Conception of disease from the Homeopathic point of view_রোগ সম্বন্ধে হোমিও মতবাদ।

Conception of disease from the Homeopathic point of view_রোগ সম্বন্ধে হোমিও মতবাদ।

রোগ বলতে কি বুঝায় বা রোগ সম্পর্কে হোমিওপ্যাথিতে কিরূপ ধারনা পোষণ করা হয় ?

জীবনীশক্তির বিকৃত অবস্থাজনিত সৃষ্ট লক্ষণকেই রোগ বলা হয়। অদৃশ্য জীবনীশক্তি মানবদেহে অতি সুশৃঙ্খলভাবে অবস্থিত। জীবনীশক্তির এই গতি ভিতর হইতে বাহিরের দিকে। কোন ব্যক্তি পীড়িত হইলে আমাদের প্রথম বুঝিতে হইবে জীবনীশক্তির বিপর্যস্ত অবস্থা। রোগশক্তির বিরুদ্ধে সব সময় জীবনীশক্তি যুদ্ধ করিয়া আসিতেছে এবং রোগশক্তিকে প্রতিহত করিয়া জীবন ক্রিয়া স্বাভাবিক রাখিতেছে। যদি রোগশক্তিটি জীবনীশক্তি অপেক্ষা শক্তিশালী হয় তবে জীবনীশক্তির সুশৃংঙ্খল কর্মকান্ডে বিপর্যয় ঘটিলে সঙ্গে সঙ্গে বাহিরে জানাইয়া দেয়। 

প্রাকৃতিক রোগশক্তি সূক্ষ্ম ও অজড়। এই অজড় রোগশক্তির প্রভাবেই অজড় জীবনীশক্তি বিকৃতাবস্থা প্রাপ্ত হইয়া দেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে লক্ষণ সমষ্টির সাহায্যে বিশৃঙ্খল অবস্থা প্রকাশ করে। যাহার ফলে মানবের দেহ ও মনের বিকৃত অবস্থা প্রাপ্ত হয়। অনুভূতির বিকৃতি ঘটে ও বিশৃঙ্খল ক্রিয়াকলাপ দেখা দেয়। এই সকল বিকৃত অনুভূতি, বিশৃঙ্খল ক্রিয়াকলাপ অর্থাৎ জীবনীশক্তির বিকৃত  অবস্থাজনিত যে সকল লক্ষণ মানবদেহে প্রকাশিত হয় ঐ লক্ষণসমষ্টিকেই হোমিওপ্যাথি রোগ বলা হয়। রোগ সম্পর্কে হোমিওপ্যাথিতে যে ধারণা পোষণ করা হয় তাহা হইল এই যে প্রাকৃতিক রোগ শক্তি সূক্ষ ও অজড়।

রোগ সম্বন্ধে হোমিও মতবাদ


রোগ চিকিৎসায় লক্ষণসমষ্টির প্রয়োজনীয়তা কি?
রোগীর লক্ষণের সাদৃশ্য আছে এমন ঔষধ প্রয়োগ করে রোগীকে আরোগ্য করাই হোমিওপ্যাথি। রোগীর রোগ সর্ম্পকে জানতে হলে লক্ষণসমষ্টিকে পর্যবেক্ষণ করতে হয়। রোগী বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ নিয়ে চিকিৎসকের নিকট আসে, ওইসব লক্ষণ পর্যালোচনা করে যে রোগী-চিত্র আমরা পাই তার সাথে সাদৃশ্য আছে এমন ঔষধ প্রয়োগ করাই হলো হোমিওপ্যাথিক পদ্ধতি। স্বাভাবিক ভাবেই মনে হবে, তাহলে রোগী যে লক্ষণ নিয়ে আসে সেই লক্ষণ যোগ করে যে ঔষধ আসে সে ঔষধটি প্রয়োগ করলেই কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে -এখানে আবার লক্ষণের মূল্যায়নের কি প্রয়োজন? আর এই ধারণাটি নিয়েই আমাদের দেশের অনেক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকগণ চিকিৎসা করে যাচ্ছেন।

আমরা সচরাচর যে অবস্থাটি দেখতে পাই, একজন রোগী ১০ জন চিকিৎসকের নিকট গেলে ১০ ধরণের ঔষধ প্রেসক্রিপসন করি। আসলে কি রোগী ১০ ধরণের রোগী-চিত্র নিয়ে চিকিৎসকের নিকট এসেছিলেন! অবশ্যই তা নয়। আর ফলস্বরূপ অনেক রোগীকেই বলতে শোনা যায়, আমি অনেক জায়গায় হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক নিয়েছি কিন্তু সামান্য কিছু উপকার ছাড়া আর কিছু হয়নি, আরোগ্য তো দূরের কথা।
যাই হোক, অর্গাননের ১৫৪ সূত্রে মহাত্মা হ্যানিমান বলছেন,
“যোগ্যতম ঔষধের লক্ষণতালিকা হইতে যে প্রতিরূপ প্রস্তুত করা হয় তাহার মধ্যে যদি সেই সকল বিচিত্র, অসাধারণ, অনন্য এবং বিশিষ্ট (পরিচায়ক) লক্ষণসমূহ বিদ্যমান থাকে- যেগুলি অধিকতম সংখ্যায় ও অধিকতম সাদৃশ্যসহ যে রোগ চিকিৎসা করতে হইবে তাহার মধ্যে দেখা যায়, তাহা হইলে সেই ঔষধই হইবে সেই রোগে সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত আরোগ্যদায়ক হোমিওপ্যাথিক ঔষধ। রোগ যদি খুব বেশি পুরাতন না হয় তা হইলে সাধারণত প্রথম মাত্রাতেই বেশি গোলযোগ ব্যতীত তাহা দূরীভূত ও বিনষ্ট হইবে।”
Samuel Hahnemann
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় ঔষধ নির্বাচনে লক্ষণসমষ্টির গুণগত বৈশিষ্ট্যই হলো প্রধান, সংখ্যাগত ব্যাপারটি এখানে গৌণ। আরোগ্যদায়ক ঔষধ নির্বাচনে লক্ষণসমষ্টির ভিত্তিটি হচ্ছে সেই সকল লক্ষণ- যেগুলি বিচিত্র, অনন্য অসাধারণ হিসাবে ঔষধের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় এবং অন্যান্য ঔষধ থেকে পার্থক্য নির্ণয় করে। যেমন, হঠাৎ ঠাণ্ডা লেগে কারো জ্বর আসলে আমরা সাধারণভাবে প্রায় সকলের মাঝেই যে সকল লক্ষণ দেখি- অরুচি, মাথাব্যথা, গাজ্বালা, অস্থিরতা। এই লক্ষণগুলো দেখে আমরা কোনো ঔষধ নির্বাচন করতে পারি না – যতক্ষণ পর্যন্ত না জানা যায় ঠাণ্ডা পানির অদম্য পিপাসা, মৃত্যুভয়, প্রচণ্ড অস্থিরতা। মনে হয় এ যাত্রায় আর বাঁচবে না তখন অ্যাকোনাইট বা আর্সেনিকামের কথা স্মরণ করতে দেরি হয় না। এই লক্ষণগুলো বিচিত্র, অসাধারণ, অনন্য। যা পর্যবেক্ষণ করে আমরা নিশ্চিতভাবে উপযুক্ত ঔষধ নির্বাচন করতে পারি।

লক্ষণ কত প্রকার ও কি কি ?
  1. ব্যক্তিনিষ্ঠ লক্ষণঃ Subjective Symptoms- রোগের যে সকল লক্ষণ শুধুমাএ রোগী স্বয়ং অনুভব করিতে পারেন এবং রোগী না বলিলে চিকিৎসক বা অন্য কেহ তাহা বুঝিতে পারে না উহাদিগকে ব্যক্তিনিষ্ঠ লক্ষণ বলে। যেমন- পিপাসা, মাথাব্যথা, ক্ষুধা, ব্যথা বেদনা প্রভৃতি।
  2. বস্তুনিষ্ঠ লক্ষণঃ Objective Symptoms- রোগের যে সকল লক্ষণ রোগী নিজে না বলিলেও চিকিৎসক তাহার জ্ঞান ইন্দ্রিয়ের দ্বারা ও যান্ত্রিক পরীক্ষার দ্বারা, পার্শ্ববর্তী লোকজন প্রত্যক্ষ করেন  উহাদিগকে বস্তুনিষ্ঠ লক্ষণ বলে। যেমন- জ্বর, প্রলাপ, পক্ষাঘাত, কাশি প্রভৃতি।

রোগ কি? উহার শ্রেণীবিভাগ আলোচনা কর।
শরীরের প্রত্যেক অনু-পরমানুর উপর ক্ষমতা বিস্তারকারী ও সর্বদা ক্রিয়াশীল জীবনীশক্তি বা জৈব-প্রকৃতি কোন কারনে বিশৃঙ্খল হয়ে বা স্বাভাবিক নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটে যে অবস্থার অভিব্যক্তির সৃষ্টি হয় তাহাকে রোগবলে।

Class division of disease- রোগের শ্রেণী বিভাগ-- হ্যানিমান রোগকে দুইভাগে ভাগ করিয়াছেন-
  1. অচির রোগ- তরুন রোগ বা অস্থায়ী রোগ বা একিউট রোগ
  2. চির রোগ- প্রাচীন রোগ বা স্থায়ী রোগ বা ক্রণিক রোগ

অচির রোগবীজ কি?
যে সমস্ত রোগ হঠাৎ উপস্থিত হয়, দ্রুত জীবনীশক্তির পরিবর্তন সাধন করে এবং অল্প সময়ের মধ্যেই হয় রোগীর জীবন নাশ করে- না হয় সমূলে নিজেই (রোগ) দূরীভূত হয় তাকে অচির রোগ বলে।

  • এই সকল রোগের কোন স্থিতিশীলতা নেই।
  • এই রোগের ভোগকাল নির্দিষ্ট, এই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই রোগের বিকাশ ও পরিণতি ঘটে (নিরাময় অথবা মৃত্যু)।
  • ঔষধ ছাড়াও তরুন রোগ আরোগ্য হয়, তবে সময় কিছুটা বেশি লাগতে পারে।
  • তরুন রোগের ভোগকাল অল্পদিন অর্থাৎ ২/১ দিন হতে সর্বোচ্চ ২/১ মাস পর্যন্ত হতে পারে।
  • তরুন রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে অবশ্যই বর্তমান বিদ্যমান লক্ষণ ও তার কারণের আলোকে ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে এবং যে কারণে রোগটি হয়েছে তা থেকে বিরত থাকতে হবে।
প্রধানত: মানসিক ও শারীরিক অনিয়মের ফলে বা স্বাস্থ্যবিধি লংঘনের ফলে এই জাতীয় রোগ ব্যক্তিগতভাবে যে কোন মানুষকে আক্রমণ করতে পারে।

বিভিন্ন ধরণের অচিররোগের উদাহরণঃ
সর্দি, জ্বর, উদরাময়, কলেরা, হাম, বসন্ত, ম্যালেরিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা, গলক্ষত, বমি, এলার্জি, কাশি, কানে বেদনা, আধকপালে মাথাব্যথা, আঘাত, দংশন, বিষক্রিয়া, কেটে যাওয়া, থেতলে যাওয়া ইত্যাদি।

এছাড়া যে সকল ক্রণিক বা পুরাতন রোগ বৃদ্ধি পেয়ে প্রবল যন্ত্রণা সৃষ্টি করে সেই রোগেও নতুন বা তরুন রোগের মত চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। যেমন: পুরাতন আমাশয় প্রবল আকার ধারণ করলে, হাঁপানীর টান বৃদ্ধি পেলে।

আর যে সকল রোগ তরুণ রোগের মত দেখা দেয়; কিন্তু চিকিৎসা করলে সাময়িক উপশম হয়ে কিছুদিন পরে আবার ফিরে আসে সেই সকল রোগের চিকিৎসা ক্রণিক বা পুরাতন রোগের মত গ্রহণ করতে হবে।

অচির রোগবীজ তিন প্রকারঃ 
  1. ব্যক্তিগতঃ এই প্রকার তরুন রোগ মানুষের ব্যক্তিগত কর্মের জন্য আক্রমন করে। যেমন-সর্দি, উদরাময় প্রভৃতি।
  2. বিক্ষিপ্তঃ হঠাৎ কোন স্থানে দুই একজনের মধ্যে দেখা যায়, সুনির্দিষ্ট কোন নাম নাই।
  3. মহামারীঃ বাহ্যিক উত্তেজক করণ যেমন-যুদ্ধ, প্লাবন, দুর্ভিক্ষ প্রভৃতি প্রাকৃতিক বিপর্যের কারণে বহুলোক আক্রন্ত হয়। যেমনঃ বসন্ত, কলেরা, হাম ইত্যাদি।

চির রোগবীজ কি? 
যে সমস্ত রোগ দীর্ঘদিন অর্থাৎ মাসের পর মাস এমনকি বছরের পর বছর থাকে, তেমন যন্ত্রণাদায়ক নয়- কিন্তু সহজে সারে না, একবার সারলেও আবার দেখা দেয় সেগুলি চির রোগ।

যে সমস্ত রোগের শুরুটা প্রায়ই জানা যায় না, ধীরে ধীরে সামান্য শক্তিতে, অগোচরে আরম্ভ হয়ে বহুদিন ধরে জীবনীশক্তির বিকৃতি ঘটায় এবং দেহকে এরূপ অন্ত:সারশূণ্য করে ফেলে যে প্রকৃত ঔষধ ব্যতীত জীবনীশক্তির নিজস্ব প্রচেষ্টায় এর হাত থেকে পরিত্রাণ পায় না তাকে চিররোগ বলে।

  • চিররোগ ধীরে ধীরে জীবনীশক্তিকে নষ্ট করতে থাকে এবং ঔষধ ছাড়া কখনও নিরাময় হয় না।
  • চিররোগের কারণ অদৃশ্য, সহজে খুজে পাওয়া যায় না।
  • রোগের ভোগকালের কোন সময়সীমা নেই। রোগী আজীবন চিররোগে ভুগতে পারে। এই রোগ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়ে রোগীর মৃত্যু ঘটায়।
  • হ্যানিম্যানের মতে, এই সকল রোগ উৎপত্তির মূল কারণ সোরা, সিফিলিস, সাইকোসিস, টিউবারকুলেসিস নামক রোগবীজ বা মায়াজম।

বিভিন্ন ধরণের চিররোগের উদাহরণঃ
  1. সিফিলিস, বধিরতা, তোৎলামী, লিভারের সমস্যা, অস্থিক্ষত, গলক্ষত, মুখে ঘা, পাকস্থলীতে ঘা, হাঁপানী, হিপাটাইটিস, ল্যারিনজাইটিস, দ্রুত হৃদস্পন্দন, ওভারীর সমস্যা, ক্ষুধামান্দ্য, পুরাতন ডায়রিয়া, কার্বাঙ্কল, ক্যানসার, মৃগী, পক্ষাঘাত, খর্বাকৃতি, ধবল বা শ্বেতী।
  2. হিস্টিরিয়া, হাঁপানী, মূত্রনালীর সংকীর্ণতা, মূত্রপাথুরী, একশিরা, ফাইলেরিয়া, ডিপথেরিয়া, বসন্ত, যোনিকপাট বন্ধ, সন্ন্যাস, পেশী বাত, গেটে বাত, সায়েটিকা, টাইফয়েড, টিউমার, ছানি, বাধক, ক্রণিক আমাশয়, হার্পিস, ধ্বজভঙ্গ, স্মরণশক্তি হ্রাস, বাচালতা, বমিভাব, মাথাব্যথা, সর্দি ঝরা, নাক দিয়ে রক্ত পড়ে।
  3. ক্যান্সার, স্ট্রোক, হুপিং কাশি, মেদপ্রবণতা, বিভিন্ন ধরণের টিউমার, পুরাতন কাশি।
  4. সন্ন্যাস, কিডনী অকেজো, সোরাইসিস, অতি ক্ষুধা, ওজনহীনতা, কালা।
  5. শিশুদের কানের সংক্রমণ, ফ্লু, পিঠে ব্যথা, ঘাড় আড়ষ্টতা, হাত-পায়ে আড়ষ্টতা।
  6. হৃদপিন্ডের পীড়া, উচ্চ রক্তচাপ, বহুমূত্র, একজিমা, এলারজি, বমিভাব, মাথাব্যথা, পেশির আক্ষেপ।
চির রোগবীজ তিন প্রকারঃ
  1. প্রকৃতি চিররোগঃ যেমন- হাঁপানি।
  2. কৃত্রিম চিররোগঃঔষধজনিত চিররোগ-যেমন দীর্ঘদিন ডায়াবেটিসের ঔষধ খাওয়ার ফলে গ্যাংগ্রীন।
  3. মিথ্যা চিররোগঃ চিররোগের মত, কারণ দূর হলে রোগ বিনা চিকিৎসাই ভাল হয়ে যায় বা আরোগ্যের পথে বাধা দূর হয়ে যায়, যেমন-দীর্ঘদিন রাত্রি জাগরণের ফলে অনিদ্রা।


অসদৃশ ওষুধ দিয়ে চিকিৎসায় রোগী ক্রমশ কৃত্রিম চির রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে,এমনকি অসাধ্য রোগে।  
অসদৃশ ওষুধ দ্বারা ক্রণিক মায়াজম সৃষ্টি হয়ে কৃত্রিম চির রোগ হয় - হ্যানিম্যান।
ওষুধ দ্বারা জিন মিউটেশন হয়ে চির রোগ  হয় - জিনপ্রযুক্তিবিদগণ।

ডা: হ্যানিম্যানের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞান আবিস্কার পরবর্তী বিশেষ কৃতিত্ব হল মায়াজম তত্ত্বের উদ্ভাবন। তিনি মায়াজম তত্ত্বের সাহায্যে তরুন,পুরাতন ও বংশগত রোগের ব্যাখ্যা অধিকতর যুক্তিগ্রাহ্য করে তুলেন।তিনি বলেন,মায়াজমের প্রকৃতি হল সংক্রামক।তাই তরুন,পুরাতন ও বংশগত রোগ সংক্রমণের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়ে থাকে।

 তরুন রোগ অচির রোগবীজ দ্বারা। প্রাচীন রোগ সৃষ্টি হয়ে থাকে অসদৃশ ওষুধ (কৃত্রিম চির রোগ বীজ) ও চির রোগবীজ সোরা,সিফিলিস ও সাইকোসিস দ্বারা।বংশগত রোগ ক্রণিক মায়াজম সংক্রমিত হয়ে সৃষ্টি হয়ে থাকে।জিন বংশগতির বাহক।তাই, এই সংক্রমন জিন'র মাধ্যমেই হয়ে থাকে।বিরল প্রতিভার অধিকারী হ্যানিম্যান ওষুধ,রাসায়নিক ও ভৌত পদার্থকে  কৃত্রিম চিররোগের কারণরুপে চিহ্নিত করে চিকিৎসা জগতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছিলেন।

 হ্যানিম্যান ৭৪ সূত্রে কৃত্রিম চিররোগ, আর ৭৮সূত্রে প্রাকৃতিক চিররোগের কারণ উল্লেখ করেছেন।তিনি বলেছেন,অসদৃশ ওষুধ দিয়ে চিকিৎসায় রোগ চাপা পড়ে একিউট মায়াজম সৃষ্টি হয়ে তরুন রোগ হয় এবং ক্রণিক মায়াজম থেকে পুরাতন ও বংশগত রোগ হয়ে।

 অর্গাননের ৭৪ সূত্রে ওষুধ বা রাসায়নিক  বা ভৌত পদার্থ দ্বারা কৃত্রিম রোগ ও কৃত্রিম চিররোগ সৃষ্টি হয়,এ তত্ত্বের প্রবর্তক হ্যানিম্যান।তার প্রায় ১০০ বছর পর জিনপ্রযুক্তিবিদগণও গবেষোণায় প্রমাণ করেন,ওষুধ বা রাসায়নিক বা ভৌত পদার্থ দ্বারা জিন মিউটেশন হয়ে চির রোগ সৃষ্টি হয়। জিনপ্রযুক্তিবিদদের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ওষুধ বা রাসায়নিক বা ভৌত পদার্থ দ্বারা জিন মিউটেশন হয়ে চির রোগ হওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞানের মায়াজম তত্ত্বের সত্যতা প্রতিপাদন হল। 

অর্গাননের ৭৪ সূত্রে এলোপ্যাথি চিকিৎসায় ব্যবহৃত কতকগুলো ওষুধের নাম  উল্লেখ করে হ্যানিম্যান বলেন,এসব অসদৃশ ওষুধ আভ্যন্তরিক বা বাহ্যিক স্থুল মাত্রায় রোগীতে প্রয়োগের ফলে রোগী ক্রমশ ওষুধজ ব্যাধি, কৃত্রিম চির রোগে আক্রান্ত হয় পড়ে,এমনকি অসাধ্য রোগে।

জিনপ্রযুক্তিবিদদের বক্তব্য হল,ওষুধ দ্বারা জিন-এর স্ট্রাকচারাল ডিফেক্টস বা"জিন মিউটেশন" হয়ে চির রোগের সৃষ্টি হয়। এখন আমরা হ্যানিম্যান ও জিনপ্রযুক্তি - বিদদের  মতবাদকে নিম্নোক্ত রুপে সুত্রবদ্ধ করতে পারি। সূত্র-

১।ওষুধ >ক্রণিক মায়াজম > চির রোগ - হ্যানিম্যান।
২।ওষুধ > জিন মিউটেশন > চির রোগ - জিনপ্রযুক্তিবিদগণ।
                       
উপরোল্লেখিত দুটি সূত্র থেকে আমরা একটি সাধারণ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি,তা হল -হ্যানিম্যানের ক্রণিক মায়াজমই  জিনপ্রযুক্তিবিদদের জিন মিউটেশন।কারণ একই কারণ থেকে কার্য ও ফল একই হবে।
খোস- পাচড়া,সিফিলিস ও গণোরিয়া আক্রান্ত রোগীকে অসদৃশ ওষুধ,মলম, ইনজেকশন ইত্যাদি দ্বারা  চিকিৎসা করা হলে রোগগুলি চাপা পড়ে মায়াজম সৃষ্টি হয়।এই মায়াজম থেকে অচির ও চির রোগের উৎপত্তি হয়।

হ্যানিম্যান বলেন,দেহের কার্যগত বিশৃঙলার ফলে অচির রোগ,আর যান্ত্রিক পরিবর্তনের ফলে চির রোগ হয়।

জিনপ্রযুক্তিবিদগণ বলেন,জিনের কার্যগত বিশৃঙলার ফলে অচির রোগ,আর জিনের গঠনগত বৈকল্যের ফলে চির রোগ হয়।হ্যানিম্যান ও জিনপ্রযুক্তিবিদদের বক্তব্যের মধ্যে অনেক সাদৃশ্য রয়েছে।
জিনপ্রযুক্তিবিদগণ আরও বলেন,বেশীরভাগ ব্যাধিরই কমবেশী জিনগত কারণ রয়েছে। কোনটির কারণ হয়তো ভুলসজ্জা,অর্থাৎ এটিজিসি-এর পরম্পরা হওয়া দরকার এজিসিটি,কিন্তু আছে জিসিটিএ, যা হয়তো বিশেষ কোন ওষুধ দিয়ে কিংবা জিন থেরাপির  সাহায্যে সাড়িয়ে তোলা যাবে।আবার সিজোফ্রেনিয়ার মতো রোগের ক্ষেত্রে কতক জিনের পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়াই দায়ী।প্রতিটি জিন সম্পর্কে আলাদাভাবে যত তথ্য জানা যাবে,ততই সেগুলোকে সামাল দেয়ার ক্ষমতা মানুষের অর্জিত হবে।          

এখন ৭৪ সূত্র ওষুধজ ব্যাধি পরিবর্তীত হয়ে ওষুধ দ্বারা জিন'র কার্যগত বিশৃঙলার ফলে তরুন রোগ ও জিন  মিউটেশন'র ফলে চির রোগ সৃষ্টি হয়,এভাবে বিবেচনা করার দাবী রাখে।মায়াজমের স্থলে জিন'র কার্যগত বিশৃঙলায় তরুন রোগ ও জিন'র মিউটেশনের ফলে চির রোগ হয়,এটা বুঝতে হবে।

 অর্গাননের ৭২ সূত্রে হ্যানিম্যানোক্ত চির রোগ আক্রান্ত রোগীতে জীবনীশক্তি নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে।নিজে ধংস  হয়, দেহ ধংস না হওয়া পর্যন্ত।এর কারণ হল জীবনীশক্তি উৎপন্ন হয়ে থাকে বিপাক প্রক্রিয়ায়।যে জিনগুলো বিপাক প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ধাপ নিয়ন্ত্রন করে থাকে,কোন এক বা একাধিক ধাপ নিয়ন্ত্রনকারী জিন'র মিউটেশনজনিত ত্রুটির ফলে দেহের এরুপ অবস্থা হয়ে থাকে।

(চলবে) - ডা: প্রেমাননন্দ চক্রবর্ত্তী।


Related Topics Click Here::



Previous Post
Next Post

post written by:

DHMS (BHB), PDT and MBA

1 comment: