November 14, 2021
আদিকালে ভেষজ চিকিৎসায় ঔষধি উদ্ভিদ যেভাবে ব্যবহার করা হতো, বর্তমান বিজ্ঞানের যুগে আধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে তা আরও উন্নত উপায়ে ব্যবহার করা হচেছ। উদ্ভিদ প্রক্রিয়া হতে বা নির্যাস করে এর কার্যকরী উপাদান আলাদা করে ব্যবহারের ফলে রোগ প্রতিরোধ ও নিরাময় সহজতর হচ্ছে।
History of Medicine_চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাস
জীব
জগতের স্বাস্থ্য সুরক্ষা, রোগ প্রতিরোধ ও নিরাময়ের জন্য সৃষ্টির আদি থেকে
প্রকৃতিতে বিদ্যমান উদ্ভিদকুলের উপর মানুষ নির্ভর করে আসছে। প্রকৃতিই
মানুষকে শিখিয়েছে বিভিন্ন অসুস্থতায় ও স্বাস্থ্য রক্ষায় উদ্ভিদের ব্যবহার।
আদিকাল থেকে প্রকৃতিলব্ধ এই জ্ঞান স্বাভাবিক নিয়মে মানুষের কল্যাণে ব্যবহৃত
হয়ে আসছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এখন বিশ্বের কমপক্ষে ৪০০ কোটি লোক
ভেষজ চিকিৎসার উপর নির্ভরশীল।
![]() |
History of Medicine |
আদিকালে ভেষজ চিকিৎসায় ঔষধি উদ্ভিদ যেভাবে ব্যবহার করা হতো, বর্তমান বিজ্ঞানের যুগে আধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে তা আরও উন্নত উপায়ে ব্যবহার করা হচেছ। উদ্ভিদ প্রক্রিয়া হতে বা নির্যাস করে এর কার্যকরী উপাদান আলাদা করে ব্যবহারের ফলে রোগ প্রতিরোধ ও নিরাময় সহজতর হচ্ছে।
ঔষধি
উদ্ভিদ ও ভেষজের ইতিহাসে লক্ষিত হয় যে, পৃথিবীর প্রথম মানব-মানবী আদম (আঃ)
এবং হাওয়া বেহেস্তের মধ্যে ‘উদ’ গাছের পাতা ব্যবহার করে উদ্ভিদ ব্যবহারের
সূচনা করেন (আল-কোরআন)। হযরত মুসা (আঃ) এর সময় নিম গাছের বিভিন্ন অংশ চর্ম
রোগ আরোগ্যে ব্যবহার করা হতো। এবং হযরত মুহম্মদ (সঃ) বলেছেন, কালোজিরা
মৃত্যু ব্যতীত প্রত্যেক রোগেই উপকারি (বুখারী, মুসলিম)।
গ্রীসে
প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক চিকিৎসা পদ্ধতির সূচনা হয়। গ্রীসের আরবী নাম ইউনান। এ
কারণে এ চিকিৎসা পদ্ধতি সরাসরি ইউনানী পদ্ধতি হিসাবে পরিচিত হয়ে ওঠে।
ইউনানী চিকিৎসা বিজ্ঞানের মূল হাকিম ইসকালিবুস (ইসক্লেপিয়াস) হযরত ইদ্রিস
(আঃ) এর নিকট চিকিৎসা বিদ্যা আয়ত্ব করেন এবং জন্মভূমি গ্রীসে প্রত্যাবর্তন
করেন। তিনি তন্ত্রমন্ত্র এবং তাবিজ কবজের পরিবর্তে স্থানীয় গাছ গাছড়া,
লতাপাতা, জড়িবুটি ইত্যাদি দিয়ে চিকিৎসা শুরু করেন এবং যথেষ্ট সফলতা অর্জন
করেন। হাকিম ইসকালিবুসের কন্যা হাইজিয়া স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিদ্যা ও
প্রক্রিয়ায় যথেষ্ট সফলতা অর্জন করেছিলেন। সে সম্মানে আজও চিকিৎসা বিজ্ঞানে
হাইজিন একটি পাঠ্য বিষয় হিসাবে গণ্য।
হাকিম
ইসকালিবুসের মৃত্যুর প্রায় চারশত বছর পর তাঁরই বংশোদ্ভুত হাকিম শোকরাত
(হিপোক্রিটাস) চিকিৎসা বিজ্ঞানের ওপর আরোপিত সকল বিধিনিষেধের বেড়াজাল
ভেঙ্গে সকল চিকিৎসকের জন্যে একটি শপথনামা প্রণয়ন করেন, যা আজও সম্মানের
সঙ্গে পঠিত এবং পালিত হয়। তিনি চিকিৎসা বিজ্ঞানের যাবতীয় বিষয়বস্তু
লিপিবদ্ধ ও সংরক্ষণ করা শুরু করেন।
হাকিম
জালিনুসের (গ্যালেন) সময়ই চিকিৎসা বিজ্ঞানের উল্লেখযোগ্য উন্নতি সাধিত হয়।
জালিনুস বা গ্যালেন উল্লেখ করেন যে, অসুস্থতা-নিরোধ এবং আরোগ্য প্রদানে
তাঁর আধ্যাত্মিক শক্তি রয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন যে, সৃষ্টিকর্তা মানুষের
ব্যবহারের জন্য উদ্ভিদজগৎ সৃষ্টি করেছেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে,
সৃষ্টিকর্তাই এমন সকল চিহ্ন দিয়ে দিয়েছেন যার দ্বারা কোন্ উদ্ভিদ কোন্ কাজে
(রোগে) লাগবে তা বোঝা যায়।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসকে মোটামুটি নিম্মোত্ত শ্রেণীতে ভাগ করা যায়ঃ
১. প্রাগৈতিহাসিক যুগ।
২. ঐতিহাসিক যুগ।
৩. বিজ্ঞানমুখী যুগ।
৪. বৈজ্ঞানিক যুগ।
৫. আধুনিক বিজ্ঞানের স্বর্ণযুগ।
১. প্রাগৈতিহাসিক যুগ।
প্রাগৈতিহাসিক
যুগ ছিল কুসংস্কারে পরিপূর্ণ। রোগের কারণ সম্বন্ধে তখনকার সময়ের মানুষ
অবহিত ছিল না। তখনকার সময়ে মনে করা হত অলৌকিক কোন শক্তির প্রভাবে অর্থাৎ
ভূত-প্রেত, দৈত্য-দানব প্রভৃতি অশরীরী শক্তির প্রভাবেই রোগ সৃষ্টি হয়।
যেহেতু অশরীরী বা অশুভ শক্তির প্রভাবে মানুষ রোগাক্রান্ত হয় তাই যথোপযুক্ত
ব্যবস্থা গ্রহণ দ্বারা মানুষ ঐ অশুভ শক্তিকে দূরীভূত বা বিতাড়িত করার
প্রচেষ্টা চালায়। তখনকার দিনে মূলত ধর্মযাজকরাই ঝাড়-ফুক, তন্ত্রমন্ত্র,
তাবিজ, কবজ, মাদুলী প্রভৃতি দ্বারা চিকিৎসা কার্য পরিচালনা করতেন।
২. ঐতিহাসিক যুগ।
ক. হিপোক্রেটিস যুগের চিকিৎসা।
খ. প্লাটোর যুগের চিকিৎসা।
গ. এরিষ্টটলের যুগের চিকিৎসা।
ঘ. গ্যালেনের যুগের চিকিৎসা।
ঙ. ভারতীয় চিকিৎসা।
চ. আরব্য চিকিৎসা (ইবনে সিনা)।
ছ. প্যারাসেলসাসের যুগের চিকিৎসা।
জ. মেসমারের যুগের চিকিৎসা।
৩. বিজ্ঞানমুখী যুগ।
বিজ্ঞানমুখী
যুগে প্রি-মেডিকেল বিষয় রসায়ন, পদার্থবিদ্যা, জীববিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা
প্রভৃতির উন্নতি ঘটে। হিপোক্রেটিসের বিসদৃশ বিধান এই সময়েই প্রতিষ্ঠিত হয়,
যাহা বর্তমানে এলোপ্যাথিক চিকিৎসা নামে পরিচিত। এই সময়ে তিন ধরনের চিকিৎসা
পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা লাভ করে-এলোপ্যাথিক, আয়ুর্বেদীয় ও ইউনানী। একমাত্র
রাষ্ট্রীয় সাহায্যপুষ্ট এলোপ্যাথিক চিকিৎসাই বিজ্ঞানমুখী হইয়া শ্রেষ্ঠ আসন
লাভ করে।
৪. বৈজ্ঞানিক যুগ।
এই
যুগে চিকিৎসা বিদ্যার ব্যাপক উন্নতি ঘটে এবং কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ
আবিস্কারের ফলে এক বিপবাত্মক পরিবর্তন সাধিত হয়। লুইপাস্তরের জীবাণু
আবিস্কার, কক কর্তৃক যক্ষ্মার জীবাণু আবিস্কার, আইজ্যাক নিউটনের
পদার্থবিদ্যায় গুরুত্বপূর্ণ কিছু আবিস্কার, রসায়ন, জীববিদ্যা ও উদ্ভিত
বিদ্যার ব্যাপক উন্নতি প্রভৃতি চিকিৎসা বিদ্যার উন্নতিতে যথেষ্ট প্রভাব
বিস্তার করে। হিপোক্রেটিসের বিসদৃশনীতির চিকিৎসা রাষ্ট্রীয় সাহায্যপুষ্ট
হইলে ও সেই সাথে সাথে আয়ুর্বেদীয় ও ইউনানী চিকিৎসা প্রচলিত থাকে। অথচ
হিপোক্রেটিসের অন্য দিকে সদৃশনীতির কোন উন্নতি সাধিত হয় নাই। তবে প্রচলিত
শ্রেষ্ঠতম চিকিৎসা বলিতে শুধু এলোপ্যাথিক চিকিৎসাই প্রাধান্য লাভ করে।
৫. আধুনিক বিজ্ঞানের স্বর্ণযুগ।
ডাক্তার
হ্যানিমান অষ্টাদশ শতাব্দীতেই হিপোক্রেটিসের প্রথম পদ্ধতি ব্যর্থ প্রমাণ
করিয়া সদৃশ বিধানের সার্থকতা তুলিয়া ধরেন এবং রোগারোগ্য প্রাকৃতিক বিধানের
আবিস্কার দ্বারা এক নবতর আরোগ্য কলার উদ্ভাবন করেন। এই চিকিৎসা পদ্ধতি
হোমিওপ্যাথি নামে খ্যাত। এলোপ্যাথি চিকিৎসায় প্রকৃত আরোগ্য লাভে ব্যর্থতা
এবং হোমিও চিকিৎসায় অর্থাৎ সদৃশ বিধানে রোগীর পূর্ণ সুস্থতা ও আরোগ্য লাভের
ফলে হোমিও চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রসার বৃদ্ধি পাইতে থাকে। জার্মানী হইতে
সারা বিশ্বে ধীরে ধীরে এর ব্যাপকতা বৃদ্ধি পায়। সৃষ্টি হয় চিকিৎসার এক নব
দিগন্ত, প্রত্যয়দীপ্ত সম্ভাবনার যুগ। আধুনিক বিজ্ঞানের স্বর্ণযুগে বর্তমানে
হোমিওপ্যাথি, এলোপ্যাথি, আয়ুর্বেদীয় ও ইউনানী এই চারটি চিকিৎসা পদ্ধতি
প্রচলিত।
চিকিৎসাবিদ্যা অনেকগুলো শাখায় বিভক্ত। এগুলোকে তিনভাগে ভাগ করা যায়।
প্রাথমিক বা বেসিক- বেসিক শাখাগুলোর মধ্যে রয়েছে এনাটমী বা অঙ্গংস্থানতত্ত্ব, ফিজিওলজি বা শারীরতত্ত্ব, বায়োকেমিস্ট্রি বা প্রাণরসায়ন ইত্যাদি।
প্যারাক্লিনিক্যাল- প্যারাক্লিনিক্যাল শাখার মধ্যে অণুজীববিদ্যা, রোগতত্ত্ব বা প্যাথোলজি, ভেষজতত্ত্ব বা ফার্মাকোলজি অন্যতম।
ক্লিনিক্যাল- ক্লিনিক্যাল হলো প্রায়োগিক চিকিৎসাবিদ্যা। এর প্রধান দুটি শাখা হলো, মেডিসিন এবং শল্যচিকিৎসা বা সার্জারি।
আরও
আছে ধাতৃ ও স্ত্রীরোগবিদ্যা, শিশুরোগবিদ্যা বা পেডিয়াট্রিক্স,
মনোরোগবিদ্যা বা সাইকিয়াট্রি, ইমেজিং ও রেডিওলোজি ইত্যাদি। এগুলোর
সবগুলোরই আবার বহু বিশেষায়িত্ব শাখা রয়েছে।
১. এনাটমি- এনাটমি
হচ্ছে জীবের শারীরিক কাঠামো নিয়ে অধ্যয়ন সংক্রান্ত বিদ্যা । তাছাড়া
ম্যাক্রোস্কোপিক বা গ্রস এনাটমি , সায়োটোলজি এবং হিস্টোলজিও তার সাথে
সংশ্লিষ্ট বিষয়।
২. জৈব রসায়ন- জীবজন্তুর ক্ষেত্রে বিশেষ করে কাঠামোগত পদার্থের গঠন এবং কার্যকারিতা নিয়ে আলোচনা করে।
৩. বায়োমেকানিকস- বায়োমেকানিকস হল যান্ত্রিক পদ্ধতির দ্বারা জৈবিক পদ্ধতির কাঠামো এবং ক্রিয়াকলাপের অধ্যয়ন সংক্রান্ত বিদ্যা।
৪. বায়োস্ট্যাটিক্স- বায়োস্ট্যাটিক্স হল জীববিজ্ঞান এর বিস্তৃত প্রয়োগ । বায়োস্ট্যাটিক্সের জ্ঞান চিকিৎসা গবেষণার পরিকল্পনা, মূল্যায়ন এবং ব্যাখ্যার জন্য অপরিহার্য। এটি মহামারীবিদ্যা এবং প্রমাণ ভিত্তিক ঔষধের জন্যও মৌলিক বিষয় হিসাবে কাজ করে।
৫. জীবজগতবিজ্ঞান- এটি আন্তঃসম্পর্কিত একটি বিজ্ঞান যা জৈবিক পদ্ধতিগুলি অধ্যয়ন করার জন্য পদার্থবিজ্ঞান ও শারীরিক রসায়ন পদ্ধতির সাহায্য নিয়ে থাকে।
৬. কোষবিদ্যা- এটি পৃথক কোষগুলির মাইক্রোস্কোপিক গবেষণা সংক্রান্ত বিদ্যা ।
৭. ভ্রূণবিদ্যা- এটি কী করে ভ্রূণের বিকাশ ঘটে তা নিয়ে গবেষণা সংক্রান্ত বিদ্যা । ১৮৮৫ সালে লুই পাস্তুর তার পরীক্ষাগারে ভ্রূণবিদ্যা নিয়ে প্রথম গবেষণা করেছিল।
৮. এন্ডোক্রিনোলজি- এটি হরমোন এবং পশুদের সমগ্র শরীর জুড়ে তাদের প্রভাব নিয়ে অধ্যয়ন সংক্রান্ত বিদ্যা ।
৯. মহামারীবিদ্যা- মহামারী রোগের প্রক্রিয়ায় জনসংখ্যাতাত্ত্বিক গবেষণা কাজে এই বিষয়টি ব্যবহৃত হয়, কিন্তু এটি শুধু মহামারী গবেষণা কাজের মধ্যেই সীমিত নয়।
১০. জেনেটিক্স- জিন গবেষণা, জৈবিক উত্তরাধিকার এবং তাদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করে।
১১. হিস্টোলজি- এটি আলোর মাইক্রোস্কোপি, ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপি এবং ইমিউনোহিসটোমমিশ্রিয়া দ্বারা জৈবিক টিস্যুর গঠনগুলির অধ্যয়ন সংক্রান্ত বিদ্যা।
১২. ইমিউনোলজি- ইমিউন সিস্টেম নিয়ে অধ্যয়ন সংক্রান্ত বিদ্যা , উদাহরণস্বরূপ, যা মানুষের মধ্যে সহজাত এবং অভিযোজিত ইমিউন সিস্টেম নিয়ে আলোচনা করে।
১৩. চিকিৎসা পদার্থবিদ্যা- চিকিৎসা ক্ষেত্রে পদার্থবিজ্ঞানের নীতির প্রয়োগগুলি নিয়ে আলোকপাত করে।
১৪. মাইক্রোবায়োলজি- এটি প্রোটোজোয়া, ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গি এবং ভাইরাস সহ সুক্ষতত্ত্ব নিয়ে অধ্যয়ন সংক্রান্ত বিদ্যা।
১৫. আণবিক জীববিদ্যা- জেনেটিক উপাদান এর প্রতিলিপি এবং অনুবাদ প্রক্রিয়ার আণবিক ভিত্তি নিয়ে অধ্যয়ন সংক্রান্ত বিদ্যা ।
১৬. স্নায়ুবিজ্ঞান- এটি স্নায়ুতন্ত্রের গবেষণার সাথে সম্পর্কিত বিজ্ঞানগুলির অন্তর্ভুক্ত। স্নায়ুবিজ্ঞান এর প্রধান আলোচ্য বিষয় হল মানব মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ড। স্নায়ুবিদ্যা, নিউরো-সার্জারি এবং মানসিক রোগ সংক্রান্ত বিষয়গুলো স্নায়ুবিজ্ঞান এর অন্তর্ভুক্ত ।
১৭. পুষ্টি বিজ্ঞান- (তাত্ত্বিক ফোকাস) এবং ডাইটিটিক্স (বাস্তব ফোকাস) খাদ্য এবং পানির সাথে স্বাস্থ্য, রোগের সম্পর্ক নিয়ে আলোকপাত করে। চিকিৎসা পুষ্টি থেরাপি মূলত ডায়েটিশিয়ান দ্বারা পরিচালিত হয় এবং বিভিন্ন রোগ যেমন ,ডায়াবেটিস, কার্ডিওভাসকুলার রোগ, ওজন এবং খাবার গ্রহণের মাধ্যমে যে রোগ হয়, এলার্জি, অপুষ্টি, এবং নিউপ্লাস্টিক রোগের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়।
১৮. প্যাথলজি- এটি রোগের কারণ, কোর্স, অগ্রগতি এবং তার রেজোল্যুশন নিয়ে গবেষণা সংক্রান্ত বিদ্যা ।
১৯. ফার্মাকোলজি - এটি মূলত ড্রাগ এবং তাদের কর্ম প্রণালী নিয়ে পর্যালোচনা করে ।
ফোটোবায়োলজি- এটি non- ionizing এর বিকিরণ এবং জীবন্ত প্রাণীর মধ্যে পারস্পরিক ক্রিয়া নিয়ে অধ্যয়ন সংক্রান্ত বিদ্যা ।
২০. শারীরবৃত্তীয়- শরীরের সাধারণ কাজ এবং অন্তর্নিহিত নিয়ন্ত্রক প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণা সংক্রান্ত বিদ্যা ।
২১. রেডিওবায়োলজি- আয়নীকরণ , বিকিরণ এবং জীবন্ত প্রাণীর মধ্যে পারস্পরিক ক্রিয়া সম্পর্কিত গবেষণা সংক্রান্ত বিদ্যা ।
২২. বিষক্রিয়াবিদ্যা- এটি ওষুধ এর বিষাক্ত এবং বিপজ্জনক প্রভাব নিয়ে গবেষণা সংক্রান্ত বিদ্যা।
২. জৈব রসায়ন- জীবজন্তুর ক্ষেত্রে বিশেষ করে কাঠামোগত পদার্থের গঠন এবং কার্যকারিতা নিয়ে আলোচনা করে।
৩. বায়োমেকানিকস- বায়োমেকানিকস হল যান্ত্রিক পদ্ধতির দ্বারা জৈবিক পদ্ধতির কাঠামো এবং ক্রিয়াকলাপের অধ্যয়ন সংক্রান্ত বিদ্যা।
৪. বায়োস্ট্যাটিক্স- বায়োস্ট্যাটিক্স হল জীববিজ্ঞান এর বিস্তৃত প্রয়োগ । বায়োস্ট্যাটিক্সের জ্ঞান চিকিৎসা গবেষণার পরিকল্পনা, মূল্যায়ন এবং ব্যাখ্যার জন্য অপরিহার্য। এটি মহামারীবিদ্যা এবং প্রমাণ ভিত্তিক ঔষধের জন্যও মৌলিক বিষয় হিসাবে কাজ করে।
৫. জীবজগতবিজ্ঞান- এটি আন্তঃসম্পর্কিত একটি বিজ্ঞান যা জৈবিক পদ্ধতিগুলি অধ্যয়ন করার জন্য পদার্থবিজ্ঞান ও শারীরিক রসায়ন পদ্ধতির সাহায্য নিয়ে থাকে।
৬. কোষবিদ্যা- এটি পৃথক কোষগুলির মাইক্রোস্কোপিক গবেষণা সংক্রান্ত বিদ্যা ।
৭. ভ্রূণবিদ্যা- এটি কী করে ভ্রূণের বিকাশ ঘটে তা নিয়ে গবেষণা সংক্রান্ত বিদ্যা । ১৮৮৫ সালে লুই পাস্তুর তার পরীক্ষাগারে ভ্রূণবিদ্যা নিয়ে প্রথম গবেষণা করেছিল।
৮. এন্ডোক্রিনোলজি- এটি হরমোন এবং পশুদের সমগ্র শরীর জুড়ে তাদের প্রভাব নিয়ে অধ্যয়ন সংক্রান্ত বিদ্যা ।
৯. মহামারীবিদ্যা- মহামারী রোগের প্রক্রিয়ায় জনসংখ্যাতাত্ত্বিক গবেষণা কাজে এই বিষয়টি ব্যবহৃত হয়, কিন্তু এটি শুধু মহামারী গবেষণা কাজের মধ্যেই সীমিত নয়।
১০. জেনেটিক্স- জিন গবেষণা, জৈবিক উত্তরাধিকার এবং তাদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করে।
১১. হিস্টোলজি- এটি আলোর মাইক্রোস্কোপি, ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপি এবং ইমিউনোহিসটোমমিশ্রিয়া দ্বারা জৈবিক টিস্যুর গঠনগুলির অধ্যয়ন সংক্রান্ত বিদ্যা।
১২. ইমিউনোলজি- ইমিউন সিস্টেম নিয়ে অধ্যয়ন সংক্রান্ত বিদ্যা , উদাহরণস্বরূপ, যা মানুষের মধ্যে সহজাত এবং অভিযোজিত ইমিউন সিস্টেম নিয়ে আলোচনা করে।
১৩. চিকিৎসা পদার্থবিদ্যা- চিকিৎসা ক্ষেত্রে পদার্থবিজ্ঞানের নীতির প্রয়োগগুলি নিয়ে আলোকপাত করে।
১৪. মাইক্রোবায়োলজি- এটি প্রোটোজোয়া, ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গি এবং ভাইরাস সহ সুক্ষতত্ত্ব নিয়ে অধ্যয়ন সংক্রান্ত বিদ্যা।
১৫. আণবিক জীববিদ্যা- জেনেটিক উপাদান এর প্রতিলিপি এবং অনুবাদ প্রক্রিয়ার আণবিক ভিত্তি নিয়ে অধ্যয়ন সংক্রান্ত বিদ্যা ।
১৬. স্নায়ুবিজ্ঞান- এটি স্নায়ুতন্ত্রের গবেষণার সাথে সম্পর্কিত বিজ্ঞানগুলির অন্তর্ভুক্ত। স্নায়ুবিজ্ঞান এর প্রধান আলোচ্য বিষয় হল মানব মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ড। স্নায়ুবিদ্যা, নিউরো-সার্জারি এবং মানসিক রোগ সংক্রান্ত বিষয়গুলো স্নায়ুবিজ্ঞান এর অন্তর্ভুক্ত ।
১৭. পুষ্টি বিজ্ঞান- (তাত্ত্বিক ফোকাস) এবং ডাইটিটিক্স (বাস্তব ফোকাস) খাদ্য এবং পানির সাথে স্বাস্থ্য, রোগের সম্পর্ক নিয়ে আলোকপাত করে। চিকিৎসা পুষ্টি থেরাপি মূলত ডায়েটিশিয়ান দ্বারা পরিচালিত হয় এবং বিভিন্ন রোগ যেমন ,ডায়াবেটিস, কার্ডিওভাসকুলার রোগ, ওজন এবং খাবার গ্রহণের মাধ্যমে যে রোগ হয়, এলার্জি, অপুষ্টি, এবং নিউপ্লাস্টিক রোগের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়।
১৮. প্যাথলজি- এটি রোগের কারণ, কোর্স, অগ্রগতি এবং তার রেজোল্যুশন নিয়ে গবেষণা সংক্রান্ত বিদ্যা ।
১৯. ফার্মাকোলজি - এটি মূলত ড্রাগ এবং তাদের কর্ম প্রণালী নিয়ে পর্যালোচনা করে ।
ফোটোবায়োলজি- এটি non- ionizing এর বিকিরণ এবং জীবন্ত প্রাণীর মধ্যে পারস্পরিক ক্রিয়া নিয়ে অধ্যয়ন সংক্রান্ত বিদ্যা ।
২০. শারীরবৃত্তীয়- শরীরের সাধারণ কাজ এবং অন্তর্নিহিত নিয়ন্ত্রক প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণা সংক্রান্ত বিদ্যা ।
২১. রেডিওবায়োলজি- আয়নীকরণ , বিকিরণ এবং জীবন্ত প্রাণীর মধ্যে পারস্পরিক ক্রিয়া সম্পর্কিত গবেষণা সংক্রান্ত বিদ্যা ।
২২. বিষক্রিয়াবিদ্যা- এটি ওষুধ এর বিষাক্ত এবং বিপজ্জনক প্রভাব নিয়ে গবেষণা সংক্রান্ত বিদ্যা।
Samuel Hahnemann এর সংক্ষিপ্ত পরিচয়
ক্রিস্টিয়ান
ফ্রিডরিখ স্যামুয়েল হ্যানিম্যান (১০ এপ্রিল ১৭৫৫ - ২ জুলাই ১৮৪৩)
জার্মানির একজন বিখ্যাত চিকিৎসক ছিলেন, তিনি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার
আবিষ্কারক।
হ্যানিম্যান
১৮০৫ সালে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা চালু করেন। ১৮১০ সালে চিকিৎসা নিয়মাবলী
সংক্রান্ত গ্রন্থ অর্গানন অব রেসনাল হেলিং আর্ট (Organon der rationellen
Heilkunde) জার্মানি ভাষায় প্রকাশ করেন যা পরবর্তীকালে অর্গানন অব মেডিসিন
নামে প্রকাশিত হয়। তিনি ১৮১২ সালের ২৯ শে সেপ্টেম্বর হতে ১৮২১ সাল
পর্যন্ত লিপজিগ বিশ্বিবিদ্যালয়ে হোমিওপ্যাথি বিষয়ে শিক্ষা দান করেন। তিনি ১৮৩৫ সালের জুন মাসে জার্মানি ছেড়ে প্যারিসে
বসবাস শুরু করেন এবং ১৮৪৩ সালে প্যারিসেই মৃত্যুবরণ করেন।
স্যামুয়েল হ্যানিম্যানের বাল্যকাল
জামুয়্যেল
হ্যানিম্যান (জার্মান উচ্চারণ) জার্মানির সাক্সনী রাজ্যের ড্রেসড্রেন
শহরের নিকটে মিশেনে জন্মগ্রহণ করেন।
পিতা- ক্রিশ্চিয়ান গটফ্রিড
হ্যানিম্যান Christian Gottfried Hahnemann চীনামাটির পাত্রের জন্য বিখ্যাত
শহর মিশেনে একজন চীনামাটির পাত্রের ডিজাইনার ও পেইন্টার ছিলেন। তিনি পিতা
মাতার ৫ জন সন্তানের মধ্য ৩য় ছিলেন এবং শিশু বয়সেই বিজ্ঞান ও ভাষা
শিক্ষায় দক্ষতা প্রদর্শন করেন।
মাতা-
জোহানা ক্রিশ্চিয়ানা (Johonna Christiana) ছিলেন তার পিতার দ্বিতীয়
স্ত্রী। তার গর্ভে স্যামুয়েল হ্যানিম্যান ছাড়াও অগাস্ট হ্যানিম্যান
(August Hahnemann), চার্লোটি হ্যানিম্যান (Charlotee Hahnemann) ও মিনা
হ্যানিম্যান (Minna Hahnemann) নামে এক ভাই ও দু’ বোনের জন্ম হয়।
পিতামহ- ক্রিস্টফ হ্যানিম্যান (Christoph Hahnemann) তিনি জার্মানির লচেস্টেডে রং-তুলির কাজ করতেন।
স্যামুয়েল হ্যানিম্যানের শিক্ষা জীবন
স্যামুয়েল
হ্যানিম্যান এর বাল্যশিক্ষা ও লেখাপড়ায় হাতে খড়ি হয় বাবা-মায়ের কাছ
থেকে। ১৭৬৭ সালের ২০ জুলাই ১২ বছর ২ মাস ১০ দিন বয়সে তাকে মিসেনের টাউন
স্কুলে ভর্তি করা হয়। অতঃপর তিনি ১৭৭৪ সালের ২০ নভেম্বর ১৯ বছর বয়সে
ফার্স্টেন অ্যাডল্যান্ডে স্কুল সেন্ট আফ্রা স্কুলে ভর্তি হন। এখানে তিনি
হিপোক্র্যাটিসের লেখার সাথে পরিচিত হওয়ার পাশাপাশি ল্যাটিন, গ্রীক ও
হিব্রু ভাষা এবং ইতিহাস, পদার্থবিদ্যা ও উদ্ভিদবিদ্যা শিক্ষা লাভ করেন। চিকিৎসা
বিদ্যা ছিল তার প্রিয় বিষয়। ১৭৭৫ সালে বিশ বছর বয়সে তিনি লিপজিগ
বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিসিন বিভাগে ভর্তি হন। কিন্তু তিনি এ প্রতিষ্ঠানের
অব্যবস্থাপনা ও কম সুযোগ সুবিধার জন্য অস্বস্তি বোধ করেন। মেডিসিন
শিক্ষার্থীদের জন্য লিপজিগে না ছিল ক্লিনিক, না ছিল হাসপাতাল। হ্যানিম্যান
লিপজিগে ঔষধ নিয়ে দুই বছর পড়াশোনা করেন। তার আয় কম থাকার কারণে তিনি
অর্থের বিনিময়ে ইংরেজি হতে বই অনুবাদ এবং ধনী গ্রীকদেরকে ফ্রেঞ্চ ভাষা
শিখানোর কাজ শুরু করেন। এভাবেই হ্যানিম্যান এর নিয়মিত ছাত্রজীবনের ইতি
ঘটে।
পরবর্তীতে
১৭৭৭ সালে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনার লিওপোল্ডস্টট জেলার ব্রাদার্স অব মার্সি
হাসপাতালে চিকিৎসা বিদ্যা শিখতে আসেন। এখানে তিনি হিপোক্রিটাস, গ্যালেন ও
স্টোয়ার্কের লেখাগুলিা সম্পর্কে ভালভাবে জানতে পারেন। এছাড়াও প্রখ্যাত
চিকিৎসক জেভন কোয়ারিনের প্রত্যক্ষ সহানুভূতি লাভ করে তার কাছে হাতে কলমে
রোগী দেখার শিক্ষা পান। এ হাসপাতালে নয় মাস থাকার পর ছাত্রাবাস হতে
হ্যানিম্যানের অর্থ চুরি যাবার ফলে ও দারিদ্রতার কারণে তার লেখাপড়া বন্ধ
হয়ে যায়। তখন প্রফেসর জেভন কোয়ারিনের সহযোগিতায় তিনি
ট্রানসেলভ্যানিয়ার গভর্নর ব্যারণ এস ভন ব্রউঁকেনথল এর সাথে
হার্মানস্ট্যাটে চলে যান। এখানে তিনি গভর্নরের মুদ্রা ও চিত্রকর্মের
সংগ্রহশালার তত্ত্বাবধায়ক, লাইব্রেরিয়ান ও পারিবারিক চিকিৎসক হিসেবে কাজ
করেন। একই সাথে হাতে কলমে বাইরের রোগী দেখার ও ব্যাপক পড়াশুনার সুযোগ পান।
এরপর আবার ১ বছর ৯ মাস পরে ১৭৭৯ সালে এরল্যাঞ্জেন বিশ্ববিদ্যালয়ে
পড়াশুনা শুরু করেন। এখানে তিনি হেফ্রাথ স্কেবারের কাছে এসে উদ্ভিদ বিদ্যায়
পারদর্শী হন এবং ১৭৭৯ সালের ১০ ই আগস্ট চিকিৎসাবিদ্যায় ডক্টরেট অব
মেডিসিন বা এম.ডি ডিগ্রী লাভ করেন। এ ডিগ্রী লাভের জন্য হ্যানিম্যান “
আপেক্ষিক রোগের কারণ ও এর চিকিৎসা” (Conspectus adfectuum spasmodicorum
aetiologicus et therapeuticus) বিষয়ে ২০ পৃষ্ঠা ব্যাপী একখানা ছাপানো
গবেষণাপত্র পেশ করেছিলেন।
ভাষাবিদ, অনুবাদক ও লেখক হিসাবে স্যামুয়েল হ্যানিম্যান
স্যামুয়েল
হ্যানিম্যান ২২ বছর বয়সে ১১টি ভাষায় সুপন্ডিত হন, যেমন- জার্মান, গ্রীক,
ল্যাটিন, ইংরেজি, ইতালীয়, হিব্রু, সিরিয়ান, আরবি, স্প্যানিশ, ফরাসি ও
চ্যাডউইক। মিসেনের টাউন স্কুলে পড়ার সময় তিনি তার নিচের শ্রেনীর
শিক্ষার্থীদেরকে গ্রীক ভাষা শেখাতেন। সেন্ট আফ্রা বিদ্যালয় হতে বিদায়ের
সময় “মানুষের হাতের অদ্ভুদ গড়ন” শিরোনামে ল্যাটিন ভাষায় প্রবন্ধ লেখেন।
লিপজিকে পড়ার সময় রাতে ধনী গ্রীক সন্তানদেরকে জার্মান ও ফ্রেঞ্চ ভাষা
শেখাতেন।
তিনি
একজন নামকরা অনুবাদক ছিলেন। বিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসা বিজ্ঞান,
কৃষিবিদ্যা, দর্শন, সাধারণ সাহিত্যকর্ম বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন ভাষা হতে
জার্মান ভাষায় অসংখ্য বইপত্র অনুবাদ করেন। যেমন-
(১) ইংরেজি ভাষা হতে ১৫ টি বইয়ের মোট ২১ খন্ড (১৭৭৭-১৮০০),
(২) ফ্রেঞ্চ বা ফরাসি ভাষা হতে ৬ টি বইয়ের মোট ৯টি খন্ড (১৭৮৪-১৭৯৬),
(৩) ইতালীয় ভাষা হতে ১ টি (১৭৯০) ও
(৪) ল্যাটিন হতে ১ টি বই (১৮০৬)।
তার
এ অসাধারণ ভাষাজ্ঞান ও অনুবাদ-কর্ম পরবর্তী কালে নিজের অসংখ্য লেখার উপর
প্রভাব বিস্তার করেছিল। নিজেও তা থেকে ব্যাপক জ্ঞান লাভ করেন। এমনকি ১৭৯০
সালে উইলিয়াম কুলেন (১৭১০-১৭৯০) এর ইংরেজি লেখা “ এ টিয়েটাইজ অব
মেটেরিয়া মেডিকা” এর দ্বিতীয় খন্ড অনুবাদ কালে তিনি হোমিওপ্যাথির আরোগ্য
নীতি “লাইক কিউর লাইক” আবিষ্কার করেন। তিনি ১৮০৪ সালে দেশাউতে অবস্থানকালে
প্রচলিত অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা সেবা প্রদান হতে বিরত থাকেন এবং কেবল মাত্র
লেখার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। “ এই সকল অজানা চিকিৎসা পদ্ধতি দ্বারা আমার
রোগভোগকারী ভাইদেরকে চিকিৎসা করতে আমার বিবেক আমাকে সহজেই অনুমোদন দেয় না।
চিন্তাধারা এমনদিকে যাচ্ছিল যেন আমি একজন অনিষ্টকারী খুনি অথবা মানুষের
অমঙ্গলসাধক, সুতরাং আমি আমার বিয়ের প্রথম বছরেই এই ভয়ানক চিকিৎসা পদ্ধতি
ছেড়েই দেই এবং নিজেকে রসায়ন শাস্ত্র ও অনুবাদকের কাজে নিয়োজিত করি”।
এছাড়া ১৭৭৯ সাল থেকে ১৮৪৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন ভাষায় অসংখ্য মৌলিক
রচনাদি, বই পত্র, পত্রিকায় প্রবন্ধ রচনা করেন।
হ্যানিম্যানের রচনাবলীঃ
হ্যানিম্যানের বই সমূহঃ
১) ফ্রাগমেন্ট দ্য ভিরিবাস মেডিকামেন্টোরাম পজিটিভিজ সিভ ইন স্যানোকর্পোরি হিউম্যানো অবজার্ভেটিস -১৮০৫.
২)অর্গানন অব আর্ট অব হেলিং -১৮১০.
৩) মেটেরিয়া মেডিকা পিউরা-১৮১১.
৪) রেপার্টরিয়াম -১৮১৭.
৫) ক্রণিক ডিজিজেস, দেয়ার পিকিউলিয়ার নেচার এন্ড হোমিওপ্যাথিক কিউর -১৮২৮.
৬) স্ক্রফিউলা ক্ষত ও এর চিকিৎসা
৭) যৌন রোগে সার্জনদের প্রতি নির্দেশনা -১৭৮৯.
হ্যানিম্যানের প্রবন্ধ সমূহঃ
১) ডা. ক্রেব এর চিকিৎসা বিষয়ক গবেষণা -১৭৮১.
২) পুরাতন ক্ষত ও আলসার রোগের নির্দেশনা -১৭৮৪.
৩) চিকিৎসা বিদ্যার পুনর্জন্মের প্রয়োজন
৪) আর্সেনিকের বিষক্রিয়া, এর চিকিৎসা ও বিচার বিভাগীয় সত্য উদ্ঘাটন -১৭৮৬.
৫) পিত্ত ও পিত্তপাথুরী
৬) পচন নিরোধক একটা অসাধারণ শক্তিশালী ঔষধ -১৭৮৮.
৭) স্বাস্থের বন্ধু-১৭৮৯.
এছাড়াও যা উল্লেখ যোগ্যঃ
১) ঔষধ প্রুভিং রিপোর্টের ওপর লেখা ১০ খন্ড বই।
২) রসায়ন ও চিকিৎসা বিদ্যার ওপর লেখা ৭০টি মৌলিক রচনা।
৩)
২৪ জন লেখকের ইংরেজি, ল্যাটিন, ফরাসি ও ইতালীয় ভাষার লেখা থেকে জার্মান
ভাষায় অনূদিত ২৩ খানা বইয়ের সর্বমোট ৩২ খন্ড রচনা সম্ভার।
৪) রোগীর কেস রেকর্ড বই-৫৪ টি।
শিক্ষক হিসাবে স্যামুয়েল হ্যানিম্যান
ছাত্র
জীবনের হ্যানিম্যান বিভিন্ন ভাষা শেখানের শিক্ষক ছিলেন। কিন্তু তিনি
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার করার পর, হোমিওপ্যাথি শিক্ষার প্রচার ও
প্রসারের জন্য হোমিওপ্যাথি হাসপাতালের সংলগ্ন কলেজ প্রতিষ্ঠা করতে
চেয়েছিলেন। তবে তা সফল হয় নি। ১৮১১ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি ৬ মাস
ব্যাপী শিক্ষা কোর্সের জন্য এক বিজ্ঞপ্তি দেন কিন্তু তা ছাত্রদের উৎসাহের
অভাবে কার্যকর হয় নি। অতঃপর ১৮১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর হতে ১৮২১ সাল
পর্যন্ত লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি বছর ছয় মাস ধরে হোমিওপ্যাথি বিষয়ে
lecture দিতেন। প্রত্যেক শনি ও বুধবার বিকাল ২টা হতে ৩টা পর্যন্ত এ ক্লাশ
চলত। তার এ ক্লাশে ছাত্র, চিকিৎসক, আইনজীবী, বুদ্ধিজীবী, যুবক, বৃদ্ধ
প্রভৃতি ধরনের লোকের সমাবেশ ঘটে।
রসায়নবিদ ও ঔষধ প্রস্তুতকারকঃ
রসায়নবিদ
হিসেবে হ্যানিম্যানের সুখ্যাতি ছিল। তিনি সর্ব প্রথম পারদ এর শক্তিকরণ
(Dynamization) ও ব্যবহার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। হ্যানিম্যান এ সমন্ধে অনেক
প্রবন্ধ ও বই রচনা করেন। অনেক বই অনুবাদও করেন। তার এসব অবদানের জন্য
ক্রেল, গটলিং, স্কিরার, টম্স ডর্ফ, ক্রাউস, গমেলিন প্রমূখ বিখ্যাত প্রফেসর ও
প্রখ্যাত রসায়নবিদ বার্জেলিয়াস ভূয়সী প্রশংসা করেন। হ্যানিম্যান শুধু
রসায়নবিদই ছিলেন না, তিনি নিজেই ঔষধ আবিষ্কার, প্রস্তুত ও রোগীদেরকে
প্রয়োগ করতেন। কিন্তু এ নতুন ঔষধ প্রস্তুত ও প্রচলন এবং একজন চিকিৎসক হয়ে
নিজের ঔষধ নিজে প্রস্তুত করায় লিপজিকের অ্যালোপ্যাথি ঔষধ প্রস্তুতকারক ও
বিক্রেতারা হ্যানিম্যানের চরম বিরোধিতা করেন। এমনকি তাকে লিপজিগ থেকে
তাড়ানোর চেষ্টা করেন।
অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসকঃ
হ্যানিম্যান
তার পূর্বের আড়াই হাজার বছরের চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাস অধ্যয়ণ ও
পর্যালোচনা করেন। তিনি ১৭৭৮-১৭৭৯ সাল পর্যন্ত ছাত্র অবস্থাতেই
ট্রানসেলভেনিয়ার গভর্নরের পারিবারিক চিকিৎসক ছিলেন। এছাড়া এসময় বাইরের
রোগীও দেখতেন। কিন্তু এম.ডি ডিগ্রীধারী চিকিৎসক হিসেবে ১৭৮১ সালে তাম্রখনি
অঞ্চল হিসেবে খ্যাত ম্যান্সফিল্ড রাজ্যের হেটস্টেড শহরে সর্বপ্রথম চিকিৎসা
পেশা শুরু করেন। ১৭৮১ সালের শেষ দিকে তিনি ম্যাগডিবার্গের নিকটবর্তী গোমেরন
এ জেলা মেডিকেল অফিসার নিযুক্ত হন। এসময় তিনি প্রচলিত অ্যালোপ্যাথি
চিকিৎসার কুফল ও অসারতা উপলব্ধি করে তার বিভিন্ন প্রবন্ধ ও বইতে এ বিষয়ে
তীব্র সমালোচনা শুরু করেন। যেমন প্রবন্ধ ডা. ক্রেব এর “চিকিৎসা বিষয়ক
গবেষণা” (১৭৮১),“ পুরাতন ক্ষত ও আলসার রোগের নির্দেশনা” (১৭৮৪), “চিকিৎসা
বিদ্যার পুনর্জন্মের প্রয়োজন” ও বই “ স্ক্রফিউলা ক্ষত ও এর চিকিৎসা”। ১৭৮৫
সালে তিনি ড্রেসড্রেনে আসেন এবং ১ বছর শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে কাজ করেন ও
চিকিৎসা আইনবিদ্যায় দক্ষতা অর্জন করেন। এসময় তিনি “আর্সেনিকের
বিষক্রিয়া, এর চিকিৎসা ও বিচার বিভাগীয় সত্য উদ্ঘাটন” (১৭৮৬); “পিত্ত ও
পিত্তপাথুরী” এবং “পচন নিরোধক একটা অসাধারণ শক্তিশালী ঔষধ” (১৭৮৮) নামে
কয়েকটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। ১৭৮৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে তিন লিপজিকে
চিকিৎসা শুরু করেন। এসময় তার “ যৌন রোগে সার্জনদের প্রতি নির্দেশনা”
(১৭৮৯) পুস্তিকা প্রকাশ পায়। ১৭৮৯ সালে “স্বাস্থের বন্ধু” বইতে স্বাস্থ
বিধি ও জলাতংক রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে মূল্যবান বক্তব্য রাখেন এবং “সিফিলিস
প্রসংগে” প্রবন্ধে সিফিলিসে পারদের সূক্ষ্মমাত্রা ব্যবহারের নির্দেশ দেন।
হোমিওপ্যাথি আবিষ্কার ও চিকিৎসকঃ
হ্যানিম্যান
তার সময়ের প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি বিরূপ ছিলেন এবং ঐ চিকিৎসার
উদ্দেশ্য তাকে ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছিল। তিনি দাবি করলেন যে তাকে যে ঔষধ
সম্পর্কে শেখানো হয়েছে তা রোগীর ভালর চেয়ে বেশি ক্ষতিকর।
“এই
সকল অজানা চিকিৎসা পদ্ধতি দ্বারা আমার রোগভোগকারী ভাইদেরকে চিকিৎসা করতে
আমার বিবেক আমাকে সহজেই অনুমোদন দেয় না। চিন্তাধারা এমনদিকে যাচ্ছিল যেন
আমি একজন অনিষ্টকারী খুনি অথবা মানুষের অমঙ্গলসাধক, সুতরাং আমি আমার বিয়ের
প্রথম বছরেই এই ভয়ানক চিকিৎসা পদ্ধতি ছেড়ে দেই এবং নিজেকে রসায়নশাস্ত্র
ও অনুবাদকের কাজে নিয়োজিত করি”
১৭৮৪
সালের দিকে চিকিৎসা পেশা ছেড়ে দেবার পর হ্যানিম্যান লেখনী ও অনুবাদকের
কাজ করে কষ্টেসৃষ্টে তার জীবন নির্বাহ এবং পাশাপাশি বিভিন্ন ঔষধে বর্ণিত
চিকিৎসাগত অসঙ্গতি বের করার কাজও করেন। উইলিয়াম কুলেন এর “এ ট্রিয়েট্রাইজ
অন মেটেরিয়া মেডিকা” (A Treatise on the Materia Medica) বইটি অনুবাদ
করার সময় হ্যানিম্যান পেরুভিয়ান বার্ক থেকে তৈরী ম্যালেরিয়া (malaria)
জ্বরের জন্য “সিঙ্কোনা” (cinchona) নামক গাছের ছালের কার্যকারিতা দেখতে
পান। হ্যানিম্যান বিশ্বাস করলেন যে ম্যালেরিয়া জ্বরে সিঙ্কোনা’র মত
অন্যান্য সহায়ক উপাদান (astringent substances) ততটা কার্যকরী নয় এবং তাই
তিনি “সিঙ্কোনা” (cinchona) গাছের বাকল এর কার্যকারীতা নিজদেহে পরীক্ষা
করা শুরু করলেন, দেখলেন যে এটা ম্যালেরিয়ার মত তার দেহে কম্পজ্বর উৎপন্ন
করছে এবং এটা যে কোন সুস্থ দেহেই করতে সক্ষম। এ বিষয়টি তাকে একটি মৌলিক
নীতির দিকে ধাবিত করে “ যা একজন সুস্থ ব্যক্তির উপর প্রয়োগের ফলে বিভিন্ন
লক্ষণ সমষ্টির উৎপন্ন করতে পারে, তা একই রকম লক্ষন সমষ্টি সমৃদ্ধ অসুস্থ
দেহে প্রয়োগ করলে নিরাময় করতে সক্ষম” এটাই “লাইক কিউর লাইক” (like cures
like) যা একটি নতুন ধারার চিকিৎসা পদ্ধতির প্রচেষ্টা এবং তিনি এর নাম দেন
হোমিওপ্যাথি। ১৮০৭ সালে হুফেলান্ড (Hufeland) জার্নাল এ প্রকাশিত
ইন্ডিকেশনস অব দ্যা হোমিওপ্যাথিক ইমপ্লয়মেন্ট অব মেডিসিনেস ইন অর্ডিনারি
প্র্যাকটিস (Indications of the Homeopathic Employment of Medicines in
Ordinary Practice) নামে এক প্রবন্ধে প্রথম “ হোমিওপ্যাথি” (homeopathy)
শব্দটি হ্যানিম্যান প্রথম ব্যবহার করেন। "২৫০০ বছরের চিকিৎসা ইতিহাসে
শুধুমাত্র আলব্রেচ ফন হেলারই বুঝতে পেরেছিলেন যে এটাই প্রাকৃতিক পদ্ধতি,
অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং সঠিক ঔষধ প্রয়োগ পদ্ধতি যা মানুষের সঠিক
স্বাস্থের উপর প্রভাব ফেলে এবং আমি তার পরবর্তী ব্যক্তি যে আবার এই
প্রাকৃতিক পদ্ধতি চালু করলাম"। হ্যানিম্যান পুরাতন চিকিৎসা পদ্ধতি
অ্যালোপ্যাথিকে ওল্ড স্কুল এর চিকিৎসা পদ্ধতি বলে অভিহিত করতেন। তিনি ১৭৯২
সালে টুরিংগেন জংগলে জর্জেন্থল এর পাগলা গারদের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
এখানে হ্যানিম্যান হ্যানোভার মন্ত্রী ক্লকেন ব্রিং এর বিষাদ উন্মাদ চিকিৎসা
করেন। এ সময় তিনি রক্তমোক্ষণকারী চিকিৎসা ব্যবস্থা ও মানসিক রোগীর
চিকিৎসার নির্যাতনমূলক পদ্ধতির তীব্র সমালোচনা করেন।
হোমিওপ্যাথির উন্নয়নঃ
১৮০১
সালে আরক্তজারের প্রতিষেধক হিসেবে তিনি “ বেলেডোনা” ব্যবহারের উপদেশ দেন।
প্রুশিয়া সরকার এটা সব চিকিৎসক কে ব্যবহার করতে নির্দেশ দেন। এছাড়াও
হ্যানিম্যান ১৮১৩ সালে জার্মানিতে টাইফাস ও হসপিটাল জারে যথাক্রমে
“ব্রায়োনিয়া” ও “রাসটক্স” ব্যবহারের পরামর্শ দেন।
তিনি হোমিওপ্যাথির উন্নয়নে যে সকল পদ্ধতি প্রচলন করেন, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য-
১) পরীক্ষামূলক ও আরোগ্যকারী সদৃশবিধানে প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতি (সিমিলিয়া-সিমিলিবাস-কিউরেন্টার),
২) সুস্থ মানব দেহে ঔষধ পরীক্ষা করে ঔষধের কার্যকরী ক্ষমতা নির্ধারণ,
৩) চিকিৎসা ক্ষেত্রে জীবনীশক্তি তত্ত্বের আবিষ্কার ,
৪) রোগ সংক্রমণ তত্ত্ব ও কলেরার কারণ প্রসংঙ্গে জীবাণুতত্ত্বের পূর্বাভাষ
৫) চির বা স্থায়ী রোগ তত্ত্ব,
৬) অপরাধ তত্ত্ব ও অপরাধ প্রবণতা,
৭) রোগীর পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা পদ্ধতি,
৮) মানসিক রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি ও নির্যাতনমূলক চিকিৎসার বিরোধিতা,
৯) ঔষধের শক্তিকরণ ও নতুন শক্তিকরণ পদ্ধতি (৫০ সহস্রতমিক পদ্ধতি),
১০) ঔষধকে শক্তিকৃত ও অবিমিশ্রিত অবস্থায় সূক্ষ্ম পরিবর্তিত মাত্রায় প্রয়োগ,
১১) পথ্যবিজ্ঞানে নির্দিষ্ট নিয়মনীতি- খাদ্যতত্ত্ব ও পথ্যাপথ্যেও প্রয়োজনীয়তা,
১২)
স্বাস্থ্যতত্ত্ব ও নাগরিক স্বাস্থ্য - পাগলাগারদ, এতিমখানা ও জেলের
স্বাস্থ্যবিধির দুর্দশা এবং ব্যয়াম সহ স্বাস্থ রক্ষার নিয়মাবলী,
১৩) সার্জারিতে ড্রাই ড্রেসিং ও অস্থি চাঁচন পদ্ধতি,
১৪)
পারদকে দ্রবীভূত করা ও এর সূক্ষ্ম উগ্রতাবিহীন প্রস্তুতি ও সফল ব্যবহার,
আর্সেনিকের ক্রিয়া প্রসংগ ও চিকিৎসা আইনে রাসায়নের অবদান, মদে ভেজাল
নির্ধারণ পদ্ধতি, বিষের ব্যবহার ও সংরক্ষণ বিধি, ব্যবস্থাপত্রের বিধি,
ভেষজের জলীয় অংশ নিষ্কাশন, বাষ্পীয় পাতন ও তরল মাধ্যমে ভেষজের নির্যাসের
বাষ্পীয়ভবন, টাটকা গাছ থেকে আরক তৈরী, ইত্যাদি। তিনি রোগ ও ঔষধের লাক্ষণিক
উৎস আবিষ্কার করে চিকিৎসা বিজ্ঞানকে বৈজ্ঞানিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠা
করেন।
পরিবার পরিজনঃ
প্রথম
স্ত্রী জোহনা হেনরিয়েটি লিওপোলডিনি কুসলার যাকে হ্যানিম্যান ২৮ বছর বয়সে
বিবাহ করেন, তখন জোহনা হেনটিয়েটির বয়স ছিল ১৯ বছর, ১৭৮২ সালের ১৭
নভেম্বর তাদের বিয়ে হয়। এঁর গর্ভে হ্যানিম্যানের ৯ কন্যা ও ২ পুত্রের
জন্ম হয়।
দ্বিতীয়
স্ত্রী মাদাম মেরী মেলানী ডি. হারভিলী হ্যানিম্যান ৮০বছর বয়সে বিবাহ
করেন, তখন ম্যালানী ডি. হারভিলীর বয়স ছিল ৩২ বছর, ১৮৩৫ সালের ১৮ জানুয়ারী
তাদের বিয়ে হয়। তিনি ছিলেন অত্যন্ত সুন্দরী, ধনবতী, বিশিষ্ট চিত্রকর ও
নামকরা কবি। হ্যানিম্যানের জীবনের চরম সাফল্যের দিনগুলিতে তিনি সুযোগ্য
সহধর্মিণী হিসেবে যথেষ্ট অবদান রাখেন। শেষ জীবনে তিনি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা
সেবা প্রদান করতেন।
মৃত্যুঃ
হ্যানিম্যান
১৮৪৩ সালের ২ জুলাই রোববার ভোর ৫ ঘটিকার সময় প্যারিসে নিজের ঘরে
মৃত্যুবরণ করেন। জীবনের শেষ বিশ বছর তিনি প্রতি বসন্তে শ্বাস নালীর সর্দি
(Bronchial Catarrh)রোগে আক্রান্ত হতেন। জীবনের শেষ মূহুর্তে ১৩ ঘণ্টা ধরে
ক্রমান্বয়ে শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়ে শ্বাস রোধ হয়ে তার মৃত্যু ঘটে। ১৮৪৩
সালে প্যারিসের মন্টমার্টরী পর্বতের সমাধিক্ষেত্রে তাকে সমাহিত করা হয়।
পরবর্তীতে ৫৫ বছর পর ১৮৯৪ সালে তাকে খ্রিষ্টান মতে পিয়ের ল্যাসেইসি
সিমেটেরিতে দাফন ও বিভিন্ন স্থানে মুর্তিসহ ৯টি স্মৃতিসৌধ স্থাপন করা হয়।
কিভাবে হ্যানিম্যান হোমিওপ্যাথি আবিষ্কার করেন ?
হোমিওপ্যাথি
একটি বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি। এটি ১৭৯৬ সালে জার্মান চিকিৎসক স্যামুয়েল
হ্যানিম্যান আবিষ্কার করেন। হোমিওপ্যাথ নামে পরিচিত এর চিকিৎসকরা বিশ্বাস
করেন যে পদার্থ সুস্থ মানুষের মধ্যে একটি রোগের উপসর্গ সৃষ্টি করে সেই একই
পদার্থ অসুস্থ মানুষের মধ্যে একই ধরনের উপসর্গ নিরাময় করতে পারে; এই
মতবাদকে বলা হয় সিমিলিয়া সিমিলিবাস কিউরেন্টার, বা "সদৃশ সদৃশকে আরোগ্য
করে"।
হ্যানিম্যান আঠারো শতকের শেষের
দিকে মূলধারার ঔষধগুলো অযৌক্তিক এবং অগ্রহণযোগ্য হিসাবে প্রত্যাখ্যান
করেছিলেন কারণ এটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অকার্যকর এবং প্রায়শই ক্ষতিকারক
ছিল।
আমি বৃথা জীবন ধারণ করিনি, সমস্ত কিছুই প্রমাণ করব, যা ভাল তা শক্ত করে ধরব’।
হ্যানিম্যানের ধারণাঃ
স্যামুয়েল হ্যানিম্যান স্মৃতিস্তম্ভ, ওয়াশিংটন ডিসি, "সিমিলিয়া সিমিলিবাস কিউরেন্টার" সদৃশ্য সদৃশ্যকে আরোগ্য করবে।
"হোমিওপ্যাথি" শব্দটি হ্যানিম্যান তৈরি করেছিলেন এবং ১৮০৭ সালে প্রথম মুদ্রণে প্রকাশিত হয়েছিল।
স্কটিশ
চিকিৎসক এবং রসায়নবিদ উইলিয়াম কুলেনের জার্মান ভাষায় একটি মেডিকেল
গ্রন্থ অনুবাদ করার সময় হ্যানিম্যান হোমিওপ্যাথি সম্পর্কে ধারণা করেছিলেন।
ম্যালেরিয়া নিরাময়ের জন্য সিনকোনার ব্যবহার সম্পর্কিত কুলেনের তত্ত্ব
সম্পর্কে সন্দেহাতীত হলেন, হ্যানিম্যান কী ঘটবে তা খতিয়ে দেখার জন্য
বিশেষভাবে কিছু ছাল খেয়েছিলেন। তিনি জ্বর, কাঁপুনি এবং জয়েন্টে ব্যথা
অনুভব করেছেন: ম্যালেরিয়ার মতোই লক্ষণগুলি। এ থেকে হ্যানিম্যান বিশ্বাস
করেছিলেন, যে সমস্ত কার্যকর ওষুধগুলি থেকে চিকিৎসা করা হয়, সেগুলোই
রোগগুলির মতো সুস্থ ব্যক্তিদের মধ্যে লক্ষণ তৈরি করে, প্রাচীন চিকিৎসকদের
প্রস্তাবিত "সাদৃশ্য বিধান" অনুসারে।
ঔষধ Proving:
হ্যানিম্যান
পরীক্ষা করতে শুরু করেছিলেন যে মানুষের মধ্যে বিভিন্ন পদার্থ কী কী প্রভাব
ফেলতে পারে, এটি একটি পদ্ধতি যা পরে "হোমিওপ্যাথিক প্রুভিং" নামে পরিচিত।
তিনি ১৮০৫ সালে প্রুভিং এর একটি সংগ্রহ প্রকাশ করেন এবং ৬৫টি প্রস্তুতির
একটি দ্বিতীয় সংকলন তাঁর বই, মেটেরিয়া মেডিকা পিউরা-এ প্রকাশিত হয়।
যেহেতু
হ্যানিম্যান বিশ্বাস করতেন যে ওষুধের বড় মাত্রা যা একই ধরনের উপসর্গ
সৃষ্টি করে তা কেবল অসুস্থতা বাড়িয়ে তুলবে, তিনি চরম সূক্ষ্ম হওয়ার
পক্ষে সমর্থন করেছিলেন। সূক্ষ্ম করার জন্য একটি কৌশল তৈরি করা হয়েছিল যা
হ্যানিম্যান দাবি করেছিলেন যে পদার্থের থেরাপিউটিক বৈশিষ্ট্যগুলি সংরক্ষণ
করবে এবং এর ক্ষতিকারক প্রভাবগুলি দূর করবে৷ হ্যানিম্যান বিশ্বাস করতেন যে
এই প্রক্রিয়াটি "অশোধিত পদার্থের আত্মার মতো ঔষধি শক্তি" বৃদ্ধি করেছে।
তিনি তার নতুন চিকিৎসা পদ্ধতির একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ সংগ্রহ করেন এবং
প্রকাশ করেন, দ্যা অর্গানন অফ দ্যা হিলিং আর্ট (১৮১০), ১৯২১ সালে প্রকাশিত
ষষ্ঠ সংস্করণ যা আজও হোমিওপ্যাথরা ব্যবহার করে
মায়াজম এবং রোগঃ
অর্গানন
-এ, হ্যানিম্যান "মায়াজম" -এর ধারণাকে "সংক্রামক নীতি" হিসেবে
অন্তর্নিহিত দীর্ঘস্থায়ী রোগ এবং "অত্যাবশ্যক শক্তির অদ্ভুত
রোগবিকৃতিগুলি" হিসাবে। হ্যানিম্যান প্রতিটি মায়াজমকে নির্দিষ্ট রোগের
সাথে যুক্ত করতেন এবং মনে করতেন যে মায়াজমের প্রাথমিক সংস্পর্শে স্থানীয়
উপসর্গ সৃষ্টি করে, যেমন ত্বক বা যৌনরোগ।
মায়াজমের
জন্য হ্যানিম্যানের হাইপোথেসিস মূলত তিনটি স্থানীয় উপসর্গ উপস্থাপন
করেছিল: সোরা (চুলকানি), সিফিলিস (ভেনেরিয়াল রোগ) বা সাইকোসিস
(ডুমুর-ওয়ার্ট ডিজিজ)। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল সোরা, যা ত্বকের
যেকোনো চুলকানি রোগের সাথে সম্পর্কিত বলে বর্ণনা করা হয়েছিল এবং এটির
ভিত্তি বলে দাবি করা হয়েছিল। আরও অনেক রোগের অবস্থা। হ্যানিম্যান বিশ্বাস
করতেন যে এটি মৃগী, ক্যান্সার, জন্ডিস, বধিরতা, এবং ছানি এর মতো রোগের কারণ
হতে পারে। হ্যানিম্যানের সময় থেকে, অন্যান্য মায়াজম প্রস্তাব করা
হয়েছে, কিছু অসুস্থতা প্রতিস্থাপন করা হয়েছে যা পূর্বে সোরাকে দায়ী করা
হয়েছিল, যার মধ্যে যক্ষ্মা এবং ক্যান্সার মায়াসম রয়েছে।
কার্যকারিতাঃ
সদৃশ
ওষুধ কীভাবে আমাদের দেহে কাজ করে? এই প্রশ্নটা বহুদিনের। উত্তরের সঙ্গে
সদৃশ নীতির বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে। প্রথমে আমাদের জানা দরকার
জীবনী শক্তির কাজঃ
মানব
দেহে সংঘটিত সব কাজের ক্ষমতার উৎস হলো জীবনী শক্তি (ভাইটাল ফোর্স)। জৈবদেহ
জীবনী শক্তির ক্ষমতাবলে ভাইটাল ফোর্স প্রয়োগ করে নিদিষ্ট নিয়মকানুন বা
সূত্র অনুসারে সুস্থ, অসুস্থ ও আরোগ্যের সময় যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করে।
কীভাবে কাজ করে?
ডা.
স্যামুয়েল হ্যানিম্যান বলেছেন, হোমিওপ্যাথিক ওষুধ স্নায়ুর মাধ্যমে কাজ
করে। ওষুধ যাতে বেশিসংখ্যক স্নায়ুকে স্পর্শ করে ভালোভাবে কাজ করতে পারে, এ
জন্য ওষুধের একটা অনুবটিকাকে পানিতে দ্রবীভূত করে প্রয়োগ করতে হবে।
জিহ্বা, মুখ ও পাকস্থলির স্নায়ুগুলো সহজেই ওষুধের ক্রিয়া গ্রহণ করতে
পারে। নাকে ও শ্বাসযন্ত্র দিয়ে ঘ্রাণ এবং মুখ দিয়ে আঘ্রাণ নিলেই
সংশ্লিষ্ট আবরণীর ওপরের স্নায়ুও এ কাজে সাহায্য করতে পারে, বিশেষত একই
ওষুধ যদি মর্দনের সঙ্গে সঙ্গে অভ্যন্তরীণভাবেও প্রয়োগ করা হয়।
ওষুধের কাজঃ
ডা.
হ্যানিম্যান তার বিশ্বখ্যাত অর্গানন অব মেডিসিন পুস্তকে উল্লেখ করেছেন,
হোমিওপ্যাথিক ওষুধের কাজ দুই ধরনের (১) রোগ সৃষ্টি করা ও (২) রোগ আরোগ্য
করা।
তিনি তার নিজের ও ৫০ জন সহকর্মীর সুস্থ
দেহে প্রায় ১০০টি ওষুধ স্থূলমাত্রায় বার বার প্রয়োগ করে পরীক্ষণ করেন।
তখন এসব ওষুধের লক্ষণ তাদের ওপর প্রকাশ পায়। লক্ষণগুলো সংগ্রহ করে
হোমিওপ্যাথিক মেটিরিয়া মেডিকায় এবং রেপার্টারি গ্রন্থে লিখে রাখেন। যাতে
চিকিৎসার সময় এগুলো ব্যবহার করা যায়। রোগ সৃষ্টিকারী এসব পরীক্ষার সময়
ওষুধ সেবনের ফলে ওষুধ মুখ গহ্বরের স্নায়ুকে স্পর্শ করে এর অনুভূতিতে
মস্তিকে পৌঁছে দেয়। সেখান থেকে এর ক্রিয়ার অনুভূতি মন ও দেহে ওষুধগুলোর
নির্দিষ্ট ক্রিয়াক্ষেত্রে পৌঁছে যায় এবং শরীর ও মনে ওষুধের নিজ নিজ লক্ষণ
প্রকাশ করে। এ ক্ষেত্রে সুস্থদেহ জীবনী শক্তির ক্ষমতাবলে জীবনীবল প্রয়োগ
করে জীবনী সূত্র মোতাবেক এ কাজ সম্পন্ন করে। পরবর্তী সময়ে গবেষকরা তার
পরীক্ষণ করা অনেক ওষুধ দ্বিও-অদ্ধ পদ্ধতিতে পরীক্ষণ করে এর বৈজ্ঞানিক
ভিত্তির প্রমাণ পান।
রোগ আরোগ্য করাঃ
অপরদিকে
রোগী চিকিৎসার সময় হ্যানিম্যান রোগীর রোগ লক্ষণের সদৃশ লক্ষণ সম্পন্ন
ওষুধ সূক্ষ মাত্রায় প্রয়োগ করে রোগীকে আরোগ্যর পদ্ধতি আবিষ্কার করেন।
১৭৯০ সালে আবিষ্কৃত তার এ চিকিৎসা পদ্ধতির নাম হোমিওপ্যাথি । তিনি আরো
প্রমাণ করেন যেকোনো ওষুধ সুস্থ মানুষের ওপর যে রোগ লক্ষণ সৃষ্টি করে তা
সৃদশ লক্ষণের রোগীকে আরোগ্য করতে পারে। অর্থাৎ ওষুধের রোগ সৃষ্টিকারী
ক্ষমতার মাধ্যমেই এর রোগ আরোগ্যকারী ক্ষমতা নিহিত। একইভাবে অন্য এক
গবেষণায় ৪০ জন মাথা ঘোরা রোগীর ওপর গবেষক ক্লোজেন, বার্গম্যান ও বাটিলি এ
রোগীদের লক্ষণানুসারে ককুলাস, কোনিয়াম ও পেট্টোশিয়াম ওষুধ দিয়ে পরীক্ষা
করে সফল হন।
উপসংহারঃ
অতএব,
মহাত্মা হ্যানিম্যান ও তার পরবর্তী গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে
হোমিওপ্যাথি ওষুধ স্নায়ুর মাধ্যমে কাজ করে। এ ক্ষেত্রে জীবনীশক্তি জীবের
সব ক্ষমতার উৎস এটা উপলব্ধি করে হোমিওপ্যাথিকে চিকিৎসাক্ষেত্রে
পূর্ণাঙ্গভাবে যতই ব্যবহার করা যাবে জনস্বাস্থ্যের ততই উন্নতি হবে।
Related Topics Click Here::
- চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাস- History of Medicine [ প্রথম অধ্যায় ]
- Definition of Homeopathy- হোমিওপ্যাথির নীতিমালা কাকে বলে ? [দ্বিতীয় অধ্যায়]
- হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নীতিমালা।
- ঔষধ প্রস্তুতকরণ ও শক্তিকরণ। নবম অধ্যায়।
- ভেষজ পরীক্ষণ এবং মাত্রাতত্ত্ব- Drug Proving and Posology.
- রোগ সম্বন্ধে হোমিও মতবাদ।
- Short question of homeopathy principles.
- মায়াজম পরিচিতি।
- হোমিওপ্যাথিক ওষুধ প্রয়োগ পদ্ধতি।
- ঔষধের শক্তিকরণ- Drug Potentization.
- হোমিওপ্যাথির নিয়মনীতি।
- হোমিওপ্যাথির নিয়মনীতি_পরীক্ষার সাজেশন।