুলোসিস মায়াজম নয়। এটা মায়াজমেটিক অবস্থা, যা টিউবারকুলার মায়াজম দ্বারা সৃষ্ট হয়। 
            🌱প্রকৃত পক্ষে মায়াজমটি হলো টিউবারকুলার।

ডা. অ্যালেন ষষ্ঠ সংস্করণ পড়েন নাই। তবুও ১৯ নং সূত্রের ব্যাখ্যা মায়াজমের দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রাঞ্জলভাবে দিয়েছেন। ডা. অ্যালেন বললেন,

“In other words; disease is but the influence of some subversive force, acting in conjunction with the life force, subverting the action and changing the physiological momentum.”

ডা. অ্যালেনের এই বক্তব্যটি বোঝা বেশ কঠিন। সহজ করে কিছু বলি। ধরুন একজন ব্যক্তি মুখের ঘা (Ulcer) ও উচ্চরক্তচাপ (High pressure) নামক অবস্থাতে ভুগছেন। অর্থডক্স স্কুলের নিয়ম অনুসারে, এটি ভিন্ন রোগ সুতরাং রোগের অবস্থানও ভিন্ন। ডা. অ্যালেন দৃষ্টিভঙ্গিতে দুটি রোগই একই রোগ-সৃজনী শক্তির দ্বারা সৃষ্ট। এখানে সোরা ও সিফিলিসে মিলিত আক্রমণের ফসল। আসলে ব্যক্তি স্বতন্ত্রতার জন্য ভিন্ন ভিন্ন প্রকাশ হলেও দুটোই একই মায়াজমের ক্রিয়ার ভিন্ন ভিন্ন রূপ। তাই রূপের মোহে অন্ধ না হয়ে মায়াজমের এই স্বরূপটি উপলব্ধি করতে পারলে রোগীকে সহজেই আরোগ্য করতে পারবো। মায়াজম নাশক ওষুধ দিলে মায়াজমের প্রভাব কেটে গেলেই প্রাণশক্তির প্রভাবে আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসবে।

সোরা মায়াজম (Psora):
পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা প্রাচীন, সর্বাপেক্ষা ব্যাপক এবং মারাত্বক মায়াজম ঘটিত চিরব্যাধি হইল সোরা। যুগ যুগ ধরিয়া এই সোরা মানব সমাজে অজস্র রকমের বিচিত্র চির ও অচির পীড়ার জনকরূপে ক্রিয়াশীল রহিয়াছে। যাবতীয় চির ও অচির রোগ আক্রমনের প্রবণতার মুলে রহিয়াছে চিরমায়াজম সোরা। সোরার প্রথম পরিচয় মানব মনে। অপ্রয়োজনীয় সামগ্রী পাইবার ব্যাকুলতাপূর্ণ কামনা বা মানসিক চঞ্চলতাই সোরার আদি বা প্রাথমিক চিত্র।

সোরা শব্দের ব্যুৎপওিগত অর্থ হইল খোস পাঁচড়া, চুলকানি প্রভৃতি চর্মরোগ, স্ক্যাবিস, সোরিয়াসিস কুষ্ঠ ইত্যাদি এবং চর্মরোগ জীবাণু। ডাঃরবার্টসের মতে সোরা হিব্রুু শব্দ Tsoral হতে উৎপন্ন হয়েছে এবং পরবর্তীকালে গ্রীক ও ল্যাটিন ভাষার মধ্য দিয়া রূপান্তরিত হইয়া Psora হইয়েছে। পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা প্রাচীন, সর্বাপেক্ষা ব্যাপক মায়াজম গঠিত চিররোগ হল সোরা। বাবা আদম ও মা হাওয়া এর গন্ধম খাওয়াটাই হল সোরা।

পবিত্র মনে সোরার সুপ্তাবস্থা ভীতি আশংকা, স্বার্থপরতা, শ্রমবিমুখতা, অবসাদ, রুক্ষ্র মেজাজ, পরশ্রীকাতরতা, ভন্ডামী এবং যাবতীয় নোংরামী স্বভাব সৃষ্টি করে। নীতি ভঙ্গের সুচনা মনোমধ্যে অংকুরিত হয়ে দেহে আসিয়া তাহা পল্লবিত ও কুসুমিত হয়।

হ্যানিম্যান বলিয়াছেন আটের সাত অংশ তরুন রোগের কারনই সোরা এবং তরুন রোগসমূহ পুরাতন ও সুপ্তদোষ সমূহেরই সাময়িক উচছ্বাস ব্যতীত আর কিছু নয়। সোরা দোষের প্রভাবে মানুষের ইচছা, অনিচছা, রোগের হ্রাস-বৃদ্ধির রুপ বা প্রকৃতি এবং শরীরের বিভিন্ন যন্ত্রসমূহে বিকশিত লক্ষণসমূহের সহিত ঔষধসমূহের লক্ষণাবলীর সাদৃশ্য মেটিরিয়া মেডিকা পাঠকালে লক্ষ্য করা একান্ত আবশ্যক

Miasm


দেখা গেছে, যদি একিউট (acute) রোগগুলো সুনির্বাচিত ঔষধ প্রয়োগের ফলে সম্পূর্ণভাবে আরোগ্য হয়ে যায় কিন্তু চিররোগ (Chronic) প্রকৃতির রোগগুলো সবসময় কম বেশী বিভিন্ন নতুন লক্ষণ নিয়ে ঘুরে ফিরে আসে এমন একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।

হোমিওপ্যাথি আবিষ্কারের ৩০ বছর পর (১৭৯০-১৮২০)এই অসফলতা দৃষ্টিগোচর হয়। হ্যানিম্যান কে এ বিষয়টি গভীরভাবে ভাবিয়ে তুলে। তিনি চিররোগের কারণ অনুসন্ধান মহান সত্যের প্রমাণ নির্ধারণ, সংগ্রহ এবং সোরা( psora) বিরোধী ঔষধ আবিষ্কারের জন্য বারো বছর অতিবাহিত করেছেন।

হ্যানিম্যানের মতেঃ

মানুষের সকল রোগের ১৬ আনার ১৪ আনা সোরার জন্য দায়ী।বাকি ২ আনা সিফিলিস ও সাইকোসিস এর জন্য হয়ে থাকে। 

হ্যানিম্যান ক্রনিক ডিজিজ গ্রন্থে তিনি লিখেছেন সোরার মায়াজম সোরা ভেসিকেল (Psora vesicle) এর রসের মধ্যেই থাকে। কোন প্রকারে ঐ রস কোন সুস্থ লোকের চামড়ায় লাগলে সোরা শরীর অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। যেদিন এই রস লাগবে তার ছয়, আট, দশ বা চৌদ্দ দিন পরে লোকটির প্রথমে শীত শীত ভাব লাগবে। সন্ধ্যার দিকে শরীর খুব গরম এবং জ্বরজ্বর লাগবে, সারারাত্রি এইভাবটা থাকবে, ভোরবেলার দিকে ঘাম দেবে এবং পরদিন সকালে উদ্ভেদ (Itch vesicle) দেখা দেবে। কাজেই দেখা গেল সোরা রোগ সংক্রমিত হতে কিছু সময় লাগে- স্পর্শমাত্রই সংক্রমিত হয় না। তাছাড়া মন আক্রান্ত হয়ে বা শ্বাসক্রিয়ার মাধ্যমে হাওয়া থেকে এই রোগ দেহে প্রবেশ করে না।

সোরার মানসিক লক্ষন -  দার্শনিকের ন্যায় সর্বদা চিন্তা করে এবং অপরিস্কার, অপরিচ্ছন্ন, অগোছাল থাকার প্রকৃতি। ছেঁরা কাঁথায় শুয়ে রাজা হবার স্বপ্ন দেখে। ভীতু, কৃপন, স্বার্থপর, অলস্যপ্রিয়, ব্যস্তবাগীশ। সর্বদা অস্থির একস্থানে স্থির থাকতে পারে না। ধপাস করে এক স্থানে বসে পরে। ঈর্ষাপরায়ন, বকধার্মিক, হটকারিতায় পটু এবং হুকুম দেওয়া তার নৈমিওিক স্বভাব। গোসলে অনিচ্ছা এবং নিজের শরীরে দুর্গন্ধ নিজের নাকে শুকিয়ে দেখা তার অভ্যাস। (নাসিকা স্রাব, কানে গন্ধ ইত্যাদি)।

সোরার সার্বদৈহিক লক্ষণ  -   যান্ত্রিক কোন পরিবর্তন না ঘটিয়ে স্নায়ুতন্ত্রের উপর ক্রিয়া করে মানসিক এবং শারীরিক বিপর্যয় সৃষ্টি করে থাকে। সমস্ত শরীরে জ্বালা বিশেষতঃ হাত-পা ও মাথার তালুতে। প্রাতঃকালে মলত্যাগের বেগ এবং মধ্যাহেৃর পুর্বে প্রচন্ড ক্ষুধার অনুভুতি। প্রায় সবসময় খোঁস-পাচড়া লেগেই থাকে। গোছলে অনিচ্ছা ও দুগ্ধে অরুচি। প্রচন্ড শীতে মাথা ও পা ঢেকে ঘুমাতে পাড়ে না। ঠোট, নাসারন্ধ ও শরীরের বহির্গমনের ছিদ্রপথগুলি রক্তিম আকার ধারণ করে।

সোরার কথা ও কাজকর্মের প্রকৃতি -  সোরা রোগী সর্বদা অস্থির, চঞ্চল। কোন কাজ কর্মের মধ্যে স্থিরতা নাই। সব কিছুর মধ্যে তড়িঘড়ি ভাব, কথাবর্তা, কাজ কর্ম, খাওয়া দাওয়া, উঠা বসা, এমন কি ঘুমের মধ্যেও স্থির থাকতে পারে না। গান বাজনা খুব পছন্দ করে।

সোরার দোষসৃষ্টির কারণ -   দুঃশ্চিন্তা হতে চর্ম রোগের সৃস্টি হতে পারে। চর্ম রোগ চাপা পড়েও সোরার দোষ সৃষ্টি হতে পারে। পূর্ব পুরুষ হতেও সোরার আবির্ভাব হতে পারে। আসলে পৃথিবী সৃষ্টির পর ধেকে সোরার জন্ম।

সোরার জিহ্বার স্বাদ-   মিষ্টি, টক ও বিস্বাদ তিক্ত হয়।

সোরার ক্ষুধার অবস্থা -  অত্যাধিক ক্ষুধা, রাতে উঠে খেতে চায়। আহারের পরেই ক্ষুধা, ক্ষুধার জন্য অস্থির, শুন্যতাবোধ, বিশেষ করে সকাল ১০-১১ টার সময়।

সোরার খাদ্য পছন্দ অপছন্দ ও অসহ্য --  মিষ্টি, টক খেতে ইচ্ছে করে, গরম খাবার খেলে ভাল থাকে। গর্ভাবস্থায় অস্বাবাভিক খাদ্য খেতে চায়। তৈলাক্ত খাবার খেতে চায় কিন্তু সহ্য হয় না, দুধ খেতে চায় না এবং সহ্যও হয় না।

সোরার শেষ আক্রমণের স্থান -  স্নায়ূ মন্ডলী, চর্ম, মন, মস্তিস্ক ও পরিপাকতন্ত্র।

সোরার ঘুমের অবস্থা -  ঘুম পাতলা, উঁচু বালিশে শুইতে চায়, সাধারনত কপালে হাত রেখে ঘুমায়।

সোরার স্বপ্নের অবস্থা-   স্বপ্নের মধ্যে গান গায়, বোবায় ধরে, জীব জন্তু, ভুত-প্রেত মৃত ব্যক্তি, মলমুত্র ত্যাগ ও আগুন ইত্যাদি স্বপ্ন দেখে।

সোরার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ -  হস্ত পদের তলা গরম, শুস্ক ও জ¦ালা যুক্ত, ব্যথা বেদনা থাকে। জ¦লা বিশেষত হাত, পায়ের তালু এবং মাথায়। অঙ্গ প্রত্যঙ্গে ব্যথা, বেদনা নড়াচড়ায় উপশম বোধ করে।

সোরার নখসমূহ -   নখ বড় করে রাখে। তার নোংরা স্বভাবের জন্য ময়লা জমে থাকে।

সোরার চর্মরোগ প্রবণতা -  চর্মে সাধারনতঃ পুঁজ, জন্মে না অত্যন্ত সুখানুভুতীয়ুক্ত চুলকানীর পর জ্বালা। স্বল্প পুঁজ, চর্ম শুস্ক, সহজে ক্ষত শুকিয়ে যায়। সোরার মামড়ী পাতলা, সরু, সুক্ষè, ক্ষুদ্র, চুলকানীতে জ্বালা থাকে। পানিতে এবং বিছানার গড়মে বৃদ্ধি দেখাযায়। চর্মরোগ প্রায়ই লেগে থাকে।

সোরার ঘর্ম প্রবণতা -  সোরর রোগী ঘর্মে উপশম বোধ কওে, ঘুমের পর, আহারের পর ঘর্ম এবং দুর্গন্ধ থাকে।

সোরার দৈহিক গঠন ও আকৃতি -  ঘাড়টি কুঁজ, উস্ক, শুস্ক চেহারা, অপরিস্কার মুখমন্ডল, চুলগুলি আগোছাল ও অকালে চুলে পাক ধরে, মুখ মন্ডল অরক্তিমাভ, চর্ম রোগের প্রাবল্য, শরীরের বহির্গমনের ছিদ্রপথগুলি রক্তিম যেমন ঠোট, নাসারন্দ্র ও মলদ্বার।

সোরার হ্রাস-বৃদ্ধি -  প্রাতঃ কালে, বেলা ১০-১১টার সময় হতে মধ্য রাত্রি পর্যন্ত এবং সুর্যেও তাপে বৃদ্ধি দেখা যায়। অগ্নিতাপে রোগের উপশম হয়, পর্যাক্রমে বা নির্দিষ্ট সময় অন্তর রোগের আক্রমণ সোরা দোষ লক্ষণ।

সোরার রোগ সমূহ -  মানসিক দুঃশ্চিন্তা ও কু-মনয়ন হতে কু-প্রবৃতি, চুলকানী, বিসর্গ, পক্ষাঘাত, হিষ্টিরিয়া, গর্ভপাত, এপেন্ডিসাইটিস, বেরিবেরি, রক্তস্রাব, বসন্ত, কলেরা, উদরাময়, খুসকী, লিউকেরিয়া, সোরাইসিস, সায়েটিকা, চর্মরোগ প্রবণতা ইত্যাদি।

সোরার ঔষধ সমূহ -  সালফার, সোরিনাম, সিপিয়া, সাইলি, এলোমি, ল্যাক, আর্স, লাইকো, ক্যাপসি, নেটমিউর, সেলিনি, ডালকা, ক্রোটেল, নেটসালফ, এমন মিউর, জিঙ্ক, এলো, হিপার, আর্স সালফ, এনাকার্ড, এসিড ফস, এসিড ফ্লোর, ফসফর, গ্রাফা, হাইড্রা, ক্যা-কার্ব ইত্যাদি।

সেরা (ঘাটতি) 
১. সোরা দৈহিক গঠনগত কোন পরিবর্তন সাধন না করিয়া বরং ক্রিয়াগত পরিবর্তন করে ।
২. চুল- শুঙ্ক, কর্কশ,খুশকি যুক্ত
৩. চর্ম - শুস্ক,কর্কশ
৪. নখ- শুস্ক,কর্কশ
৫. ঠোঁট- শুস্ক,সাইয়ানোসিসের মতো নীলাভ
৬. মুখমণ্ডল - নীলাভ মুখমণ্ডল
৭. মুখভঙ্গি - উদ্বিগ্ন,নার্ভাস, ভীতু শঙ্কিত
৮. পোশাক- হালকা রংয়ের পোশাক পরে।

সোরার রোগীর ধাতুগত লক্ষণ:
১. সর্বদা ভীতিপূর্ণ, পরিপূর্ণ, অবসাদগ্রস্ত, শ্রমবিমুখ।
২. মেজাজ খিটখিটে সামান্য মতের অমিল হলে ক্ষিপ্ত হয়।
৩. স্বার্থপরতা কিন্তু নাটকীয় উদারতা দেখায়।  
৪. অস্বাভাবিক ক্ষুধা, খেলে আবার ক্ষুধা লেগে যায়।
৫. অসম্ভব চুলকানি, চুলকানোর পর জ্বালা।
৬. হাত পায়ের তলা জ্বলে।
৭. দেহের বর্র্জ নির্গমন পথগুলি লাল বর্ণের।
৮. যে কোন স্রাব নির্গমনে আরাম বোধ।
৯. দাঁতে, মাড়ীতে ময়লা জমে।
১০. কেবলই শুয়ে থাকতে চায়।
১১. নোংরামি পছন্দ।
১২. স্নয়ুকেন্দ্রে প্রবল বিস্তার করে কিন্তু যান্ত্রিক পরিবর্তন ঘটে না।
১৩. যে কোন সময় রোগাক্রমন বা বৃদ্ধি ।
১৪. চোখে নানা রং দেখে ও দৃষ্টিভ্রম হয়।

সোরার তিনটি ধাপঃ
  1. Primary
  2. Latent
  3. Secondary
প্রাথমিক ধাপ-

একটি জীবানু যখন পরিপূর্ণ বিকাশ লাভ করে তখন চাপড়ার উপরে সেটা ফুস্কুড়ি মতো দেখা যায়।
সোরার প্রকাশকাল ৬-১৪ দিন। আর এ সময়কাল অতিবাহিত হওয়ার পরে বিকালের দিকে শীত শীত লাগে রাতে তাপ ও ঘাম দিয়ে ফুস্কুড়ি আকারে দেখা যায়। এগুলোতে প্রথম অবস্থায় নখ দিয়ে জোড়ে ঘষতে ভালো লাগে এতে উপশম মনে হয় কিন্তু পরে জ্বলতে শুরু করে। সন্ধ্যা থেকে মাঝরাত পর্যন্ত চুলকানি হয় আরও বেশি অসহ্য করে তুলে। প্রথমে জলের মতো রস বের হয় পরে পুঁজে পরিণত হয় এগুলো।এ পর্যায়ে রোগীকে সুনির্বাচিত ঔষধ সেবন করা হলে রোগী সুস্থ হয়ে যায়।

দ্বিতীয় ধাপ -সুপ্ত সোরা ( Latent Psora)-

উপযুক্ত ঔষধ নির্বাচন না করে যদি সোরার প্রাথমিক দশাকে আরও ব্যাপক আকার ধারণ করার সুযোগ দেওয়া হয় বা বাহ্যিকভাবে মলম দিয়ে চাপা দেওয়া হয় তাহলে সেটা সুপ্ত অবস্থা প্রাপ্ত হয় যা পরবর্তীতে ভয়ংকর আকার ধারণ করে। হুপিং কাশি, হাম,আগুনে পোড়া, মানসিক আঘাত, ক্ষত,আঘাতজনিত কোন অসুস্থতায় যদি সোরা প্রকট হয়ে ওঠে তখন সেটা Chronic disease অবস্থা প্রকাশ করে।

সুপ্ত সোরার কয়েকটি লক্ষণঃ (Symptoms of Latent Psora)-

(১) মানসিক দিক-থেকে খুবই সচেতন, ভয়, দুশ্চিন্তা ও দুর্ভাবনাগ্রস্ত এবং অল্পেতেই রেগে যায়।
(২) অল্পেতে এবং সহজে দৈহিক ও মানসিক অবসাদ। 
(৩) হাত ও পায়ের তলায় জ্বালা ও ঘাম। 
(৪) ঘুমের মধ্যে পেশীসমূহ লাফান। 
(৫) শীতকাতরতা ও অল্পেতেই ঠান্ডা লাগা। 
(6) ঠান্ডা অপছন্দ এবং ভিতরে ও বাইরে গরম পছন্দ করা। 
(৭) মাঝে মাঝে নাক দিয়ে রক্ত পড়া।
(৮) ঘুমের মাঝে দাঁত কাটা এবং মলের সঙ্গে বড় কৃমি (Round worms) বের হওয়া। 
(৯) ঠোট, নাসারন্ধ্র এবং শরীরের বহির্গমনের ছিদ্রপথগুলির লালবর্ণ ধারণ করা।
(১০) মিষ্টি, টক, ভাজা এবং চর্বিজাতীয় খাদ্য পছন্দ। 
(১১) ঘুমের মাঝে অস্থিরতা। 
(১২) স্নানে অনিচ্ছা এবং অপরিস্কার ও নোংরা থাকার ইচ্ছা। 
(১৩) সারাদিন ও রাত্রি শুয়ে থাকার ইচ্ছা এবং তাতে ভাল অনুভব করা। 
(১৪) প্রচন্ড ক্ষুধা, বিশেষ করে সকালে।
(১৫) স্বাভাবিক স্রাব নির্গত হলে আরাম পাওয়া-যথা ঘাম, প্রস্রাব, মাসিকের রক্তস্রাব ইত্যাদি।
(১৬) ঘুমাবার সময় মাথায় ঘাম হওয়া। 
(১৭) মাঝে মাঝে চোখ, মুখ, নাক গরম হওয়া। 
(১৮) হামেশায় গলায় কফ জমা হওয়া।
(১৯ বুদ্বিমান_নানা কল্পনাপ্রবণ কিন্তু করে দেখানোর প্রবণতা নেই।


সোরার তৃতীয় ধাপ-- 
Secondary symptoms of Psora
  • মাথা -- মাথায় ঘাম হয় রাতে শোবার পর। মাথার চুল উঠে যায়।প্রচুর খুশকি হয়।
  • চোখ -- চোখে প্রায় প্রদাহ হয়।
  • মুখ -- মুখ ফ্যাকাসে, চামড়া কুঁচকানো, হঠাৎ করেই মুখ লাল হয়ে উঠে, ভয়েও এমন হয়না।
  • জিহ্বা --সাদা ও ফ্যাকাসে।জিহ্বায় ফুস্কুড়ি।
  • গলা -- ঘন ঘন স্বর ভঙ্গ।গলায় চুলের মতো কিছু লেগে আছে এমন অনুভুতি।
  • বুকে -- ঘন ঘন শ্বাসকষ্ট
  • পেট -- খালি খালি অনুভুতি
  • হাত ও পা -- ঠাণ্ডা বা হাতের তালুতে ঘাম। কাজ করতে গেলে কবজ্বিতে কট কট শব্দ হয়।
  • পায়খানা -- এক দিন থেকে কয়েকদিন পরপর পায়খানা হয়।
  • প্রসাব -- ঘন ঘন।
  • উপশম -- বিশ্রামে যন্ত্রণা উপসর্গগুলো ফিরে আসে যখন চলাফেরা করা হয়।
(১) মাথাঘোরা- চলাফেরায় বৃদ্ধি। 
(২) দীর্ঘদিনের পুরাতন মাথার যন্ত্রণা-যথা মাইগ্রেন। 
(৩) মাথার খুসকি ও মরামাস। 
(৪) কান দিয়ে পুঁজ পড়া (Otorrhoea)। 
(৫) কানের মধ্যে ভো ভো করা। 
(৬) নাক দিয়ে রক্ত পড়া এবং নাকের পলিপাস হওয়া । 
(৭) সর্বপ্রকার চর্মরোগ। 
(৮) গলায় গ্রন্থি বৃদ্ধি হওয়া এবং গলা ব্যথা। 
(৯) অসহ্য দাঁতের যন্ত্রণা। 
(১০) অম্ল ও ডিসপেপসিয়ার যাবতীয় লক্ষণ। 
(১১) বমনেচ্ছা, বমি এবং হিক্কা। 
(১২) পাকস্থলী এবং যকৃতে যন্ত্রণা। 
(১৩) অর্শ, মলদ্বারে ফিসচুলা এবং রেকটাল পলিপ। 
(১৪) মধুমেহ (ডায়াবেটিস মেলিটাস)। 
(১৫) বিছানায় প্রস্রাব করা।
(১৬) স্বপ্নদোষ, সহজে বীর্যস্খলন ও ধ্বজভঙ্গ, পায়খানা বা প্রস্রাব করার সময় প্রস্টেটিক তরল (Fluid) নির্গত হওয়া ইত্যাদি।
(১৭) সব রকমের ঋতুস্রাব সংক্রান্ত- অস্বাভাবিকতা এবং বন্ধ্যাত্ব।
(১৮) যোনিদ্বার বা জরায়ুর মধ্যে পলিপ। 
(১৯) শ্বেতপ্রদর। 
(২০) যে কোন রকম স্বপ্নভঙ্গ। 
(২১) ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমা। 
(২২) বিভিন্ন ধরণের বাতরোগ, অস্থিস্ফিতি, হাড় বাঁকিয়া যাওয়া। 
(২৩) নিম্নাঙ্গে ভেরিকোজ ভেন (Varicose vein)। 
(২৪) উরু, গোড়ালি এবং পায়ে ক্ষত।
(২৫) হিউমেরাস,ফিমার, প্যাটেলা, আঙ্গুলের হাড় ইত্যাদি পচনক্রিয়া (Suppuration and necrosis)
(২৬) মুখে, বাহুতে এবং হাতে আঁচিল (warts)। 
(২৭) বিভিন্ন প্রকার টিউমার (Encysted) 
(২৮) যাবতীয় মনোরোগ। 
(২৯) ক্যানসার, সারকোমা ইত্যাদি। 
(৩০) টিউবারকিউলোসিস ও কুষ্ঠ। 
(৩১) মৃগী।
(৩২) এরিসিপেলাস,আঙ্গুল হাড়া ইত্যাদি। 






সিফিলিস (ধবংস) :
  • চুল- চুল কম,চুল পড়ার কারনে সংখা কম।হালকা চুল
  • চর্ম - ফাটা ফাটা, ক্ষতযুক্ত
  • নখ- পাতলা,ভগুর, লম্বা ফাটাযুক্ত,গর্ভযুক্ত, অবতল চামচের মতো।
  • ঠোট - ফাটাযুক্ত
  • মুখমণ্ডল - লালচে মুখমণ্ডল, জন্মগত অসাভাবিকতা (যেমন- ঠোট কাটা, তালুকাটা)
  • মুখভঙ্গি - নির্দয়, পাশবিক,প্রতি-হিংসাপরায়ন, আক্রোশ,
  • পূর্ণ, উগ্র,নিস্তেজ,ভগ্ন বা বিষন্ন চেহারা।
  • পোশাক - কালো,ফ্যাকাসে, অসামজস্য রং এর পোশাক পরে।
সিফিলিসের রোগীর ধাতুগত লক্ষণ
১. আত্নহত্যা করার ইচ্ছা।
২. নৈরাশ্য, হঠকারিতা, মূর্খতা, বিতৃষ্ণা।
৩. স্মরণশক্তি ও ধারণশক্তি হ্রাস।
৪. মানসিক জড়তায় কথা কম বলে।
৫. মাংসে অরুচি কিন্তু দুগ্ধ খাইবার ইচ্ছা।
৬. অগ্নিকান্ড, হত্যাকান্ডের স্বপ্ন দেখে।
৭. সূর্যাস্ত হতে সূর্যোদয় পর্যন্ত বৃদ্ধি।
৮. জীভ মোটা ও দাঁতের ছাপযুক্ত।
৯. চুলকানীবিহীন চর্মরোগ।
১০. বিকলঙ্গতা।
১১. অস্থির ক্ষয়প্রাপ্তি।
১২. স্রাবের প্রচুরতা, দুর্গন্ধতা এবং স্রাব নিসরনে রোগ বৃদ্ধি।
১৩. দুষ্টজাতীয় ফোঁড়া।
১৪. অতিরিক্ত গরম-ঠান্ডা অসহ্য।

সাইকোসিস :
  • চুল- শরীরে অধিক চুল,ঘন চুল
  • চর্ম - পুরু বা ভারী,মাছের আইঁশের মতো,কোষ কোষ
  • নখ- পুরু, শিরাযুক্ত,ঢেউ যুক্ত, উত্তল
  • ঠোট - পুরু বা ভারী
  • মুখমণ্ডল - হলুদাভ,ফোলা ফোলা ভাব,জন্মগত বা অর্জিত ওভার গ্রোথ।
  • মুখভঙ্গি - লোলুপ, সন্দেহ প্রবণ, ধুর্ত,হিংসার্থক,দুষ্ট
  • পোশাক - হলুদ রং বা গাঢ় উজ্জল রংয়ের পোশাক পরে।
সাইকোসিস রোগীর ধাতুগত লক্ষণ :
১. ডাক্তারের কাছে লক্ষণ বলতে গিয়ে দেখে আশেপাশে কেউ আছে কিনা।
২. ডাক্তার ঔষধ দিয়েছে! সে আবার খোঁজাখুঁজি করে। কারণ ডাক্তার লক্ষণ গুলো পুরাপুররি শুনল কিনা। আবার জিজ্ঞাস করে কোন ঔষধ কিসের জন্য দিয়েছে।
৩. পড়ালেখা করতে গেলেও সন্দেহ । একলাইন লেখে তো বারবার কাটাকাটি করে। চিন্তা করে এই শব্দের বদলে ঐশব্দ যোগ করি।
৪. ঘর থেকে বের হবে দেখবে সক ঠিকঠাক মত আছে তো?
৫. হিসাব করতে যাবে ব্যবসা অথবা চাকুরিতে সেখানেও সমস্যা, সন্দেহ আর ভূলে যাওয়া।
৬. মনেও সন্দেহ! রাতে এই বুঝি কেউ পিছনে পিছনে আসছে; আশেপাশে কেউ আছে।
৭. বাজার করতে যাবে সেখানেও সমস্যা এই বুঝি দোকানদার আমাকে ঠকিয়ে বেশি নিল । আমি বাজার করেছি কেউ দেখে পেলল না তো।
৮. এই ডাক্তার আমার রোগ বুঝবে কি বুঝবেনা, আমার রোগ সারাবে কি সারাবে না সন্দেহ। আরো ২-৩ জন ডাক্তার একাত্রিত হলে ভাল হতো।  
৯. মনটি রোগের উপর পড়ে থাকে । সব সময় রোগের কথা বলে ।
১০. রোগ সূর্যোদয় হতে সূর্যান্ত পর্যন্ত বৃদ্ধি ।
১১. আঁচিল, টিউমার মাংস বৃদ্ধি, অন্ডকোষ প্রদাহ এর নিদর্শক।
১২. অস্বাভাবিক গঠন। যেমন- হাত পায়ের আঙ্গুল বেশী বা কম।
১৩. ঝড়-বৃষ্টির পূর্বে বা সময় ঘনঘন মূত্র ত্যাগ।

টিউবারকুলোসিস বা উচ্ছাস ও ক্ষয় :
  • চুল- চুল ভেগুে যায়,চুল ফেটে যায়,জট পাকায়
  • চর্ম - অতিরিক্ত রক্তসঞ্চালন যুক্ত, রক্তক্ষরণ যুক্ত।
  • নখ- উজ্জল চকচকে মসৃন,নখের নিচে রক্তের উচ্ছাস, সাদা স্পটযুক্ত।
  • ঠোট - উজ্জল লাল,রক্তের উচ্ছাস যুক্ত।
  • মুখমণ্ডল - রক্ত বর্ন, গাল লাল(red cheek)
  • মুখভঙ্গি - উদাসীন, অসুন্তুুস্ট, স্বাধীন, একগুঁয়ে - জেদী, অস্থির।
  • পোশাক - লাল, লালচে বেগুনী, গোলাপী পোশাক পরিধান করে।
টিউবারকুলিনাম রোগীর ধাতুগত লক্ষণ : ১. চিকিৎসাধীন অবস্থায়ও রোগী একই লক্ষণ ঘুরে ফিরে আসে। ২. একই সময়ে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। ৩. যে খাবারে বৃদ্ধি সেই খাবারেই আকাঙ্খা। ৪. বিনা কারণে ঠান্ডা-সর্দ্দি লাগে। ৫. যথেষ্ট পানাহার সত্বেও দুর্বলতা, শুষ্কতা শীর্ণতা প্রাপ্ত হয়। ৬. কুকুর ভীতি বিদ্যমান। ৭. উদাসীনতা ও চিন্তাশূন্যতা। ৮. ক্রোধপরায়ণ, অসন্তুষ্ট, চঞ্চল, পরিবর্তনশীল মেজাজ। ৯. কামোত্ততার জন্য যে কোন উপায়ে শুক্রক্ষয় করে। ১০. বার বার চিকিৎসক বদল করে । ১১. জাঁকজমকের সাথে কাজ শুরু করলেও তা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। ১২. অনবরত ঘুরে বেড়ানো স্বভাব। ১৩. নিদ্রায় চিৎকার করে কথা বলে ।


টিউবারকুলিনামের রোগীরা দেখতে কেমন হবে ?

 ১) লম্বা।
২) হালকা পাতলা দেহ।
৩) বুকটা সংকীর্ণ, কবুতরের বুকের মতো।
৪) এনিমিক।
৫) গৌর বর্ণ।
৬) ভ্রু দুটি যুক্ত।
৭) ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের চুলে জটা।
৮) ঠোঁট রক্তবর্ণ (বেল, ল্যাকেসিস, সালফার)।
৯) পেট জয়ঢাকের মতো।
১০) এরা শারীরিক ও মানসিকভাবে বাড়ন্ত প্রকৃতির হয়।
১১) চোখে চশমা থাকতে পারে কারণ এদের ঘন ঘন চশমা বদলাতে হয় ।


টিউবারকুলিনামের রোগীরা দেখতে কেমন হবে ?

  •  ১) লম্বা।
  • ২) হালকা পাতলা দেহ।
  • ৩) বুকটা সংকীর্ণ, কবুতরের বুকের মতো।
  • ৪) এনিমিক।
  • ৫) গৌর বর্ণ।
  • ৬) ভ্রু দুটি যুক্ত।
  • ৭) ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের চুলে জটা।
  • ৮) ঠোঁট রক্তবর্ণ (বেল, ল্যাকেসিস, সালফার)।
  • ৯) পেট জয়ঢাকের মতো।
  • ১০) এরা শারীরিক ও মানসিকভাবে বাড়ন্ত প্রকৃতির হয়।
  • ১১) চোখে চশমা থাকতে পারে কারণ এদের ঘন ঘন চশমা বদলাতে হয় ।





“সোরা, সিফিলিস ও সাইকোসিসের সনাক্তকরণের উপায় সম্বন্ধে একটু ভিন্ন চিন্তাধারা” আমরা জানি রোগ প্রধানত দুই প্রকারের১. তরুণ রোগ ২. চির রোগ

⏯- তরুণ রোগ তিন প্রকারের, যথা১. ব্যাক্তিতান্ত্রিক ২. বিক্ষিপ্ত ও ৩. সঙ্ক্রামক
⏯- চির রোগও তিন প্রকারের, যথা১. ভেষজ ২. মিথ্যা ৩. প্রকৃত
⏯- এই প্রকৃত চির রোগগুলি কারণতত্ব অনুযায়ী তিনভাগে বিভক্ত। যথা১.সোরা ২. সিফিলিস ৩.সাইকোসিস


মায়াজম দোষ দূরিকরণের জন্য যে সকল ওষুধ ব্যবহৃত হয়: রোগীলিপি করার সময় রোগী কোন মায়াজমের তা নির্ণয় করতে হবে। কারণ রোগীর চিকিৎসার শেষের দিকে রোগীর উপর কোন মায়াজমের প্রভাব বেশি ছিল তা নির্ধরণ করা যায় না। এখন যত রোগী দেখি, প্রায় রোগীই মিশ্র মায়াজমের, একেক জন একাধিক মায়াজম নিয়ে আসেন। তাই রোগীর ওষুধ শুরু করার সময় রোগীলিপিতে রোগীটি কোন মায়াজমের তা লিখে রাখতে হবে। রোগীর চিকিৎসা করার সময়, রোগীর লক্ষণ সদৃশে যে ওষুধ সেটিই প্রয়োগ করতে হবে কিন্তু রোগীর চিকিৎসা সম্পূর্ণ করার সময় খেয়াল রাখতে হবে, রোগীকে সর্বশেষ যে ওষুধটি প্রয়োগ করা হলো সেটি রোগী যে মায়াজমের সে মায়াজমের কিনা? যেমন- সোরা: সালফার, সোরিনাম, ক্যাল্কে-কার্ব, লাইকোপডিয়াম ইত্যাদি। সাইকোসিস : থুজা, মেডোরিনাম, নেট্রাম সালফ, নাইট্রিক এসিড, স্ট্যাফিস্যাগ্রিয়া ইত্যাদি। সিফিলিস : মার্কুরিয়াস, সিফিলিনাম, অরাম মেট, নাইট্রিক এসিড, সাইলিসিয়া ইত্যাদি। টিউবারকুলার: টিউবারকুলিনাম বোভিনাম, টিউবারকুলিনাম ব্যাসিলিনাম, কেলি সালফ, ড্রসেরা, এন্টিমোনিয়াম টার্টারিকাম, ইত্যাদি।

Related Topics Click Here::


Previous Post
Next Post

post written by:

DHMS (BHB), PDT and MBA

0 Comments: