হোমিও ভেষজ বলতে কি বুঝায়ঃ
🌱 ভেষজ হল ঔষধি গুণ সম্পন্ন পদার্থ যা থেকে ঔষধ তৈরি করা হয়, ইহাতে রোগ উৎপাদন ও রোগ নাশক ক্ষমতা বিদ্যমান।
🌱 যে সকল পদার্থকে হোমিওপ্যাথিক ফার্মাকোপিয়ার নির্দিষ্ট নিয়মে প্রস্তত বা শক্তিকৃত করলে রোগ উৎপাদন করে এবং অসুস্থদেহের রোগ মুক্ত করে তাকেই হোমিওপ্যাথিক ভেষজ বলে।
🌱 যে সকল পদার্থ সুস্থ শরীরে প্রয়োগ করলে শরীর অসুস্থ হয় এবং অসুস্থ শরীরে সদৃশ লক্ষণ মতে প্রয়োগ করলে শরীর সুস্থ হয়, তাকে ভেষজ বলা হয়। অর্থাৎ যে সকল পদার্থের রোগ উৎপাদিকা ও রোগনাশিনী উভয়বিধ শক্তিই বর্তমান থাকে উহাদিগকে ভেষজ বলে। কাজেই ভেষজ হল ঔষধী গুণসম্পন্ন বস্তু যা থেকে ঔষধ প্রস্তুত করা যায়।
হোমিওপ্যাথিক ফার্মাকোপিয়া ভেষজের উৎসের আলোচনা করঃ
🌱 উদ্ভিদজঃ একোনাইট, বেলেডোনা, সিঙ্কোনা।
🌱 প্রাণীজঃ এপিসমেল, ফ্যান্থারিস, ল্যাকেসিস।
🌱 খনিজঃ নেট্রাম-মিউর,ক্যালি-কার্ব, ফেরাম-ফস, ফসফরাস, সালফার।
🌱 গ্রন্থিজঃ ল্যাক-ক্যানাইনাম, থাইরয়ডিন, ইনসুলিন।
🌱 শক্তিজঃ এক্স-রে, রেডিয়াম।
ভেষজ পরীক্ষণ কাহাকে বলে ?
🌱 ভেষজকে আরোগ্যদায়িনী শক্তিরূপে ব্যবহার করিতে হইলে তাহার রোগোৎপাদিকা শক্তির পূর্ণ পরিচয় জানা আবশ্যক। প্রতিটি ভেষজ পরিমিত মাত্রায় সুস্থ মানবদেহের উপর প্রয়োগ করিয়া পরীক্ষা করা ব্যতীত তার সার্বিক পরিচয় জানার অন্যকোন নিশ্চিত পথ নাই। ভেষজের অন্তনির্হিত শক্তির সম্যক পরিচয় লাভ করার উদ্দেশ্যে সুস্থ মানবদেহে ভেষজের বিধিসম্মত পরীক্ষাকে ভেষজের গুণাগুণ পরীক্ষা বা drug proving বলে।
ভেষজ (ঔষধ) পরীক্ষার উদ্দেশ্য বা প্রয়োজনীয়তা কি ?
🌱 প্রতিটি ঔষধের রোগোৎপাদিকা শক্তির পূর্ণ পরিচয় বিশদভাবে জানা, অর্থাৎ সুস্থাবস্থায় দেহযন্ত্রের ক্রিয়ায় ও অনুভূতিতে কিরূপ বিকৃতি সাধন করে তাহা জানা।
🌱 প্রতিটি ঔষধের প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্যাবলীর স্বাতন্ত্র অনুধাবন করা ও অন্য ঔষধ হইতে ইহাকে পৃথক করা।
🌱 সদৃশ লক্ষণযুক্ত রোগে এই ঔষধের উপযুক্ত প্রয়োগবিধি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা।
🌱 ডাঃ রবার্টস বলেন, drug proving এর প্রকৃত উদ্দেশ্য হইল ঔষধ সৃষ্ট রোগের এক জীবন্ত চিত্র অংকন করা যাহাকে রোগীর দেহে দেখা মাত্র আমরা চিনিতে পারি।
হোমিও ঔষধের পরীক্ষণের শর্তাবলী কি কি ?
🌱 যাহার উপর ঔষধ পরীক্ষা করা হইবে তাহাকে সুস্থ, সবল ও স্বাভাবিক মানুষ হইতে হইবে। ইতর প্রণীর কোন বাকশক্তি নাই, তাই ঔষধের ব্যক্তিনিষ্ঠ ও মানসিক লক্ষণাবলী ইতর প্রাণী হইতে জানা যায় না।
🌱 পরীক্ষাকরীকে অকপট, সত্যবাদী ও সৎব্যক্তির অধিকারী হইতে হইবে।
🌱 তীক্ষ্ন ও ত্বরিৎ বুদ্ধির অধিকারী ও কান্ডজ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তির উপর ঔষধ প্রয়োগ করিতে হইবে।
🌱 হোমিওপ্যাথির উপর আস্থা, দরদ, বিশ্বাস ও ভক্তি আছে এমন ব্যক্তির উপর ঔষধ পরীক্ষা করিতে হইবে।
🌱 প্রত্যক্ষণ ও পর্যবেক্ষণলদ্ধ লক্ষণাবলী চিকিৎসার পরিভাষায় ব্যক্ত করার ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তির উপর ঔষধ পরীক্ষা করিতে হইবে।
🌱 লক্ষণের প্রকারভেদ বুঝার জন্য সুশিক্ষিত ব্যক্তির উপর ঔষধ পরীক্ষা করিতে হইবে।
নির্বাচিত ঔষধের শক্তি কিভাবে নির্ধারণ করিতে হয় ?
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় ব্যবহারিক ক্ষেত্রে নির্বাচিত ঔষধের শক্তি কিভাবে নির্ধারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ ঔষধ নির্বাচন করা যত কঠিন , ঔষধের শক্তি নির্ধারণ করা তাহা অপেক্ষা ও কঠিন। হ্যানিম্যান এবং তৎপরবর্তী কালের বিজ্ঞ চিকিৎসকগণের ব্যবহৃত শক্তি সম্বন্ধে পর্যালোচনা করিয়া মোটামুটিভাবে একটি শক্তিনীতি প্রস্তুত করা যায়।
১. সাধারণতঃ তরুণ রোগ নিম্নশক্তি বা মধ্যশক্তি প্রয়োগ করিতে হয় এবং চিররোগে উচ্চশক্তি প্রয়োগ করিতে হয়।
২. যে সকল রোগীর প্রতিক্রিয়া শক্তি দুর্বল সে সকল রোগীতে নিম্নশক্তি এবং যে সকল রোগীর প্রতিক্রিয়া শক্তি তীব্র সে সকল রোগীতে নির্বাচিত ঔষধ উচ্চ শক্তিতে প্রয়োগ করা উচিত।
৩. জড়বুদ্ধি ও যাহারা দৈহিক পরিশ্রম করেন এবং শ্লেম্মা প্রধান ধাতুর রোগীতে নিম্নশক্তি প্রয়োগ করিতে হয়।
৪. স্নায়ু প্রধান , রক্ত প্রধান ধাতুর রোগী এবং বুদ্ধিজীবি ও আবেগপ্রবণ রোগীর ক্ষেত্রে উচ্চ শক্তি প্রয়োগ করিতে হইবে।
৫. যে সকল ঔষধের ক্রিয়া অগভীর ও অল্পকাল স্থায়ী সে সকল ঔষধ নিম্নশক্তিতে এবং যে সকল ঔষধের ক্রিয়া গভীর ও দীর্ঘকাল স্থায়ী সে সকল ঔষধ উচ্চ শক্তিতে প্রয়োগ করিতে হয়।
রোগের ডায়নামিক সূত্র কি ?
মানুষের সুস্থাবস্থা ও রুগ্নাবস্থা ও আরোগ্যবস্থা জীবনী শক্তির উপর নির্ভর করে। অর্থাৎ মানুষের সুস্থাবস্থা ও রুগ্নাবস্থা ও আরোগ্যবস্থা- এই তিন অবস্থাই এক অখন্ড জীবনী শক্তির বিভিন্ন অবস্থা। এই তিন অবস্থাই জীবনীশক্তি দ্বারা প্রভাবিত হয়। ইহাকেই রোগের ডায়নামিক সূত্র বলে।
Homeopathic Posology-ঔষধের মাত্রাসংক্রান্ত বিদ্যা।
🌱 Posology-মাত্রাতত্ত্ব
মাত্রাতত্ত্বের ইংরেজি হইল Posology। Posology শব্দটি Posos এবং Logos এই দুইটি গ্রীক শব্দ হইতে উৎপত্তি হইয়াছে। Posos শব্দের অর্থ পরিমাণ এবং Logos শব্দের অর্থ জ্ঞান। অতএব Posology শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হইল পরিমাণ সম্বন্ধে জ্ঞান বা পরিমাণ বিজ্ঞান। চিকিৎসা বিজ্ঞানের যে শাখায় ঔষধের শক্তি এবং পরিমাণ সম্বন্ধে বৈজ্ঞানিক আলোচনা হয় তাহাকে মাত্রাতত্ত্ব বলে।
বাংলায় ‘মাত্রা’ ও ইংরেজিতে ‘Dose’ শব্দটি একটি গ্রীক শব্দ Posos থেকে উৎপন্ন হয়েছে যার অর্থ- পরিমাণ। সুতরাং মাত্রা বলতে কোন কিছুর নির্দিষ্ট পরিমাণকে বোঝায়। যেমন-এক ড্রাম, এক ফোঁটা ইত্যাদি। মাত্রাতত্ব (Posology) বলতে বোঝায় বিজ্ঞানের যে শাখায় মাত্রা বা পরিমাণ নিয়ে আলোচনা করা হয়।
হোমিওপ্যাথিক ঔষধের মাত্রাতত্ত্ব (Homeopathic Posology) বলতে মূলত প্রুভিংয়ের সময় প্রুভারের উপরে অসুস্থতার সময় রোগীর উপর ঔষধ প্রয়োগের পরিমাণকে বুঝানো হয়ে থাকে। হোমিওপ্যাথিক ঔষধ যেহেতু শক্তি তাই এর মাত্রা বা পরিমাণ বলতে ঔষধের শক্তির পরিমাণকেই বোঝানো হয়। এই ব্যাপারটি হোমিওপ্যাথিক দর্শনের সাথে সরাসরি সর্ম্পকযুক্ত কারণ উপযুক্ত শক্তির উপযুক্ত মাত্রায় প্রয়োগের আগে ঔষধের শক্তি ও রোগের শক্তিকে ভালোভাবে উপলদ্ধি করতে হয় এবং তার সাথে, ঔষধের কোন শক্তিটি মানবদেহের কোন স্তরে সাধারণত কতক্ষণ কাজ করার ক্ষমতা রাখে তার একটা ধারণা থাকতে হয়।
রোগ হচ্ছে একপ্রকার শক্তি এবং তা জীবনীশক্তিকে আক্রমণ করার পর- তা মানবদেহের বিভিন্ন স্তরগুলোর (Level of Human being) মধ্যে কোন স্তরে অবস্থান করছে তার অবস্থান অনুযায়ী ঔষধেরও শক্তির মাত্রা পরিবর্তন করতে হবে। বিভিন্ন প্রকার মাত্রা রয়েছে- কোন রোগীর ক্ষেত্রে রোগশক্তির পরিমাণ কতটুকু বা রোগশক্তি কোন রোগীর কতটুকু ক্ষতি করেছে, তার উপর র্নিভর করে ঔষধশক্তির মাত্রা নির্ধারিত হবে। হোমিওপ্যাথির একটি মৌলিক নীতি হচ্ছে রোগীর ব্যাক্তিস্বাতন্ত্রতা নির্ধারণ। এই নীতিটি মাত্রা নির্বাচনের ক্ষেত্রেও বিবেচনায় আনতে হবে। কারণ প্রত্যেকটি রোগীর ক্ষেত্রে রোগের ধরণ, তীব্রতা ইত্যাদি অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন শক্তির, ভিন্ন ভিন্ন মাত্রা নির্ধারিত হবে।
সূক্ষমাত্রা বা ক্ষুদ্রতম মাত্রা কাহাকে বলে?
সুনির্বাচিত ঔষধের যতটা পরিমাণ ব্যবহার করিলে ঔষধের কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা থাকে না অথচ রোগী স্থায়ীভাবে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে নির্মল আরোগ্য লাভ করে ঐ পরিমাণকেই সূক্ষমাএা বা ক্ষুদ্রতম মাএা বলে।
প্রথম মাত্রা কাহাকে বলে ?
যে পরিমাণ ঔষধ প্রয়োগের পর দেহে ঔষধের ক্রিয়া বা প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয় তাহাকে প্রথম মাত্রা বলে।
রোগমাত্রা ও আরোগ্য মাত্রার পার্থক্য কি?
- রোগমাত্রা নীতি বহির্ভূত, আর আরোগ্যমাত্রা নীতি সম্মত।
- রোগমাত্রা অপরিবর্তিত মাত্রা হইয়া থাকে আর আরোগ্যমাত্রা পরিবর্তিত মাত্রা।
- রোগমাত্রা দেহের ক্ষতি সাধন করে কিন্তু আরোগ্যমাত্রা দেহের উপকার করে।
- রোগমাত্রা স্থুল মাত্রার অন্তর্গত আর আরোগ্যমাত্রা সূক্ষমাত্রার অন্তর্গত।
- রোগমাত্রা যে কোন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয় কিন্তু আরোগ্যমাত্রা সব সময় আরোগ্যের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়।
একক মাত্রার ঔষধ প্রয়োগের উপকারিতা কি?
একবারে একটি মাএায় ঔষধ প্রয়োগ হইলে উহা অতিশয় কার্যকরী হয়। যদি একটি মাএাকে পানিতে গুলিয়া বিভক্ত করিয়া প্রত্যেকবার প্রয়োগের পূর্বে ২ হইতে ১০/১২ বার ঝাঁকি দিয়া পরিবর্তিত একক মাএায় প্রয়োগ করা হয় তবে উহা অধিক কার্যকরী হয়। ঔষধকে পরিবর্তিত মাএায় প্রয়োগ করিলে মাএাটি অনেক সূক্ষ্ম হয়। ঔষধ রোগীর লক্ষণের সহিত যত বেশী সদৃশ লক্ষণ সম্পন্ন হয় ও উহার মাএা তত বেশী ক্ষুদ্র বা সূক্ষ্ম হইবে ততই আরোগ্যকারী পরিবর্তন পাওয়া যায়। এইজন্য ঔষধকে একক মাএায় প্রয়োগ করিতে যায়।
ঔষধের শক্তি ও মাত্রা বলিতে কি বুঝ?
ঔষধের শক্তিঃ- ফার্মাকোপীয়ার নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসারে মূল আরককে তরল ভেষজবহ
Theory of Homoeopathy Action & amp; Duration.
(ঔষধের সেবন বিধি তত্ত্ব)
Q (মাদার টিংচার) থেকে CM পর্যন্ত শক্তির ঔষধ ব্যবহারঃ
———————————————————–
Q (এক দিন)=২ ঘন্টা পরপর ১০ ফোঁটা করে।
1x (১ দিন)=২ ঘন্টা পরপর ১০ ফোঁটা করে।
2x (১ দিন)= ২ ঘন্টা পরপর ১০ ফোঁটা করে।
3x (২ দিন)=৩ ঘন্টা পরপর ১০ ফোঁটা করে।
3০x (৩ দিন)= ৪ ঘন্টা পরপর ৫ ফোঁটা করে।
2০০x (৫ দিন)= ৬ ঘন্টা পরপর ৫ ফোঁটা করে।
[Q বা ১x বা 2x বা 3x বা 30x বা 200x সমূহ ক্রনিকের ক্ষেত্রেঃ গ্যাস, অর্শ, আমাশয়, মাসিকের অনিয়মের জন্য ৩ বার]
1M (৭ দিন)= প্রতিদিন একবার ৫ ফোঁটা করে।
[ বাচ্চাদের ক্ষেত্রেঃ (১-১০) বছরের বাচ্চা একদিন পরপর ২ ফোঁটা করে ]
10M (১০ দিন)= ২ দিন পরপর ৫ ফোঁটা করে।
[ বাচ্চাদের ক্ষেত্রেঃ (১-১০) বছরের বাচ্চা ৫ দিন পরপর ২ ফোঁটা করে ]
50M (১২ দিন)= ২ দিন পরপর ৫ ফোঁটা করে।
[ ১-১০ বছরের বাচ্চা ৬ দিন পরপর ২ ফোঁটা করে ]
CM (১৫ দিন)= ৩ দিন পরপর ৫ ফোঁটা করে।
[ ১-১০ বছরের বাচ্চা ৭ দিন পরপর ২ ফোঁটা করে ]
মোট=৫৬ দিন।
———————————————————–
3x থেকে 200x পর্যন্ত বাইওকেমিক ঔষধের ব্যবহারঃ
——————————————————
3x (২ দিন)= ৩ ঘন্টা পরপর ১-১০ বছর ক্ষেত্রে ২ টি / পূর্ণ বয়সে ৫ টি ট্যাবলেট।
6x (৪ দিন)= ৪ ঘন্টা পরপর ১-১০ বছর ক্ষেত্রে ২ টি / পূর্ণ বয়স ৫ টি ট্যাবলেট।
12x (৫ দিন)= ৪ ঘন্টা পরপর ১-১০ বছর ক্ষেত্রে ২ টি / পূর্ণ বয়স ৫ টি ট্যাবলেট।
30x (৩০ দিন)= ১২ ঘন্টা পরপর ১-১০ বছর ক্ষেত্রে ২ টি / পূর্ণ বয়স ৫ টি ট্যাবলেট।
200x (৩০ দিন)= ২৪ ঘন্টা পরপর ১-১০ বছর ক্ষেত্র ২ টি / পূর্ণ বয়স ৫ টি ট্যাবলেট। (দিনে ১ বার)।
[ ১-২ দিন বা ৬ মাসের শিশুদের ১ টি ট্যাবলেট করে ]
মোট= ৭৩ দিন।
হোমিও ঔষধের শক্তি মাত্রা নির্বাচন কৌশলঃ
পৃথিবীতে যারা ক্লাসিক্যাল (সর্বোত্তম) হোমিওপ্যাথ চর্চা করেন, তাঁরা অনেক কষ্ট করে রোগীকে আরোগ্য করে থাকেন। রোগীর শারীরিক ও মানসিক লক্ষণগুলি নিয়ে অনেক চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে হয় এবং রোগ ও রোগীর অনেক গভীরে প্রবেশ করে থাকেন একজন ক্লাসিক্যাল হোমিওপ্যাথ। মূলকথা হলো ক্লাসিক্যাল হোমিওপ্যাথিতে ঔষধ নির্বাচন অনেক সময় সাপেক্ষ এবং কষ্ট সাধ্য যদিও বর্তমানে কম্পিউটারাইজ রেপার্টরী ও ম্যাটেরিয়া মেডিকা ব্যবহার কাজটা অনেক সহজ করে দিয়েছে; তথাপি অন্য যে কোন চিকিৎসা পদ্ধতির চেয়ে ক্লাসিক্যাল হোমিওপ্যাথ অনেক কষ্ট করে ঔষধ নির্বাচন করে থাকেন। আবার ঔষধ নির্বাচন সঠিক হলেও তার শক্তি ও মাত্রা নির্ধারণ করা দ্বিতীয় কঠিন কাজ।
শক্তির বিষয়ে আলোচনার পূর্বে আমরা কিছুটা জানি যে হোমিওপ্যাথি ঔষধে কি কি ধরণের শক্তি হয়ে থাকে।
হোমিওপ্যাথিক ঔষধ গুলি ৩ টি স্কেলে পরিমাপ করা হয়।
১) ডেসিমেল স্কেল
২) সেন্টিডেসিমেল স্কেল
৩) কেপ্টি ডেসিমেল স্কেল
শক্তিকৃত ঔষধগুলিকে ৩ ভাবে বিভক্ত করা হয়ে থাকে।
১) নিম্নশক্তি- মাদার টিংচার থেকে ১২ পর্যন্ত।
২) মধ্যম শক্তি- ১২ থেকে ২০০ শক্তি পর্যন্ত।
৩) উচ্চ শক্তি ২০০ থেকে যত উচ্চ শক্তি করা যায়।
হোমিওপ্যাথ ডাক্তরগণ কেউ নিম্নশক্তি, কেউ মধ্যম শক্তি আবার কেউ উচ্চ শক্তি ব্যবহার করে চিকিৎসা করে থাকেন। উল্লেখিত ৩ ধরণের মাধ্যমেই রোগী আরোগ্য হয়ে থাকে। এটা কোন সুনির্ধারিত বিষয় নয় যে আপনাকে নিম্নশক্তি, মধ্যম শক্তি অথবা উচ্চ শক্তির ঔষধ দিয়ে চিকিৎসা করতে হবে বিষয়টি মূলতঃ ডাক্তারদের উপরই নির্ভর করে থাকে যে তিনি কোন ধরণের শক্তি ব্যবহার করবেন। আর এটা বলাও ঠিক হবেনা যে তিনি এই ধরণের শক্তি ব্যবহার করছেন বলে তার সাফল্য আসছেনা বা রোগী আরোগ্য হচ্ছে না। আসলে সব ধরণের শক্তিতেই ফলাফল পাওয়া যায়।
কিছু কিছু দেশে ডাক্তারগণ নিম্নশক্তি ছাড়া উচ্চ শক্তি প্রয়োগ করতে পারেন না কেননা সে দেশের ঔষধ নীতিতে এমন বিষয় উল্লেখ আছে যে, “যে উপাদানের মাধ্যমে ঔষধ তৈরি করা হয়েছে অর্থাৎ ঔষধের মূল উপাদান ঔষধে অবশ্যই থাকতে হবে।” আমরা জানি ১২ শক্তি পর্যন্ত হোমিও ঔষধে উক্ত ঔষধের মূল উপাদানের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এরচেয়ে উচ্চ শক্তিকৃত করা হলে সেখানে শুধুমাত্র শক্তি বর্তমান থাকে। যখন পটেনটাইজেশন করা হয় তখন মলিকিউলস গুলি দূরে সরে যায় এবং এনার্জি বেরিয়ে আসে উক্ত এনার্জি এলকোহলে মিশে যায় বা জমা হয়ে যায় ফলে ১২ শক্তির উচ্চে উপাদানের আর অস্তিত্ব থাকে না। বিধায় সে দেশে নিম্নশক্তি ভিন্ন উচ্চ শক্তির ঔষধ পাওয়া যায় না। ফলে ডাক্তারগণ নিম্ন শক্তি দিয়েই চিকিৎসা করে থাকেন।
আমাদের দেশে নিম্ন মধ্যম ও উচ্চ শক্তি সবই ব্যবহার হয়। শুধু তাই নয় সাফল্যের সাথে ব্যবহৃত হয়। আমাদের দেশে হোমিওপ্যাথির প্রচার ও প্রসার ও জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। মানুষ হোমিওপ্যাথিতে ফল পাচ্ছে। হোমিওপ্যাথির পাওনিয়ারগণ যাদের হাত ধরে আজ পৃথিবীতে হোমিও ব্যাপক প্রচার পেয়েছে যেমন ডাঃ কেন্ট, ডাঃ ক্লার্ক, ডাঃ হেরিং, ডাঃ ন্যাস, ডাঃএলেন, ডাঃ বোনিং হোসেন আরও অনেকে যাদের নাম লিখলে তালিকাটা অনেক বড় হবে। তাদের মধ্যে অনেকেই নিম্নশক্তি ব্যবহার করতেন আবার অনেকে উচ্চ শক্তি ব্যবহার করতেন । উদহারন স্বরূপ বলা যায় ডাঃ কেন্ট উচ্চ শক্তি বেশি ব্যবহার করতেন এবং ডাঃ বোরিক নিম্নশক্তি বেশি ব্যবহার করতেন। মূলকথা হলো আমরা নিজস্ব বিবেচনায় রোগীর অবস্থা ঔষধের প্রাপ্তি গুণাগুণ মাথায় রেখে সুনির্বাচিত ঔষধ সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করলে সাফল্য পেতে পারি।
নিম্নে ঔষধের শক্তি প্রয়োগের কয়েকটি কৌশল উল্লেখ করা হলো যা অনেক বিজ্ঞ ডাক্তারগণ করে থাকেন-
১. যখন ঔষধ লক্ষণ ও রোগীর লক্ষণ বহুল অংশে মিলে যায় বিশেষ করে মানসিক লক্ষণ তখন আপনি উচ্চ শক্তি ব্যবহার করতে পারবেন।
২. যখন ঔষধের মানসিক লক্ষণ ও রোগীর মানসিক লক্ষণ খুবই কম মিলে তখন আপনি নিম্নশক্তি ব্যবহার করতে পারবেন।
৩. রোগী যদি শারীরিক পরিশ্রম খুবই কম করেন অর্থাৎ অফিসে বসে বসে কাজ করে, মানসিক চাপ বেশি থাকে শারীরিক কোন ধরণের পরিশ্রম হয় না এমন রোগীকে উচ্চ শক্তি দেওয়া যেতে পারে।
৪. রোগী যদি মানসিক পরিশ্রম কম ও শারীরিক পরিশ্রম বেশী করেন তাহলে নিম্নশক্তি প্রয়োগ করা যেতে পারে।
৫. রোগীর রেজিষ্টান্ট (প্রতিরোধী) পাওয়ার, জীবনী শক্তি ভাল থাকলে যেমনটা কিশোর ও যুবকদের দেখতে পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে উচ্চ শক্তি দেওয়া যেতে পারে।
৬. রোগীর বয়স বেশী, রেজিষ্টান্ট পাওয়ার কম, জীবনী শক্তি দূর্বল এমন হলে নিম্নশক্তি দ্বারা চিকিৎসা করা ভাল।
৭. যদি ঔষধ নোসড হয় তাহলে নিম্ন শক্তি না দিয়ে মাধ্যম বা উচ্চ শক্তি ব্যবহার করে রোগীর চিকিৎসা করা ভাল।
৮. রোগীর শারীরিক লক্ষণ বেশী এবং মানসিক লক্ষণ কম এমন অবস্থায় রোগীকে নিম্নশক্তি দেয়া উত্তম।
৯. যখন প্যাথলোজিক্যাল সিম্পটম বেশী কিন্তু মানসিক লক্ষণ কম এমন ক্ষেত্রে নিম্নশক্তি ব্যবহার করা ভাল। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে আলসার, ক্ষত।
১০. রোগী দেখার সময় যদি এমন মনে হয় যে রোগ তীব্র আকার ধারণ করেছে উদহারন স্বরূপ টিউবারকিউলোসিস, এইচআইভি, ক্যান্স্যার এর শেষ অবস্থা হলে নিম্নশক্তি ব্যবহার করাই ভাল।
১১. কিছু কিছু রোগী তীব্র ড্রাগ সেনসিটিভ হয়ে থাকে। সামান্য ঔষধ প্রয়োগেই ক্রিয়া প্রকাশ পায় এমন রোগীর ক্ষেত্রে নিম্নশক্তি ব্যবহার করা ভাল।
🌱 এমন কিছু ঔষধ আছে যেমন, হিপার সালফ, সাইলিসিয়া মেটেরিয়া মেডিকাতে কোন কোন ডাক্তারগণ উল্লেখ করেছেন নিম্নশক্তিতে যে ধরণের ক্রিয়া প্রকাশ করে উচ্চ শক্তিতে তার বিপরীত ক্রিয়া করে থাকে। উদহারণ স্বরূপ বলা যেতে পারে সাইলিসিয়া নিম্নশক্তি পুঁজ উৎপাদন করে কিন্ত উচ্চ শক্তিতে তা শুকিয়ে দেয়।🌱 কিছু ঔষধ নোসড নয় তবু তীব্র ক্রিয়া প্রকাশ করে যেমন ফসফরাস, সাইলিসিয়া (মেটেরিয়া মেডিকা অনুযায়ী) তীব্র ও দীর্ঘ ক্রিয়া প্রকাশক। এ ধরণের ঔষধগুলি ব্রঙ্কাইটিস, টিউবারকিউলোসি এর মত তীব্র পীড়াদায়ক রোগে ব্যবহার করলে রোগীর শরীরে তীব্র ক্রিয়া প্রকাশ পায়; রোগীর রোগ কষ্ট বেড়ে যায়। তাই শুধু রেপার্টরি নির্ভর না করে মেটেরিয়া মেডিকা অনুসরণ করে ঔষধের মেরিট অনুযায়ী ব্যবস্থাপত্র করা উচিত।
Related Topics Click Here::
- চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাস- History of Medicine [ প্রথম অধ্যায় ]
- Definition of Homeopathy- হোমিওপ্যাথির নীতিমালা কাকে বলে ? [দ্বিতীয় অধ্যায়]
- হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নীতিমালা।
- ঔষধ প্রস্তুতকরণ ও শক্তিকরণ। নবম অধ্যায়।
- ভেষজ পরীক্ষণ এবং মাত্রাতত্ত্ব- Drug Proving and Posology.
- রোগ সম্বন্ধে হোমিও মতবাদ।
- Short question of homeopathy principles.
- মায়াজম পরিচিতি।
- হোমিওপ্যাথিক ওষুধ প্রয়োগ পদ্ধতি।
- ঔষধের শক্তিকরণ- Drug Potentization.
- হোমিওপ্যাথির নিয়মনীতি।
- হোমিওপ্যাথির নিয়মনীতি_পরীক্ষার সাজেশন।